রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন
প্রিন্স তালুকদার: শনিবার দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর আলহাজ্ব হজরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, শায়েখে চরমোনাইর হাতে ফুল দিয়ে দুই শতাধিক তরুন ও যুবক ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। এদের অধিকাংশ তরুনরাই বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের বরিশাল সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে দুই শতাধিক তরুন ও যুবক ইসলামী আন্দোলনের আদর্শের প্রতি আসক্ত হয়ে যোগ দেন এবং আগামীতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে মাঠে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। যোগদানকৃত নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে আলহাজ্ব হজরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, শায়েখে চরমোনাই বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যুগে যুগে সত্য দীনসহ অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।
নবী রাসূলগন হক-বাতিল, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, সফলতা-ব্যর্থতার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিধানপূর্বক শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির সঠিক পন্থা নির্ধারণ করে গেছেন। তাঁরা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানবজীবনকে সুন্দর, সফল, স্বার্থক ও শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ এরপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে উম্মতে মুহাম্মদী অর্থাৎ গোটা মুসলিম জাতির ওপর। এ দায়িত্ব মুসলমানরা যে যুগে যতটুকু পালন করেছেন সে যুগে ততটুকু শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তি পেয়েছেন।
আল্লাহর প্রদত্ত ইসলামের সুমহান আদর্শে বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯০ জন লোক বিশ্বাসী। ইসলামের প্রতি এদেশের মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও দরদ অত্যন্ত গভীর। জনগণ চায় ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হোক। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী, কায়েমী স্বার্থবাদী মহল, আধিপত্যবাদের এজেন্টদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র ইসলামী আদর্শ কার্যক্রমের পথে অন্তরায হয়ে রয়েছে। শাসকগোষ্ঠী জনগণকে বার বার ধোকা দিয়েছে ক্ষমতায় থাকার জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করে। অন্যদিকে ইসলামের উত্থানকে ঠেকানোর জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ফলে দেশে বিরাজ করছে অগণিত সমস্যা।
এ সমস্যার কথা অনেকেই স্বীকার করেন এবং তা সমাধানে বার বার আন্দোলনও হয়েছে, কিন্তু সমস্যা রয়েই গেছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সর্বাগ্রে মূল কারণ চিহ্নিত করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, যতক্ষণ পর্যন্ত নৈতিক আদর্শ বিবর্জিত সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন ও দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য, খোদাভীরু লোকের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের কোন সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ সত্য উপলব্ধির প্রেক্ষিতে দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ওলামায়ে কিরাম, পীর-মাশায়েখ ও দীনদার বুদ্ধিজীবীগণের নেতৃত্বে ১৯৮৭ সালের ১৩ই মার্চ জালেম শাসকগোষ্ঠী ও শোষণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ কল্যাণরাষ্ট্রে পরিনত করার লক্ষ্যে ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
যা গত ২০ নভেম্বর’২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামে নিবন্ধন লাভ করে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’ এর নিবন্ধন নং-০৩৪। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রচলিত কোন রাজনৈতিক দল নয়। দলাদলী ইসলাম সমর্থন করে না, কারন দলীয় রাজনীতি সংকীর্নতা, কোন্দল ও হানাহানি সৃষ্টির নামান্তর। দলীয় রাজনীতি মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্যকে বিনষ্ট করে উম্মাহকে শতধাবিভক্ত করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বস্তুতঃ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে একটি সর্বজনীন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন।
স্বাধীনতা আন্দোলন কিংবা ভাষা আন্দোলন যেমন কোন দলীয় আন্দোলন ছিল না, যা ছিল দু’টি ইস্যুকে সামনে রেখে দলমত নির্বিশেষে একটি সর্বজনীন আন্দোলন। অনুরূপ নিছক নেতা বা সরকার পরিবর্তন নয়, দেশে প্রচলিত মানবরচিত সকল অনৈসলামী নীতি এবং জাহেলী সমাজের সার্বিক পরিবর্তন সাধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামী আন্দোলনের চুড়ান্ত লক্ষ্য। এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ৫২’র ভাষা আন্দোলন বা ’৭১ এর স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে ইসলামী আন্দোলনের কোনরূপ তুলনা করা হয়নি। কারণ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে অন্য কোন আন্দোলনের তুলনা করা আদৌ যুক্তিসঙ্গত নয়।
এটা শুধুমাত্র আন্দোলনের ধরন বুঝাবার জন্য উদাহরন হিসেবে বলা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের মূল ইস্যু হচ্ছে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা। তাই, যতদিন বাংলার জমিনে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল জেলার এয়ারপোর্ট থানা সভাপতি শামছুল আলম মিলন, সাধারন সম্পাদক হাসানুজ্জামান, কাশীপুর ইউনিয়ন সভাপতি আরিফুর রহমান পলাশ সিকদার, সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব কাজী মাঈনুদ্দিন, যুব আন্দোলনের সভাপতি রিয়াজ হাজারী, সাধারন সম্পাদক সুজন তালুকদার, বিল্ববাড়ী ওয়ার্ডের মাসুদ তালুকদার, রশিদ বাবুল, অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য বাদল হাওলাদারসহ অনান্য নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply