শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন
এইচ.এম হেলাল ॥
বরিশাল নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বারের মতো কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নুরুল ইসলাম। তিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নগরের ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে যারা ধর্ণাঢ্য আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম নুরুল ইসলাম।
জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পাশাপাশি ঠিকাদারি ও বাড়ি ভাড়া বাবদ বছরে কোটি টাকার ওপরে আয় এ কাউন্সিলরের। তবে তিনি হলফনামায় যে তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমত হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন এই নগরে তার ৫ তলা বিশিষ্ট দুটি বাড়ি, একটি দ্বিতল বিশিষ্ট ও একটি ৯তলা ভবন নির্মাণাধীন। তিনটি ভবন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ বছরে আয় দেখিয়েছেন মাত্র দুই লাখ ৩১ হাজার ৯৮১ টাকা। এই হিসেবে প্রতি মাসের তিনটি ভবন থেকে বাসা ভাড়া বাবদ আসে মাত্র ১৯ হাজার ৩৩১ টাকা।
নগরীর কালুশাহ সড়ক এলাকার নিরিবিলি আবাসনে নুরুল ইসলামের ৫ তলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি রয়েছে।
জনগণের টাকায় শতকোটি টাকার মালিক থাকা সত্ত্বেও পূনরায় নির্বাচনে অংশ নিতে হলফ নামায় ‘গরীবানা’ তথ্য
ওই ভবনের প্রতি ফ্লোরে চার ইউনিট। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের প্রতি ইউনিটের ভাড়া ৯ হাজার টাকার ওপরে। সেই হিসেবে নুরুল ইসলামের একটি ভবন থেকে বছরে আয় ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অপর ৫ তলা ভবন থেকেও প্রতি বছর ২০ লাখ টাকার ওপরে ভাড়া আসে এ কাউন্সিলররের। নগরীতে নামে-বেনামে একাধিক স্টল রয়েছে তার। সব মিলিয়ে বছরে ৫০ লাখ টাকার ওপরে কেবল ভাড়া বাবদই ষ২ পাতায় ১ কলামে
আয় হয় কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল ইসলাম হাওলাদারের। এ ছাড়া ঠিকাদারি ও জমি কেনাবেচার ব্যবসা তো আছেই। অথচ হলফনামায় ‘গরীবি’ তথ্য দিয়েছেন এ কাউন্সিলর। শুধু নুরুল ইসলামই নয় অধিকাংশ ধর্ণাঢ্য কাউন্সিলররা বছরে যে আয় দেখিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি আয় হয় তাদের। ৮নং ওয়ার্ডে এবারো কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সেলিম হাওলাদার। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি তিনটি ভবনের মালিক।
এর মধ্যে একটি ৫ তলা ও দুটি চার তলা বিশিষ্ট। স-মিল আছে তিনটি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্টলের মালিক সেলিম। তিনি বাসা ভাড়া বাবদ বছরে আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৮৯ হাজার ২৫৯ টাকা। এ হিসেবে মাসে বাসা ভাড়া বাবদ আয় ৭ হাজার ৪৩৮ টাকা অথচ ভবনের একটি ইউনিট থেকেই তিনি এই পরিমাণ ভাড়া পান প্রতি মাসে। দফতরখানা এলাকায় চারতলা ভবনের নিচতলায় চারটি স্টল ও একটি বেসরকারি কোম্পানির অফিস। নিচতলা বাদে বাকি তিনটি ফ্লোরে ১৮ ইউনিটে মাসে ৯০ হাজার টাকার বেশি ভাড়া আসে। আর বছরে এ হিসেবে একটি ভবনেই আয় ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার তিনটি স-মিল থেকে মাসে ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় হয় এ কাউন্সিলর প্রার্থীর।
এ ছাড়া একটি চালের আড়ত্ থেকেও বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় করেন। অপর দুটি ভবন থেকেও প্রায় ১৫ লাখ টাকার বেশি বছরে ভাড়া পাচ্ছেন কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদার। সব মিলিয়ে বছরে এ কাউন্সিলরের আয় ৩৫ লাখ টাকার ওপরে অথচ তিনি একটি স্ব-মিল ও চালের আড়ৎ থেকে মাসে আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৯৬ হাজার ৩০০ টাকা। হলফনামায় সেলিম দেখিয়েছেন দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবন ও একটি চারতলা ভবন নির্মাণাধীন, দুটি স-মিল ও একটি চালের আড়ৎ। ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ এবারো নির্বাচনী মাঠে আছেন। চক বাজার এলাকার বড় ব্যবসায়ী হারুন বছরে ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
এ হিসেবে মাসে আয় মাত্র ৪ হাজার ১৬৬ টাকা। স্থানীয়রা জানান, কাউন্সিলর হারুন অর রশিদের চকবাজারে একটি শপিং মার্কেটের অংশিদারিত্ব রয়েছে। সেখান থেকে বছরে ২০ লাখ টাকার বেশি আয়। এ ছাড়া নগরীতে একাধিক স্টল রয়েছে নামে-বেনামে। বাড়ি ও স্টল ভাড়া বাবদ বছরে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার ৩০০ টাকা।
আর তিনি মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় হলফনামায় নিজের নামে জমা দেখিয়েছেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন এবারো নির্বাচন করছেন। মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ কাউন্সিলরের এক সময়ে বড় আয়ের উৎস ছিল সুদের ব্যবসা।
এখনো ব্যবসা অব্যাহত আছে। র্যাবের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া এ কাউন্সিলরের ইটেরভাটা, মাছের ঘের, আবাসিক হোটেলসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরে জয়নাল আবেদীনের আয় ২৮ লাখ টাকার ওপরে। হলফনামায় তিনি বছরে আয় দেখিয়েছন মাত্র ৫০ হাজার টাকা।
এ হিসেবে মাসে আয় দাঁড়ায় চার হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে একদিনে তার যে আয় তার চেয়েও মাসে কম আয় দেখিয়েছন কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন। এভাবে অর্ধশত সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের হলফনামায় আয়ের বিষয়টি গোপন করেছেন।
বাদ যায়নি সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। তারাও আয়ের সঠিক তথ্য দেননি। আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য মূলত তারা তাদের আয়ের সঠিক তথ্য দেননি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৪০ পদের বিপরীতে লড়ছেন ১২৯ প্রার্থী।
তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করা হয়। তবে আয়ের বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয় না বলে ওই সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। ওই প্রার্থীর মধ্যে ৩৯ জন হচ্ছে বর্তমান কাউন্সিলর। সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য সাংবাদিক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, এ ধরনের তথ্য আমি মনে করি হাস্যকর। তথ্য গোপনের প্রবণতা থেকে প্রার্থীরা বের হয়ে আসতে পারেনি।
এটা ভালো লক্ষণ নয়। তথ্য গোপনের প্রবণতা থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। প্রত্যেক প্রার্থীর তথ্য যেন খতিয়ে দেখা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন সনাকের এ সদস্য।
Leave a Reply