রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
শাকিব বিপ্লব:বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে প্রভাবশালী জনৈক এক নেতা কৌশলী পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নানান প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয়েছেন। তার এই আকাঙ্খা রাজনীতির অন্দরমহলে প্রকাশ পেলেও দৃশ্যমান প্রক্রিয়ায় বিষয়টি জানান দিতে নারাজ। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নিজ উদ্যোগে নানা সহায়তার প্রতিশ্রুতিসহ এক কাতারে নিয়ে আসার একটি প্রক্রিয়া দলের ভেতর অনুমেয়। সেখানে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার এই পরিকল্পনা কম-বেশি আলোচনা থেকে গুঞ্জনে আচ করা গেছে। জেলা আ.লীগের কর্নধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বিকল্প হিসেবে নিজেকে সেই স্থানে অধিষ্ঠিত করার গোপন এই লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
কিন্তু শীর্ষ এই নেতার আনুগত্য প্রকাশে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অতিউৎসাহী ভূমিকা রেখে তার চারপাশে থাকার বিষয়টি থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ইতিমধ্যে অন্তত তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়ে একাট্টা হয়ে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ওই নেতার আগামীর আকাঙ্খা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত দলীয় প্রার্থীরাই এই পরিকল্পনা প্রথম আলামত আচ করতে পেরে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অবহিত করার উদ্যোগ নিলেও কাছে ভিড়তে অথবা সে ধরণের পরিবেশ পাচ্ছে না।
দলের ভেতরকার একাধিক নেতা এই তথ্যের সাথে একমত প্রকাশ করলেও নাম প্রকাশে সামনে আসতে আগ্রহী নয়। দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বিকল্প হিসেবে আগামীতে জেলা আ.লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছায় ওই প্রভাবশালী নেতা ইতিপূর্বেও একদফা উদ্যোগ নিয়েও বেশিদূর এগুতে পারেনি। প্রয়াত আ.লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরন সিটি মেয়র থাকাবস্থায় তিনি নগর রাজনীতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ায় এই নেতা তৎসময় সংগঠনের জেলার নেতৃত্বে আসার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলো।
শওকত হোসেন হিরনের সাথে আবুল হাসানাত অব্দুল্লাহর মনোস্তাত্ত্বিক লড়াই শুরু হলে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অগ্রসর হয়েছিল। তৎসময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কৌশলগত করণে নগর পলিটিক্স থেকে নিজেকে দূরত্বে রাখায় তার প্রতিনিধি হিসেবে আলোচিত এই নেতা হিরনের সাথে লড়াইয়ের বদলে প্রকারান্তে ঐক্য বেধেছিলেন।
উভয়ের উদ্দেশ্য ছিলো কৌশলে দলীয় সভানেত্রীর শেখ হাসিনার কানে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নামে জেলা রাজনীতি নিয়ে নানা অভিযোগ তুলে সংগঠনের মধ্যে নিস্কৃয় করে রাখা। এই মিশনে অনেকটা সফলও হয়েছিল বলে অভিমত পাওয়া যায়। সেই সময় নিজেকে স্বজন এবং স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে উপস্থাপন করে আচমকা জাতীয় সংসদে জায়গাও করে নিয়েছিলেন।
কিন্তু একই এলাকার অপর নেতা বলরাম পোদ্দার প্রয়াত নেতা হিরনের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে ওঠায় ওই নেতা মানতে না পারায় বিরোধ তুঙ্গে উঠলে ভেঙে যায় সেই সময়কার পরিকল্পনা। আবার কারো কারো দাবি আকস্মিক হিরনের মৃত্যু এবং রাজনীতিতে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র সাদিক অব্দুল্লাহর উত্থানে ওই নেতার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
“ধরি মাছ না ছুই পানি” কৌশলী ভূমিকায় নিজের আকাঙ্খার বিষয়টি আড়াল করতে সক্ষম হয়, নির্ঞ্ঝাট নেতা হিসেবে মহল বিশেষে পরিচিতি থাকায়।
