শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন
খোকন আহম্মেদ হীরা॥ মাত্র ক’দিন আগেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে বিএনপিকে পরাজিত করে মেয়র পদে বিজয় ছিনিয়ে এনে সাংগঠনিক শক্তি দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সিটি নির্বাচনের পর এখন জাতীয় নির্বাচনে মনোযোগ দিয়েছে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। ফলে একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ছয় নির্বাচনী এলাকাতেই প্রবীণ প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নবীন প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তবে অধিকাংশ আসনেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থিতায় বেকায়দায় রয়েছে দল দুটি। বড় দলগুলোর মনোনয়ন কারা পেতে পারেন, কার সম্ভাবনা বেশি এ নিয়ে সংসদীয় এলাকার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পাড়া ও মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যে চলছে নিখুঁত বিশ্লেষণ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ
না করায় বরিশালের ছয়টি আসনের মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ, মহাজোট সমর্থিত জাতীয় পার্টির প্রার্থী একটিতে এবং ওয়াকার্স পার্টির প্রার্থী একটি আসনে জয় পেয়েছেন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ছয়টি আসনই দখল নিতে মরিয়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি হারানো আসন উদ্ধারের জন্য নানাকৌশলে মাঠে নেমেছে বিএনপি। নিজেদের আসনের পাশাপাশি নতুন করে আরও আসন দখলের জন্য নির্বাচনী মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অপরদিকে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত বরিশাল-৩ আসনে নিজ দলের প্রার্থী নির্বাচিত হতে না পারায় এবার এ আসন থেকে যোগ্যপ্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য দলের সভাপতির কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি সরকারের নিজ অর্থায়নের স্বপ্নের পদ্মাসেতু, কঠোর হস্তে জঙ্গী দমন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিদ্যুত, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা ও নারী উন্নয়নের সফলতার পাশাপাশি সমুদ্র বিজয়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াসহ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সাফল্য ভোটারদের কাছে তুলে ধরে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগে নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও পবিত্র ঈদ-উল-আজহা ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা নির্বাচনী এলাকা। অন্যদিকে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি হারানো মসনদ ফিরে পেতে সরকারের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি ও দলের প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে মাঠে নেমেছে। সব মিলিয়ে এখন বরিশাল মহানগরীসহ জেলার দশ উপজেলা নিয়ে ছয়টি সংসদীয় আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নবনির্বাচিত মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নিজস্ব কৌশলে নগরীতে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন করা হলেও সংসদীয় এলাকাগুলোতে উভয়দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর পর দুইবার ক্ষমতায় থেকেও দলের হাইব্রিড নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগের নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করার ফলেই কোন্দল দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে না থেকেও এখন বসন্তের কোকিলের ন্যায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহৎ একটি দল। তাই দলে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে জনসমর্থন, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিচারে এবার কেন্দ্র থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) এ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
বরিশাল ১, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ॥ গুঞ্জন উঠেছিল এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহ। নির্বাচনী এলাকায় দলের প্রতিটি কর্মসূচীতে আন্তরিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ, দলের দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের প্রাণের স্পন্দন আশিক আব্দুল্লাহর এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা ছিল বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ অন্যকোন আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এ আসনটি সেরনিয়াবাত আশিক আব্দুল্লাহকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী তরুণ নেতৃত্বের জয়জয়কার শুরু হলেও এখনই আশিক আব্দুল্লাহকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামাতে চান না বর্তমান সাংসদ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তাই তিনি (হাসানাত) দল ও দেশের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় আশিক আব্দুল্লাহকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তিনি শুধু নিজ নির্বাচনী এলাকায় নয়, বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে রয়েছে তার বিশেষ অবদান। এছাড়াও দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। এখানে আওয়ামী লীগের অন্যকোন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে না থাকায় এবং নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের কারণে যেকোন সময়ের তুলনায় এখানে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ আব্দুস সোবাহান, এ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম স্বজল, আকন কুদ্দুসুর রহমান, সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ড. এম. শাহ আলম এবং ওয়ান ইলেভেনের পরীক্ষিত নেতা আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এসএম মনির-উজ জামান মনির।