বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১১ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় কোন রিভার ফায়ার স্টেশন না থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির মুখে জেলার ফেরী ঘাট ও চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। প্রায়ই নদীর মাঝখানে ফেরীতে ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা। ফলে নষ্ট হচ্ছে ব্যবসায়ীদের কোটি টাকার সম্পদ। শুধু তাই নয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে গতানগতিক পদ্ধতিতে আগুন নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খেতে হয় দমকল বাহিনীকে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশন দাবি জানিয়ে আসলেও এর বাস্তবায়ন হয়নি এখনও।
তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর উপ-পরিচালক জানায়, অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ৪টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মান করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
চারদিকে নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলা জেলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌ- রুট ও ফেরী সার্ভিস। সম্প্রতি ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে মেঘনা নদীর মাঝখানে ‘এমভি কলমীলতা’ নামে একটি ফেরিতে অগ্নিকাণ্ডে পণ্যবাহী ট্রাকসহ নয়টি গাড়ি পুড়ে গেছে। আগুনে লেগে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। শুধু স্থল ফায়ার সার্ভিস দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হচ্ছে না। মাঝনদীতে আগুন লাগলে সড়ক পথে ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি জেলায় রিভার ফায়ার স্টেশন থাকলে অগ্নিকাণ্ডের সাথেসাথে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
নাগরকি সমাজের প্রতিনিধি এডভোকেট নজরুল হক অনু জানায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন মালামাল ট্রাকে করে আসলে তখন ফেরীতে করেই আসতে হয়। কিন্তুু ফেরীতে যদি আগুন লাগে তখন তাতক্ষনিক আগুন নেভানোর কোন সুযোগ থাকে না। সম্প্রতি কলমীলতা ফেরীতে আগুন লাগাই তার দৃষ্টান্ত উদাহরন। ভোলা শহর থেকে ফায়ার সার্ভিসের টিম নদী পথে মাঝ নদীতে পৌঁছে আগুন নিভাতে যে সময় লাগে সে সময়ের মধ্যে সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়।
তাই নদী পথে অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে ভোলা- লক্ষীপুর ফেরী ঘাটে একটি ভাসমান রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মান করা দরকার। যদি নির্মাণ করা না হয় তবে নৌ-পথে ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ থেকে যাবে। তাই ব্যবসায়ীদের পন্য আনা নেয়ার সময় অগ্নিঝুঁকি নিরসন করার জন্য অতিদ্রুত সরকারের এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা উচিত।
ভোলা ইলিশা এলাকার সমাজসেবক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোলায় দুটি ফেরীঘাটসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল রয়েছে। সেখানে আগুন লাগলে তাতক্ষনি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার ক্ষেত্রে অনেক সময় লেগে যায়। সম্প্রতি মেঘনা নদীর মাঝখানে ফেরীতে আগুন লাগার কারনে ফায়ার সার্ভিস দেড়িতে পৌছানোর কারনে ৯টি মালবাহী গাড়ী পুড়ে কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে।
ভোলা যে ফায়ার স্টেশন আছে তা নদীতে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা অনেক কষ্টকর হয়ে পরে। তাই সরকারের কাছে দাবি করছি এই অঞ্চলের মানুষের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হউক। বিআইডব্লিউটিসির বিভাগীয় প্রধান মো. ইমরান হোসেন জানান, ভোলাসহ ২১ জেলার পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করে ভোলা-লক্ষীপুর- ভোলা-বরিশাল ফেরী সার্ভিসের মাধ্যমে। ফলে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির মধ্যে থেকেই এই রুটে ব্যাবসায়ীরা পণ্য আনা নেয়া করে থাকেন। তাই ইলিশা ফেরী সার্ভিস এর পাশেই অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতে এখানে রিভার ফায়ার স্টেশন (নৌ-ফায়ার সার্ভিস) নির্মাণ করার আহবান জানায়। আর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভোলা এর উপ-পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার জানায়, ভোলা একটি নদী মাত্রিক এলাকা। এখানে নৌ-পথে ও চরাঞ্চলে প্রচুর অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে। তাই অগ্নিঝুঁকি ও নৌ-দুর্ঘটনা হ্রাস করার জন্য ভোলায় ২টি স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনসহ ৪টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ভোলার ইলিশায় একটি অন্যটি চরফ্যাশনের বেতুয়া নদীতে স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশন প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এগুলো নির্মাণ করা হলে আশা করি ভবিষ্যৎ দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতির পরিমাণ কমে আসবে।
এছাড়া জেলার বিচ্ছিন্ন ছোট বড় মিলে ৭০টির মতো চরঞ্চল রয়েছে। সেখানে দ্রুত গতিতে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন পৌঁছাতে হলে অবশ্যই পানি পথে যেতে হবে। সেই কারণেই নৌ-ফায়ার স্টেশন (রিভার ফায়ার স্টেশন) খুবই জরুরি। জেলায় বর্তমানে ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন আছে।
Leave a Reply