রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন
এইচ.এম হেলাল ॥ বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে শিক্ষার্থী–শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো জেলার আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শনিবার ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাফভাড়া নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় শতাধিক বাস ভাঙচুর করা হয় এবং নূর পরিবহনসহ দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত হন বলে জানিয়েছেন নথুল্লাবাদ বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত বছরের ১৮ আগস্ট মালিক সমিতির এক অফিস আদেশে ছুটির দিনসহ সর্বদা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে হাফভাড়া নেওয়ার নির্দেশ থাকলেও হিজলা থেকে ছেড়ে আসা জোহান পরিবহনের এক সুপারভাইজার তা মানতে অস্বীকৃতি জানান। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে শ্রমিকরা তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে আরও শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ টার্মিনালে জড়ো হয়ে শ্রমিকদের শাস্তির দাবি করেন। অভিযোগ রয়েছে, তখন উল্টো শ্রমিকরাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়, যাতে ২৫ শিক্ষার্থী আহত হন।
অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবি, হিজলা থেকে বরিশালমুখী জোহান পরিবহনের চালক হিরণ নথুল্লাবাদ ফিলিং স্টেশনে নামার সঙ্গে সঙ্গে আগেই অবস্থান করা কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে মারধর করেন। এরপর দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বাসভাঙচুরে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী টার্মিনালের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ভাঙচুর চালাতে থাকে এবং দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
রোববার সকাল থেকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বন্ধের নির্দেশনা কোন পক্ষ থেকে এসেছে—মালিক নাকি শ্রমিক—তা নিশ্চিত করা হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, “আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখব। ভাঙচুর হওয়া গাড়িগুলোর ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে নিশ্চয়তা ছাড়া গাড়ি চালু হবে না।”
বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন বলেন, “গতকালের নৈরাজ্যে দুইশ বাস নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবহন কাউন্টার ভাঙচুর হয়েছে। এমন বর্বরতা ৪০ বছরে দেখিনি। এমনকি মসজিদে আশ্রয় নেওয়া শ্রমিকদেরও মারধর করা হয়েছে। প্রশাসন সুষ্ঠু বিচার না দেওয়া পর্যন্ত বাস রাস্তায় নামবে না।”
এদিকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে নথুল্লাবাদের ঘটনায় সংহতি জানিয়ে রূপাতলী থেকেও বাস বন্ধ হতে পারে বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে। যদিও রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়াউদ্দিন সিকদার এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ওসি আল মামুন উল ইসলাম বলেন, “শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বর্তমানে এলাকা শান্ত এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”
মাত্র ৩০ টাকা ভাড়াকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এ বিরোধ পুরো জেলার পরিবহন ব্যবস্থা অচল করে ফেলেছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
Leave a Reply