মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ তাঁর বাড়ি বরিশাল। নাম আনোয়ার হোসেন। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন রাজশাহীতে। কখনো থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, কখনো সিভিল সার্জন অফিসে। সব শেষে তিনি এখন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক। এর আগে রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবরক্ষক ছিলেন। বছর দেড়েক আগে বদলি হয়ে এসেছেন রামেক হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক পদে। এখানে যোগ দেওয়ার পর তিনি হাসপাতালের সব উন্নয়নকাজসহ যাবতীয় কেনাকাটার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। সব ধরনের বিল-ভাউচার পাস হয় তাঁর হাত দিয়ে। আর এসব কাজ করতে গিয়ে দেশের স্বাস্থ্য খাতের ৪০ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একজন হয়ে ওঠেন তিনি। রামেক হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফের ডান হাত বলে পরিচিত। দুর্নীতির দায়ে মহিউদ্দিন মারুফ স্বেচ্ছায় অবসর নিলে সেখানে যোগ দেন আরেক দুর্নীতিবাজ আনোয়ার। দুজনের কাছেই এই পদটি যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। কয়েক দিন আগে এই দুজনের সম্পদের হিসাব চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে পাঠানো হয়েছে চিঠি।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন আলোচনার কেন্দ্রে। এসব দুর্নীতিবাজের সম্পদ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদকসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। রামেক হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন একসময় রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের হিসাবরক্ষক ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, সেখানে টেন্ডার বাণিজ্যের প্রধান হোতা ছিলেন তিনি। তাঁর সময়ে সিভিল সার্জনের দপ্তরের মাধ্যমে ওষুধসহ বিভিন্ন মালপত্র কেনাকাটায় চলেছে হরিলুট।
জানা গেছে, রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে ক্রয় করা বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রি করে অগাধ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। পাশাপাশি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওষুধ ক্রয়সহ অন্যান্য কেনাকাটার টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্যের হোতাও ছিলেন হিসাবরক্ষক আনোয়ার। ২০১৮ সালের ২২ জুলাই রাজশাহীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্টোর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার এক ট্রাক সরকারি ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী পাচারের সময় গোদাগাড়ী উপজেলা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই ঘটনার পর রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের স্টোর কর্মকর্তা মকবুল হোসেন পলাতক। এই ওষুধ পাচারের নেপথ্য হোতা ছিলেন হিসাবরক্ষক আনোয়ার। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশি তদন্তে ওই যাত্রায় অর্থের বিনিময়ে রক্ষা পান আনোয়ার।
রামেক হাসপাতালের প্রধান হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন ও সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফের সম্পদের হিসাব চেয়েছে দুদক এ ঘটনা ছাড়াও রাজশাহীর সিভিল সার্জনের স্টোর থেকে আনোয়ার হোসেনের সময়কালে একাধিকবার ওষুধ পাচার করার সময় জব্দ করা হয়। কিন্তু কৌশলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান মূল হোতা হিসাবরক্ষক আনোয়ার।
সিভিল সার্জন অফিসে যোগ দেওয়ার আগে আনোয়ার জেলার দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান হিসাবরক্ষক ছিলেন। সেখানে তিনি এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে আটক হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে সাধারণ জনগণ গণপিটুনি দিলে সহকর্মীরা ছাড়িয়ে আনেন।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন রামেক হাসপাতালে যোগদানের পর এখানকার টেন্ডার, কেনাকাটা, বদলি বাণিজ্য তাঁর কবজায় নিয়ে নেন। সাবেক হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফ সব গোপন ফাইলপত্র, অনিয়মের খাতগুলো আনোয়ারকে বুঝিয়ে দেন। ফলে আনোয়ার অল্প সময়ের মধ্যে রামেক হাসপাতালের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। সম্প্রতি রামেক হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এই নিয়োগ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রকও হয়ে ওঠেন আনোয়ার। এভাবে নানাভাবে দুর্নীতি করে অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর বহরমপুর এলাকায় রয়েছে আনোয়ার হোসেনের পাঁচতলা একটি বাড়ি। এর বাইরে নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানের নামে-বেনামে রয়েছে বিপুল সম্পদ।
দুদকের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। আমার সম্পদের বিবরণী দ্রুতই দুদককে দেব।
এদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রামেক হাসপাতালের আরেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ছিলেন প্রধান হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন মারুফ। বছর দেড়েক আগে স্বেচ্ছায় অবসরে যান তিনি। নগরীর বহরমপুরে মহিউদ্দিন মারুফের স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি তিনতলা বাড়ি।সুত্র,কালের কন্ঠ
মহিউদ্দিন মারুফ প্রায় ১০ বছর রামেক হাসপাতালে নানা অপকর্মের হোতা ছিলেন। টেন্ডার বাণিজ্য, মজুরিভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগ, স্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, কেনাকাটা বাণিজ্যের হোতা ছিলেন তিনি। স্ত্রী নার্গিস আরা রুবিকে ক্ষমতার জোরে রামেক হাসপাতালের অফিস সহকারী পদ থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে উন্নীত করেন। এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। নানা অনিয়মের হোতা মহিউদ্দিন মারুফ তাঁর অপকর্ম লুকাতে শেষে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পর তিনি আবার চাকরি ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। তবে আর ফিরতে পারেননি। এই মারুফ বর্তমানে শতকোটি টাকার মালিক।
তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন মারুফ বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। স্বামী-স্ত্রীর চাকরির টাকায় একটি বাড়ি করেছি। এ ছাড়া আমার আর কোনো সম্পদ নেই।
Leave a Reply