অপর একটি সূত্রের দাবী, সাবেক ছাত্র নেতা বলরাম পোদ্দার কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যাওয়ার পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সাথে দূরত্ব সৃষ্টিতে এই নেতার ভূমিকাই মূখ্য বলে শোনা যায়। এখনো উভয় নেতার মাঝে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার পিছনে আরও একটি উদ্দেশ্য নিহীত রয়েছে। আগামীতে বলরাম পোদ্দার গৌরনদী-আগৈলঝাড়া আসনে মনোনয়ন চাইতে পারে অথবা কাকতালিয়ভাবে নেত্রী দিতে পারেন এমন ধারণা দিয়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ভুলভাল বুঝিয়ে দূরে রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি হিরণ আমলে বলরামের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে নিজের সেই সময়কার ভূমিকা আড়াল করে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু সূত্রের দাবী বলরাম পোদ্দার নয়, খোদ ওই নেতারই আগামীর পরিকল্পনা রয়েছে উল্লেখিত আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়া। সে ক্ষেত্রে আবুল হাসানত অব্দুল্লাহ বয়সজনিত কারণে দুর্বলতা আমলে এনে এখনই নিজস্ব প্লাটফর্ম শক্তপোক্ত করতে চায়। বিশেষ করে গত সংসদ নির্বাচনে নিজের অবস্থানে ছন্দপতন ঘটলে এই নেতার টার্গেট হয়ে ওঠে গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার প্রতিনিধিত্ব হাতে নেয়ার পাশাপাশি জেলার রাজনীতিতে নিজেকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা।
এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্তে বেশ ভূমিকা রেখে নেতা হাসানাতকে প্রকাশ্যে বাহবা দিলেও নিজের অবদান রয়েছে বলে প্রার্থিদের মাঝে নিজের আনুগত্য প্রতিষ্ঠার ভিত তৈরী করেছে। দিচ্ছে নির্বাচনী বৈতরণী পার পাওয়ার নানান সহায়তা। আবার মনোনয়ন বঞ্চিতদের বোঝানো হচ্ছে এর পিছনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ভূমিকা রয়েছে। একদিকে জেলার নিয়ন্ত্রক অন্যদিকে মনোনয়ন পার্লামেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অবস্থান থাকায় এ কথা মনোনয়ন বঞ্চিতরাও বিশ্বাসে আনতে বাধ্য হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অনুগতদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। ফলে অনেকে ঝুকছে এই নেতার দিকে রাজনীতিতে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে। ইতিমধ্যে তিনজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সমতাল ভূমিকা রেখে নির্বাচনে সহয়তা নেয়ার বিপরীতে জেলার রাজনীতিতে আগামী নেতা হিসেবে তাকেও রঙিন স্বপ্নের মাঝে ডুবিয়ে রাখছেন। এদের মধ্যে নিজ এলাকার একজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এই নেতার স্বপক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখে সব কর্মপরিকল্পনার ছক একে দিচ্ছেন বলে শোনা গেছে। অপর একটি সূত্রের ভাষ্যÑ অনুগত্য দেখালেও মূলত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পরিবারের শক্তি সামর্থে ভিত হয়ে তারা ধীরালয়ে এগোতে চাচ্ছে।
কিন্তু এ পরিকল্পনা নিয়ে কম বেশি দলের মধ্যে কানাঘুষা চললেও কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না ঝুট-ঝামেলার ভয়ে। অনেকের ধারণা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এই নেতাকেই বেশি বিশ্বস্থ ও ঘনিষ্ট ভাবায় তার বিরোদ্ধে তথ্য উপাত্ত দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাছাড়া এই নেতার অনুসারীরাই এখন আবুল হাসানাত আব্দুল্লার চারপাশে অবস্থান থাকায় সাংগঠনিক অনেক খবরা খবর তার কানে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মূলত তাকে ঘিরে রাখা হয়েছে। কিন্তু কথা কি আর গোপন থাকে, কম-বেশি গুঞ্জন থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সংগঠনের বাইরে শোনা যাচ্ছে।
Leave a Reply