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭৬ হাজার ভোট পেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান। তখন থেকে অদ্যাবধি নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের নিয়ে কাজ করছেন গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান। অন্যকোন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ে তেমন কোন আনাগোনা নেই। বিএনপির অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্দুস সোবাহান একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়া এবং জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এখানে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এককভাবে নির্বাচন করলে প্রার্থী হবেন এ্যাডভোকেট সেরনিয়াবাত সেকান্দার আলী। দীর্ঘদিন থেকে তিনি (সেকান্দার) নির্বাচনী এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙা করতে একাধিক বৈঠক, গণসংযোগ ও সাধারণ ভোটারদের অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। জাকের পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারনা চালাচ্ছেন দলের সংযুক্ত আরব আমিরাত শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাদশা মুন্সী। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হবেন মেহেদী হাসান রাসেল।
বরিশাল-২, উজিরপুর, বানারীপাড়া আসন ॥ এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস। নিজের মেধা ও যোগ্যতায় বরিশালের সর্বত্র একজন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর দিক নির্দেশনায় তার (তালুকদার মোঃ ইউনুস) সাংগঠনিক দক্ষতায় জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তি।
তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা দুইবারের সংসদ সদস্য তালুকদার মোঃ ইউনুস একজন সফল আইনজীবী (বরিশাল বারের সাবেক সভাপতি) হিসেবে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াতের হামলা ও মামলার শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক আইনী সহায়তা দিয়ে তৎকালীন সময়ে একমাত্র কা-ারি হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও বরিশাল-২ আসনের সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে তালুকদার মোঃ ইউনুস বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ছাড়াও দলের মনোনয়ন পেতে সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহে আলম ও শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজুর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল ও জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ইলিয়াস খান। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন মাওলানা নেছার উদ্দিন। ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি (এনপিপি)’র প্রার্থী হবেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাহেব আলী হওলাদার রনি এবং জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন এ্যাডভোকেট আনিসুজ্জামান আনিস ও আবুল কালাম আজাদ বাদল। এখানে দলীয় মনোনয়ন ঠিকঠাক থাকলে আওয়ামী লীগের জয় লাভের সম্ভাবনা বেশি।
বরিশাল-৩, বাবুগঞ্জ, মুলাদী আসন ॥ এ আসনের বর্তমান এমপি হচ্ছেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতান। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় বীর সৈনিক বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্মভূমি এ আসনকে এবারই সর্বপ্রথম আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে দীর্ঘদিন থেকে বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা- হ্যান্ডবিল, পোস্টার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের নেতাকর্মীদের জোরালো দাবির মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মিজানুর রহমান গত কয়েকবছর ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন।
নির্বাচনী এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে নিজেকে জড়িয়ে রাখা ‘আলোকিত মুলাদী’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মিজানুর রহমান সদ্যসমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কয়েক শ’ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে টানা উনিশ দিন বরিশাল নগরীর নিজ বাসায় অবস্থান করে বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে সর্বত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশালের জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগম ঘটাতে মিজানুর রহমান ব্যাপক ভূমিকা পালন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি কেড়েছেন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন-খালেদা জিয়ার আইন উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান ও সাবেক এমপি মোশাররফ হোসেন মঙ্গু। ওয়ার্কার্স পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ের পরিচালক এবং বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ আতিকুর রহমান। বর্তমান এমপি জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতানও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হিসেবে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে নিজেকে জড়িয়ে রেখে তৃণমূল পর্যায়ে জনসমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী আতিকুর রহমান।
এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু ও জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদা মুন্সী। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হচ্ছেন উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোঃ সিরাজুল ইসলাম। তবে এ আসনে তৃণমূল পর্যায়ের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলে এবারই সর্বপ্রথম আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
