শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দিনমজুর আনিসুর রহমানের মেয়েদের জমানো বৃত্তি আর টিউশনির টাকায় বাবাকে কিনে দেওয়া চারটি গরুই নিয়ে গেছে চোর। গতকাল মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ঘটবর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একমাত্র সম্পদ ৪টি গরু চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আনিসুর ও তার মেয়েরা। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষাও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, আনিসুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাতকাজলদিঘী ইউনিয়নের ঘটবর গ্রামে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সবাই। ওই রাতের কোন এক সময়ে গরুগুলো নিয়ে যায় চোর। সকালে আনিসুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম দেখতে পান গোয়াল ঘরের দরজা খোলা কিন্তু ভেতরে কোন গরু নেই। গরুর পায়ের ছাপ আর গাড়ির চাকার দাগ দেখে স্থানীয়রা ধারণা করছেন চোরেরা গরুগুলো পিকআপে করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
দিনমজুর আনিসুরের চার মেয়ে। চারজনই অত্যন্ত মেধাবী। বড় মেয়ে আফসানা খাতুন এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পড়া অবস্থায় সম্প্রতি তার বিয়ে দিয়েছেন। মেজ মেয়ে রোমানা আক্তার এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ উত্তীর্ণ হয়। তিনি এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। সেজ মেয়ে লাবনী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। তিনিও এখন রংপুর আইএইচটিতে রেডিওলোজি নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। এ ছাড়া ছোট রিপা আক্তার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। বড় মেয়ে আফসানা ইসলামী ব্যাংক থেকে মাসে ৩ হাজার ও মেজ মেয়ে রোমানা ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসে ২ হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পায়। সেই টাকার সাথে টিউশনির টাকা এবং বাড়ির কিছু টাকা যোগ করে কয়েক বছর আগে বাবাকে ৪টি গরু কিনে দেন তারা। স্বপ্ন ছিলো গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশুনা ও বিয়ের খরচ জোগার করবেন। কিন্তু চোর তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের ছাত্রী রোমানা আক্তার বলেন, গরুগুলো আমরা কিনেছিলাম যেন বিপদের সময় বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করতে পারি। এখন আমাদের আর কিছু রইলো না। সামনে আমার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে ১২ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাবো ভেবে পাচ্ছি না। করোনার মধ্যে এমনিতে টানাপোড়েনে দিন যাচ্ছিল। এখন সব কিছু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আনিসুর রহমান বলেন, আমি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ওই পরিবারের ৪টি গরু চুরির ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। চোর চক্রটিকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply