যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন ঝালকাঠির নাজমুন নাহার Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন ঝালকাঠির নাজমুন নাহার

যেভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন ঝালকাঠির নাজমুন নাহার




ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি। বিড়ি কারখানায় কাজ করেই চলত জীবিকা নির্বাহ। দুবেলা খেতে পারলেও কখনো জুটত না মাছ মাংস। উৎসব অনুষ্ঠানে পরা হতো না কোনো নতুন কাপড়। ঘুমাতে হতো মাটির বিছানায়। বলছিলাম জীবনযোদ্ধা ঝালকাঠির নাজমুন নাহারের কথা।

নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর গ্রামে ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন নাজমুন নাহার। ১ বছর বয়সেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পিতা মো. বক্কর আলী হাওলাদারের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। ৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়ে মা বকুল বেগম। তিনি সংসার চালাতে কাজ নেন বিড়ি তৈরির কারখানায়। শিশুকাল থেকেই পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ ছিল নাজমুন নাহারের। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে বিড়ি কারখানায় কাজ শুরু করেন মাত্র ৬ বছর বয়সেই।

সেই আয় দিয়ে নিজের পড়ালেখার খরচ ও বিদ্যালয়ের বেতন দিয়ে যে টাকা থাকত তা দিয়ে মাকে সংসার চালাতে সাহায্য করত নাজমুন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। ১৫ বছর বয়সেই বেকার ছেলের হাতে পাত্রস্থ হতে হয়েছে তাকে। বিয়ের পর বেকার স্বামীর ঘরে গিয়ে যন্ত্রণা একটুও কমেনি। শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন নেওয়া, সংসারের অন্যান্য কাজ করা, নিজে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় সুখের মুখ দেখতে পাননি। তারপরও অসুস্থাবস্থায় গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে নকশি কাঁথার কাজ নিয়ে করত। সেখান থেকে যা সামান্য আয় হতো তা দিয়ে স্বামীর সংসারেই জোগান দিতে হতো। সেখান থেকেই সেলাই কাজে তার আগ্রহ জমে। দর্জির দোকানে গিয়ে কাপড় কাটা দেখে বাসায় এসে পুরাতন কাপড় মাটির ফ্লোরে রেখে ব্লেড দিয়ে কেটে জামা তৈরির চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীদের জামা-কাপড় কেটে হাতে সেলাই করে তৈরি করে সরবরাহ করত।

নাজমুন নাহার সেখান থেকে কিছু টাকা জমিয়ে ২০১৫ সালে একটি পুরাতন সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। পরের বছর ঝালকাঠি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সেলাইয়ের ওপর ৬ মাসের একটি প্রশিক্ষণ ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২ বারে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। সেই ঋণের টাকা দিয়ে ২টি গাভী এবং আরও ২টি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। শহরের মধ্য চাঁদকাঠিতে ‘চাঁদনী টেইলার্স’ নামে একটি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। সেখানে বর্তমানে ৪ জন মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত আছে। নিজের জমি তেমন না থাকায় পার্শ্ববর্তী একটি জমি মৌখিক চুক্তিতে নিয়ে সবজি চাষাবাদ করেন। বর্তমানে তিনি ৫৭ জন মহিলা সদস্যা নিয়ে ‘মধ্যচাঁদকাঠি মহিলা কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠনও পরিচালনা করছেন। প্রবল ইচ্ছা থাকায় অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে একমাত্র কন্যা সন্তানকে পাত্রস্থ করে এবং পুত্র সন্তানকেও পড়াশুনা করাচ্ছেন। নিজের পরিশ্রম দ্বারা উপার্জিত অর্থে স্বামীকে নিজ বসতঘরের পাশে একটি স্টেশনারি দোকান স্থাপন করে দিয়েছেন। এখন তার গোয়ালে ৫টি গরু, চাঁদনী টেইলার্সে ৩টি সেলাই মেশিন, স্টেশনারি দোকান, সবজি চাষাবাদ সবমিলিয়ে দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে সফল আত্মসংগ্রামী হিসেবে নাজমুন নাহার নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার এ উদ্যোগী কার্যক্রমে সহায়তা করছেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার আইরিন সুলতানা।

আইরিন সুলতানা জানান, নাজমুন নাহারের ইচ্ছা আর আমার সহায়তায় সে কর্মদক্ষতার কারণে নিজ জীবনের সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সে এখন আত্মসংগ্রামী সফল নারী। ঝালকাঠি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, নাজমুন নাহার অনুকরণীয় একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি পরিশ্রম করে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। কিছুদিন পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নাজমুন নাহার শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD