শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৃণমূলের নেতাদের কাউকে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, অথবা টিউবওয়েল দেওয়ার প্রলোভন কিংবা কাউকে আটকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক রেজ্যুলেশন খাতায় স্বাক্ষর আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন স্বপনের বিরুদ্ধে। নিজের পক্ষে দলের হাইকমান্ড এবং তৃণমূলের সমর্থন আদায়ের জন্য তিনি নিয়েছেন অভিনব এসব কৌশল। ইতোমধ্যে তিনি আগরপুর, দেহেরগতি ও রহমতপুর ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে সভাপতি ও সম্পাদককে জিম্মি করে স্বাক্ষর আদায় করেছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি জরুরি সভা ডেকে কেদারপুর ইউনিয়নে একই কাজ করার চেষ্টা করলেও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান আকন্দের বিরোধিতার কারণে তা ব্যর্থ হয়। এসব অভিযোগ ভুক্তভোগী নেতাদের।
ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হোসেন স্বপন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার বিশ্বস্ত হাতে গোনা ২০/২৫ জন ক্যাডার নিয়ে লুটপাটে মেতে ওঠেন। প্রকৃত এবং ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তিনি তার অনুসারী কিছু নব্য আওয়ামী লীগ নামধারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেন। তাদের দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করার পরিকল্পনা নিয়ে গত ৫ বছরে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন প্রকল্প, টিউবওয়েল, ভিজিডি, ভিজিএফ, জেলে কার্ডসহ সব ধরনের সরকারি সুবিধা তাদেরকেই প্রদান করেন। এছাড়াও নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে ২০ পার্সেন্ট টাকা আদায় এবং সেগুলো বাস্তবায়ন না করেই বিল উত্তোলনের মাধ্যমে বিগত ৫ বছরে সরকারি প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলাও হয়। প্রকৃত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে এতে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তার ক্যাডার নির্ভর রাজনীতি কায়েম ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে শেষের দিকে তিনি একেবারেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগে তার দলীয় মনোনয়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে তিনি তৃণমূলে নিজের জনসমর্থন দেখাতে ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের সভাপতি ও সম্পাদকদের ডেকে জরুরি বৈঠকের নামে তাদের ধরে রেজ্যুলেশন খাতায় জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের মিশনে নামেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, যুগ্ম সম্পাদক মো. দোলোয়ার হোসেন, কেদারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান আকন্দ, দেহেরগতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্পাদক কাজী জসিম উদ্দিন শুভ, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউসুফ খান, মাধবপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদিন হাওলাদারসহ প্রায় এক ডজন নেতা।
এ প্রসঙ্গে বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, বিগত ৫ বছর দুর্নীতি এবং লুটপাটের কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন স্বপন এবার দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে এসব কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন। রেজ্যুলেশন খাতা এবং সাদা কাগজে তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বাহানায় কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে তা নিজের জনসমর্থন প্রমাণে ব্যবহার করতে চাইছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান খালেদ হোসেন স্বপন নিজেকে তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতা দাবি করে বলেন, কাউকে জোর করা কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই আসে না। যারা চায় আমি আবারও চেয়ারম্যান হই তারা স্বেচ্ছায় আমাকে সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের কাছে আবেদন করছেন।
Leave a Reply