রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ॥ ডাক্তার মানে সেতো মানুষ নয়, আমাদের চোখে সেতো ভগবান, কশাই আর ডাক্তার একই নয়- কিন্তু দুটোই আজ প্রোফেশন, কশাই জবাই করে প্রকাশ্য দিবালোকে, তোমার আছে- ক্লিনিক আর চেম্বার। পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পি নচিকেতার তুমুল আলোচিত এই গানটির কথাগুলোর সাথে বরিশালের বাস্তবতা হার-হামেশাই যেন মিলে যাচ্ছে। এখানে শুধু ডাক্তারের হাতে নয়, রোগীরা জবাই হচ্ছেন কয়েকটি স্তরে। সেবার ন্যূনতম বালাই না থাকলেও রোগীদের গুনতে হচ্ছে কাড়ি-কাড়ি অর্থ।
বিশেষ করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর চৌর্যবৃত্তির কারণে সর্বস্ব হারিয়েও মিলছে না সেবা। ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী টানতে ভাড়ায় খাটানো হচ্ছে দালাল। বিশেষ করে এই দালাল চক্র অবস্থান নিয়ে থাকে শহরের প্রবেশদ্বার রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড, নথুল্লাবাদ ও লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায়। তাদের টার্গেট থাকে গ্রাম-গঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সহজ-সরল মানুষকে নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে নির্ধারিত বা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকে নিয়ে যাওয়া। এবং সেখানকার কথিত ডাক্তারকে দেখিয়ে কয়েক হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদন করা। এই টার্গেট ফিলাপ করা গেলেই শতকরা ৩০ শতাংশ টাকা পেয়ে যায় একজন দালাল। যে কারনে ডায়াগনস্টিকের দালাল চক্র অনেকাশেং হয়ে ওঠে বেপরোয়া। রোগী টানতে গিয়ে ঘটনাচক্রে দালালদের মাঝে হাতাহাতি থেকে মারামারির ঘটনাও ঘটছে। উদাহরণস্বরুপ- শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যারাতে কেয়া নামে এক নারী সদররোডস্থ ল্যাবএইড ডায়ানগস্টিকে ডাক্তার দেখাতে আসলে তাকে এক দালাল প্রলোভন দেখিয়ে একজন নাম সর্বস্ব হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাসানুজ্জামানের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার ফি বাবদ ৭ শত টাকা দাবি করলে ওই নারী ৬শ টাকা দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে সেই দালাল নারীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে নিযে যান নগরীর আগরপুর রোডের দি-মুন মেডিকেল সার্ভিসেস নামক ডায়াগনস্টিকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে নারীর কাছ থেকে ২৪শ টাকা রেখে রিপোর্ট দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয় হয় জর্ডন রোডের একটি ভবনের পরিত্যাক্ত কক্ষে। সেখানে ওই নারীকে রেখে পালিয়ে যায় দালাল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কোন ডাক্তার না আসার কারনে ওই নারী কান্নাকাটি শুরু করেন। এমন অবস্থায় নারীর কান্নাকাটিতে স্থানীয়রা জড়ো হওয়ার খবর পাওয়া মাত্র সেই ডাক্তার দুই জনকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের নাগালে পাওয়া মাত্রই একচোট পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
ফলে বলার আর অপেক্ষা থাকে না যে বরিশালের ডায়াগনস্টিক সেক্টরের বর্তমান অবস্থা কী? এমন বাস্তবতায় খোঁজ-খবর নিয়ে ডায়াগনস্টিক সংক্রান্ত যেসব তথ্য-উপাত্ত্ব পাওয়া গেছে তা শুনে হয়তো অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। অন্তত ২০টিরও বেশি ডায়াগনস্টিক রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণরুপে দালালনির্ভর। দীর্ঘ এই তালিকায় উঠে উসেছে- নগরীর প্যারারা রোডের জনসেবা, আগরপুর রোডের দি-মুন মেডিকেল সার্ভিসেস, ফজলুল হক এভিনিউ রোডের উদয়ন স্কুলের দ্বিতীয় তলায় সিটি, দক্ষিণাঞ্চল গলির সেবা, জর্ডন রোডের সেন্ট্রাল ও সাউথ এ্যাপেক্স, বিবির পুকুরের পূর্ব পাড়ের মধুমতি ডায়াগনস্টিকের নাম। এছাড়াও একইভাবে শহরের অলি-গলিতেও পরিচালিত হচ্ছে নামসর্বস্ব অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই ডায়াগনস্টিকগুলোর পরীক্ষা নিরীক্ষার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- নিম্নমানের এই ডায়াগনস্টিকগুলোতে অন্তত অর্ধশত দালাল নিয়োজিত রয়েছে। তাদের মধ্যে আব্দুর রশিদ, শাহীন বা স্বপন সকরের কাছে দালাল হিসেবে পরিচিত মুখ। এছাড়াও রয়েছেন, সহিদ, রিপন, রুহুল, নাসির, টেন্ডার আনিস, আনোয়ার, কালা মানিক, পাগলা মানিক, বাচ্চু, কামাল লিটন, মনির, মিজান, সুমন, মাসুম, জাহাঙ্গীর, বাবু, সাদ্দাম, বসন্ত, শাহ আলম, লিয়াকত ও সোহরাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিগত সময়ে তাদের গ্রেপ্তার পরবর্তী কারাগারে প্রেরণ করলেও জামিনে মুক্তির পর ফের দালালিতেই নিয়োজিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে- তাদের মধ্যে দালাল ঝাড়–দার শাহীন এখন আগরপুর রোডস্থ হোটেল ম্যালোডির কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে সেখানে খুরে বসেছেন দি-মুন মেডিকেল সার্ভিসেস নামক ডায়াগনস্টিক। মূলত সেখানে বসেই ডায়াগনস্টিক সেক্টরের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চিকিৎসক হত্যাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন কিংবা স্বাস্থ বিভাগের নজরদারি না থাকার কারনে ডায়াগনস্টিক সেক্টরটি দালাল নির্ভর হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছে সুশীল সমাজ।
অবশ্য বরিশাল সিভিল সার্জন ডাক্তার মনোয়ার হোসেনও বললেন, প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনায় মাঠে নামবে সিভিল সার্জন।
মাঠে নামার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমানও বলছেন- বিষয়টি নিয়ে ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাথে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশগত কারনে খুব শীঘ্রই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে নামবে।’’
রোগীর দালাল নিয়ে বরিশাল ক্রাইম নিউজ পত্রিকায় থাকবে আরও অনেক সংবাদ। দেখতে চোখ রাখুন বরিশাল ক্রাইম নিউজ পত্রিকায়।
Leave a Reply