শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক :
দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানিতে সংসার চললেও বেশ সুখেই দিন কাটছিল লাল বাবু নামের এক রিকশা চালকের। তবে ১২ বছর আগে পূর্ণিমা রায় নামের এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আর সেই প্রেমের টানে পূর্ণিমাকে বিয়ে করে ঢাকায় এসে রিকশা চালিয়ে জীবন-যাপন শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত পূর্ণিমার পরকীয়ার বলি হতে হয়েছে লাল বাবুকে। সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের বসিলার ফিউচার টাউনে ঘটা এক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. নয়ন মিয়া।
তিনি বলেন, ‘গত ১৯ আগস্ট ফিউচার টাউনের কাশবন এলাকায় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২৫ তারিখ বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে পুলিশ। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্ধারকৃত ব্যক্তির নাম লাল বাবু এবং নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই হত্যা করা হয় তাকে।’
এস আই নয়ন আরো বলেন, ‘মামলার পর তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলের অদূরে একটি রিকশা পাওয়া যায়। সাধারণত রিকশার গায়ে নাম ও মোবাইল নম্বর লেখা থাকলেও ওই রিকশাতে ছিল না। তবে রিকশায় একটি নম্বর প্লেট ছিল। সেটির খোঁজ করতে গিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি ওই নম্বর প্লেটটি বিক্রি করেন। তবে রিকশার মালিক কিংবা গ্যারেজের নাম জানাতে পারেননি তিনি। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন গ্যারেজ খোঁজ করে নম্বর প্লেটটির ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়। আবদুল মালেক নামের এক গ্যারেজের মালিক ওই প্লেটটি কিনেছিলেন বলে জানতে পেরে তাকে মরদেহের ছবি দেখানো হয়।’
মরদেহের ছবি দেখার পর সেটির পোশাক দেখে মরদেহটি লাল বাবু নামে তার গ্যারেজের এক রিকশা চালকের বলে জানান মালেক। এরপর লাল বাবুর স্ত্রী পূর্ণিমা রায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন নয়ন মিয়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই তাকে সন্দেহজনক মনে হলেও ওইদিনের মতো তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে পূর্ণিমা রায় এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত। এরপরই পূর্ণিমা রায়কে চূড়ান্তভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখন তিনি হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
পূর্ণিমা রায় পুলিশকে জানান, অনেকদিন ধরেই তোতা মিয়ার সঙ্গে তার পরকীয়ায় সম্পর্ক চলছিল। এক পর্যায়ে বিষয়টি তার স্বামী লাল বাবু জেনে যান। এরপর থেকেই দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। লাল বাবু এজন্য তাকে মারধরও করতেন। হত্যার আগের দিন পূর্ণিমা লাল বাবুকে বলেন, যেহেতু তোতা মিয়াকে নিয়ে এত সমস্যা, চলো তার সঙ্গে কথা বলে সবকিছু ঠিক করে আসি। তখন পরের দিন ১৫ আগস্ট তোতা মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেন তারা।
ঘটনার দিন লাল বাবুর রিকশায় করেই ঘটনাস্থলে যান পূর্ণিমা। সেখানে যাওয়ার পর তোতা মিয়া ও তার দুই সহযোগী লাল বাবুর অণ্ডকোষ ও মুখ চেপে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এরপর গলায় গামছা প্যাঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন। পূর্ণিমা ২ সেপ্টেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় এ বিষয়টির জবানবন্দি দিয়েছেন।
পূর্ণিমা গ্রেফতারের দুইদিন পর সহযোগী তোতা মিয়াকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। এই সময়ের মধ্যেই তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ও আদালতে জবানবন্দি দেন।
Leave a Reply