বরিশাল-৪, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ আসন ॥ এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার অগ্রভাগে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমান সাংসদ পঙ্কজ নাথের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা-ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগের জয় লাভের শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে।
পংকজ দেবনাথ ছাড়াও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহম্মেদ, দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মইদুল ইসলাম এবং মেজর (অব.) নাছির উদ্দিনের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী শাহ মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান, উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের সৈয়দ এছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের ও জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন বেসরকারী টেলিভিশন মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী এবং দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসাহাক ভূঁইয়া।
বরিশাল-৫, সদর আসন ॥ বরিশালের মর্যাদার আসন বলে সর্বত্র সমাদৃত বিভাগীয় শহরের এ নির্বাচনী এলাকা। বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ। মর্যাদার আসনের ফলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি সমান গুরুত্ব দিয়ে আসনটি নিজেদের ঘরে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অতীতে এ আসনটিকে বিএনপির ঘাঁটি বলে সর্বত্র প্রচার করা হলেও সদ্যসমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের বিএনপির একমাত্র কা-ারি মজিবর রহমান সরোয়ারের ব্যাপক ভরাডুবির ফলে অতীতের ভোটের সব হিসেব নিকেশ পাল্টে গেছে।
এখানে ক্ষমতাসীন দল থেকে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচিতরা হলেন-জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, তরুণ নেতা শিল্পপতি আরিফিন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবী এস.আর সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদ্দিন রিপন, শিল্পপতি মশিউর রহমান খান, বর্তমান সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নব্বইয়ের দশক থেকেই এ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। সদ্যসমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয়ের পর অতীতের ভোটের সব হিসেব নিকেশ পাল্টে গেছে। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার অতীতে একমাত্র প্রার্থী হলেও সিটি নির্বাচনে তাঁর ভরাডুবির কারণে এবারই এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহ ও জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মতে, বিএনপির প্রভাবশালী প্রার্থীদের সঙ্গে বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের জয় জয়কার হওয়ার প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। সেই অবস্থান থেকে এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনার বেশ অগ্রভাগে রয়েছেন এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, আরিফিন মোল্লা ও সালাহউদ্দিন রিপন। প্রবীণ প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও শিল্পপতি মশিউর রহমান খান। সদ্যসমাপ্ত সিটি নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিটি উঠান বৈঠকে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। প্রবীণ নেতা হিসেবেও তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। শিল্পপতি মশিউর রহমান খান দীর্ঘদিন থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করে বরাবরেই নিরাশ হয়েছেন। একাদশ নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার আশা করছেন। এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গোটা বরিশাল জুড়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করা, সমাজের অবহেলিত দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর মাঝে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, একজন সফল শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক দক্ষতায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দারের বরিশালে রয়েছে বিশাল একটি ভোট ব্যাংক। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের ভোটারদের কাছেও তার (বলরাম পোদ্দার) ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের দলের কঠিন সময়ও শেখ হাসিনার মুক্তির প্রশ্নে তাদের ক’জনের সাহসী ভূমিকাও সবার মুখে মুখে।
তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা আরিফিন মোল্লা দীর্ঘদিন থেকে দান-অনুদানের মাধ্যমে সদর আসনের দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অনুপ্রেরণায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদ্দিন রিপন দরিদ্র নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে গত একযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তার (সালাহউদ্দিন রিপন) আর্থিক সহায়তায় নির্বাচনী এলাকার দুঃস্থ পরিবারের ১২ হাজার নারী আজ পুরোপুরি স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি এসব এলাকার দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহযোগিতা, বিধবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা এবং গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসায় সব ধরনের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ সালাহউদ্দিন রিপন।
এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হবেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম। কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী হবেন জেলার আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মহসিন-উল ইসলাম হাবুল। বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা- ও সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রভাবে এ আসনটি এবার আওয়ামী লীগের ঘরে ওঠার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে।
Leave a Reply