শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে সিনিয়ররা কক্ষে ডেকে নিয়ে এক ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন করায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তার মা অভিযোগ করেছেন।
‘নির্যাতনের শিকার’ ওই ছাত্রী তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ক্যাম্পাসের ছাত্রী নিবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী। সেখানেই ২৩ অগাস্ট রাতে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ছাত্রীর মায়ের।
পর পর দুইবার তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং অজ্ঞান হয়ে যান। একপর্যায়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে সেই ছাত্রীর মা ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন।
শনিবার সকালে ওই শিক্ষার্থী এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়ার জন্য কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এ সময় সেখানে তার মা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রীর মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, “তাকে তার সিনিয়র আপুরা ডাক দিয়ে নিয়ে অনেক ইয়ে করেছে, তাতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তার মোবাইল কেড়ে নিয়েছে, তাকে অনেক বকাবকি করছে।
“দুই দুইবার তারে ডাকছে। একবার সাড়ে ৯টায়, পরে আবার মেয়েকে একা রুমে নিয়ে অনেক ইয়ে করছে। পরে ভয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, “সেটাকে এখন তারা অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করতাছে। এটা নাকি অভিনয়, নাটক এইরকম। অথচ আমার মেয়ে অনেক অসুস্থ। এই রুমে (অধ্যক্ষের রুমে) আপনারা গিয়ে দেখেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রীর মা বলেন, “পঞ্চম বর্ষের ছাত্রী নীলিমা হোসেন জুঁই তাকে ডেকে নিয়ে যায়। তখন তার রুমে আরেকজন মেয়ে ছিল। মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলছে, রেকর্ড কর, হেনতেন।
মায়ের বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা ‘নির্যাতিতা’ ছাত্রীর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর বক্তব্য নিতে গেলে কলেজ অধ্যক্ষ, কয়েকজন শিক্ষক ও অফিস সহকারী মিলে সাত সংবাদকর্মীর ওপর হামলা চালায়। তাদেরকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে সেখান থেকে বের করে দেন। যদিও বিষয়টি পরে সমঝোতা হয়।
পরে ছাত্রীকে ‘র্যাগিং’য়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার বলেন, “ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হবে। র্যাগিংয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্ধ্যা ৬টা দিকে উপাধ্যক্ষ জি এম নাজিমুল হক বলেন, “ছাত্রী নিবাসে কোনো র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষে তিন ছাত্রীর মধ্যে একটু দ্বন্দ্ব হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছিলো।
“একপক্ষ ছাত্রী নিবাসের ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বিচার দেয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির বিচার করায় একজন ক্ষুব্ধ হয়। তাই সে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শনিবার বিকালে সেই ছাত্রী নিবাস ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে বলেও জানান উপাধ্যক্ষ।
“হল ব্যবস্থাপনা কমিটির বিচার করার কোনো এক্তিয়ার নেই। তাই তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রী নিবাসের আবাসিক ছাত্রীদের তাদের কক্ষের রদবদল করা হবে।
উপাধ্যক্ষ বলেন, “অধ্যক্ষ ফয়জুল বাশার সব শিক্ষার্থীদের হলে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ ভবিষ্যতে ঝামেলা করলে কিংবা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করলে একাডেমিকভাবে কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রী নিবাস ব্যবস্থাপনা কমিটি মূলত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই করা হয়ে থাকে। পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী নীলিমা হোসেন জুঁই সেই কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক।
র্যাগিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে নীলিমা হোসেন জুঁই বলেন, “যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আমি এখন কথা বলার মত অবস্থায় নেই।
Leave a Reply