হারিয়ে যেতে বসেছে নলছিটির ঐতিহ্যবাহী চায়না মাঠ Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
সাংবাদিক জীবন কৃষ্ণ মন্ডল’র পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রতিমন্ত্রী আমার সব শক্তি-সাহস মা-বাবার কাছ থেকে পেয়েছি: প্রধানমন্ত্রী মাছ শিকার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীর শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ল ৬ ইঞ্চির বাইন কলাপাড়ায় অর্ধশতাধিক অসহায় মানুষ পেল প্রধানমন্ত্রীর অর্থ সহায়তা চার বিভাগে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়ল ৪৮ ঘন্টা গৌরনদীতে চমক, সরে দাড়ালেন মেরী, সমর্থন দিলেন মনিরকে হিজলায় প্রচারণায় প্রতিপক্ষের বাধা প্রদানের অভিযোগ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বরিশালসহ ৮ জেলায় রাত ১টার মধ্যে ৮০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস বিশ্বকাপের আগেই ভারতের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ! এক শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে এলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য: ইসি




হারিয়ে যেতে বসেছে নলছিটির ঐতিহ্যবাহী চায়না মাঠ

হারিয়ে যেতে বসেছে নলছিটির ঐতিহ্যবাহী চায়না মাঠ




ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥  সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চায়না মাঠ। স্থানীয়দের কাছে এটি উপজেলার একমাত্র খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত। ভূমি দস্যুদের থাবায় এরই মধ্যে বেদখল হয়ে গেছে মাঠের কিছু অংশ।

চায়না মাঠের দক্ষিণ পাশে রয়েছে জনৈক এক চায়না ব্যবসায়ীর কবর। সে কবরের পাশে বিশাল এ মাঠ যুগে যুগে ‘চায়না মাঠ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চায়না মাঠ এই অঞ্চলের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই অঞ্চলের যে ঐতিহাসিক পটভূমি তার অন্যতম একটি নিদর্শন চায়না মাঠ।

জানা গেছে, ঝালকাঠি ছিল একসময় বৃহত্তর বরিশালের অন্তর্গত। ১৮৬৫ সালে দেশের ২য় পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় নলছিটি পৌরসভা। নদী বন্দর থাকায় এই অঞ্চলটি বিদেশি বণিকদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। যার ফলে ইউরোপীয় ও চীনা ব্যবসায়ীরা এখানে বাণিজ্য করতে আসতেন। ফলে বিভিন্ন সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ডাচ ও ফরাসিরা এখানে ব্যবসা কেন্দ্র খুলেছিল। বাণিজ্যিক গুরুত্বের জন্য তৎকালীন সময়ে নদী বিশিষ্ট নলছিটিকে দ্বিতীয় কলকাতা বলা হতো। সে সময়ে বন্দরকে ঘিরে এই অঞ্চলে ছিল চায়না ব্যবসায়ীদের আধিক্য। ব্যবসা কাজে এসেই চায়না ব্যবসায়ী হুয়াং মৃত্যুবরণ করলে তাকে মাঠের পাশেই শায়িত করা হয়। আর সেই থেকেই ওই মাঠটি চায়না মাঠ হিসেবে পরিচিতি পায়।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে পশুচারণ আর গাড়ি পার্কিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ২শ বছরের পুরনো মাঠটি। এছাড়াও মাঠের উত্তর পাশে আবর্জনার বিশাল স্তূপ এবং অস্থায়ী কৃত্রিম শৌচাগার সৃষ্টি হওয়ায় তীব্র গন্ধে মাঠের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে স্থানীয় তরুণরা। প্রতি বছর কুরবানির ঈদে উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে এ মাঠে। সে কারণে কাদামাটিতে প্রতিবারই মাঠটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া মাঠটিতে বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে থাকে। গরু ছাগলের এমন অবাধ বিচরণ দেখে মনে হয় এটি গ্রাম বাংলার একটি চারণ ভূমি। আর আবর্জনার স্তূপ মনে করিয়ে দেয় ডাম্পিং এলাকার কথা। শতবর্ষ পুরনো এই মাঠটি একসময় ছিল নলছিটির ক্রীড়াপ্রেমীদের প্রাণ কেন্দ্র। কিন্তু সংস্কারের অভাবে মাঠটি খেলাধুলার বদলে ব্যবহার হচ্ছে প্রভাবশালীদের বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক কাজে।

অন্য দিকে, গেল ৭-৮ বছর ধরে ভূমিদস্যুরা একটু একটু করে মাঠটি দখল করে তৈরি করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে দক্ষিণ পাশে প্রায় ১৫টি অবৈধ স্থাপনা তুলে দখল করা হয়েছে মাঠের জমি। মাঠের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে পাকা কাঁচা স্থাপনা উঠিয়ে দখল করছে কিছু ভূঁইফোড় সংগঠনও। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পাকা স্থাপনাও তৈরি করেছেন। কয়েকমাস আগে অবৈধ দখলদারদের জায়গা ছেড়ে দিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ করা হয়েছিল। সেখানে মাঠের চারপাশ দখলমুক্ত করতে একমাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও দখলদাররা ভ্রক্ষেপ করেনি।

এছাড়াও বিনা অনুমতিতে মাঠের মধ্যে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। আর মাঠের পাশে নাম সর্বস্ব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থাটি সামনের অংশ এখন মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। সেখানে গত কয়েকমাস ধরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে শত শত বৈদ্যুতিক খুঁটি। ফলে ধীরে ধীরে মাঠ বিমুখ হয়ে পড়ছেন এলাকার তরুণ সমাজ।

চায়না মাঠের দক্ষিণ পাশের অবৈধভাবে দখলদার চা দোকানি মনির হোসেন বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। সরকার যদি উচ্ছেদ করে দেয় তবে অন্যত্র চলে যাব। ব্যবসায়ী মনিরের মত প্রায় একই বক্তব্য অন্য দখলদারদেরও। মাঠের জমি অব্যহৃত হয়ে পড়ে আছে বলেই তারা দখল করে ব্যবসা করছেন, উচ্ছেদ অভিযান হলে সবাই জায়গা ছেড়ে দেবেন।

এ ব্যাপারে নলছিটি ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন আলো বলেন, তরুণ সমাজকে আবারও খেলার প্রতি আগ্রহী করতে, মাঠটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত এবং মাঠকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করে খেলোয়ারদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিও স্থানীয় ক্রীড়া প্রেমীদের।

এ ব্যাপারে নলছিটি পৌরসভার মেয়র তছলিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, ইতোমধ্যে চায়না মাঠের অবৈধ দখলদারদের জায়গা ছেড়ে দিতে একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কিছুদিন সময় চাওয়া হয়েছিল। বিবেচনা সাপেক্ষে চলতি বর্ষা মৌসুম শেষ হলেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নলছিটি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপজেলাভিত্তিক মিনি স্টেডিয়ামের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চায়না মাঠকে তালিকাভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো সেটি চূড়ান্ত অনুমোদন হওয়ার কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।  উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। পরে ঐতিহ্যবাহী চায়না মাঠকে সংরক্ষণ করতে চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করা হলে সব সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি জানান।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD