শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
শাকিব বিপ্লব ॥ লেবু চটকালে তিতে হয়ে যায়। অতিষ্ট হয়ে কেউ কেউ এরূপ মন্তব্য করেন। কিন্তু তিতে লেবুও কখনো কখনো কোন রোগ-বালাইয়ের দৈব শক্তি হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। উপরোক্ত এই কথাগুলো বলার কারণ কথিত যুবলীগ নেতা মাসুদ সিকদার ওরফে বিট মাসুদকে নিয়ে ফের নতুন করে লেখার ইচ্ছে ছিল না। তাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একটি লেখায় তার বেশ কয়েকটি খেদুক্তির মাঝে আমাকে বেসামাল বলে মন্তব্য করার পরও ভেবেছিলাম নীরব থাকি। কিন্তু লেখার রসদ যদি মিলে যায় তাহলে কি নিশ্চুপ থাকা যায়? তাছাড়া বিট মাসুদ আলাপচারিতায় নিজেকে সদ্য নির্বাচিত বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে যে দাবি করেছিল তা দেখছি এখন অমূলক নয়।
প্রথমে ভেবেছিলাম সবাই যখন সাদিক-বন্দনায় উন্মত্ত তখন এ ধরনের মাসুদরা তার নাম ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। উদীয়মান নেতা সাদিক আবদুল্লাহর মত সাংগঠনিক দূরদর্শী সম্পন্ন ব্যক্তি এই মাসুদদের প্রাধান্য দেবে সেটাও আবার অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। হতে পারে ভোটের রাজনীতিতে অথবা মাঠ গোছানোর তাগিদে অনেককেই তিনি নির্বাচন-পূর্ব কাছে টেনেছেন, বাসায় ঘোরাঘুরির সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এত কাছের তা আমলে আনিনি। এখন দেখছি আমার সে ধারণা ভুল। বরং মাসুদের কথাই সত্য। গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর কাটপট্টি সড়ক দিয়ে নয়া মেয়রের ব্যক্তিগত গাড়িটি সদর রোডের দিকে যাওয়ার দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। আচমকা দেখি গাড়ির পেছনে একটি মোটরসাইকেল। আরোহী সেই মাসুদ। অনেকটা প্রটোকল দেওয়ার মত মেয়রের গাড়ির পেছনে মাসুদের ছুটে চলার দৃশ্য শুধু আমি নয় অনেকেই দেখেছেন এবং মন্তব্য করতে শুনেছি- সেতো ভাইর-ই লোক? গাড়ির ভেতরে কে কে ছিলেন তা স্পষ্ট দেখা যায়নি। শুধু অনুমান করলাম সামনে বসা ছিলেন মেয়র মহোদয়ের আদরের বড় কন্যা। গাড়িটি সাই সাই করে যখন যাচ্ছিল মাসুদের গাড়ির গতিও ততো বাড়ছিল। একপর্যায়ে গাড়িটি হারিয়ে গেল আমার দৃষ্টি সীমানার বাইরে।
সম্ভবত কালিবাড়ির দিকে গাড়িটি টার্ন করেছিল। কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, হায়রে রাজনীতি! কত কি দেখা যায়, শোনা যায়। রাজনীতিবিদরা প্রায়ই সভা-সেমিনারে তাদের বক্তব্যে দুর্বৃত্ত এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে কথা বলেন। সাংগঠনিক দুর্বৃত্তদের ছাড় না দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়। আসলে এগুলো রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি। আমার জানা মতে, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টির প্রত্যয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার আগেই প্রশংসিত হয়েছেন। তার কালিবাড়ির বাসায় অনেকের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছেন বলে লোকমুখে শুনেছি। আবার কখনো দুর্নীতির অভিযোগ তার কানে তোলায় কাউকে কাউকে তিরস্কার করেছে বলেও জানতে পারি। কিন্তু একটি বিষয় বিস্মিত হওয়ার মতই। নানা ঘটনায় বিতর্কিত বেশ কয়েকজনকে সাদিক আবদুল্লাহ তার দলীয় সহোচর হিসেবে সেই থেকে পাশেই রাখছেন। এমনকি মামলার ফেরারী আসামির তালিকায় রয়েছেন এমন ব্যক্তিকে নিয়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তার যোগ দেওয়ার চিত্রও দেখেছি। ভেবেছিলাম অন্তত বিতর্ক এড়াতে বরিশালবাসীর নতুন এই নেতা হয়তো এ ধরনের কালচার এড়িয়ে চলবেন। তা আর হলো কই?
অন্য কথা বাদ দিলাম। বিট মাসুদের কথাই যদি বলি, তাহলে অনেক প্রশ্নের উত্তর আপনা-আপনি মিলে যায়। এই বিট মাসুদকে নিয়ে সাম্প্রতিক লেখালেখি নয়, তার অতীত কর্মকান্ড নিয়ে নগরীতে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ আছে, এখনো তিনি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নাম ব্যবহার করে টিয়াখালী থেকে রূপাতলী পর্যন্ত চলাচলকারী অটোরিক্সা থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন। আগে করতেন নগরীজুড়ে। এখন সীমানা হয়তো সংকুচিত করে ফেলেছেন। কিন্তু সাদিক আবদুল্লাহর নাম ব্যবহার তো থামেনি। একাধিক মহল এ তথ্য দিয়ে প্রশ্ন রেখেছে, মাসুদ সিকদার চাঁদাবাজি করে বিট মাসুদ হিসেবে নগরীতে পরিচিত হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে সাদিক আবদুল্লাহর মত নেতার কাছে ভিড়তে সুযোগ পেলেন? কি আছে এই যুবকের সাংগঠনিক গুণাবলী? যে কারণে তাকে প্রয়োজন? আমি নিশ্চিত নই আসলে নবনির্বাচিত মেয়র তাকে কতটুকু প্রাধান্য দেন। তবে বাস্তবতা বলে, যদি প্রাধান্য দিয়ে না-ই থাকেন তাহলে কালিবাড়ি সড়কে তার বাড়িতে এবং তার গাড়ির পেছনে কিভাবে সে ঘোরে? গত দু’দিন পূর্বে যার ফিরিস্তি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখিতে অসংখ্য পাঠক চোখ ফেলেছে। অনেকে এমন লেখায় সাধুবাদ জানিয়ে আরো কিছু তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। দাবি করেছে, ভয়ংকর এক যুবক হিসেবে মাসুদ কম নয়।
বিতর্ক যখন তুঙ্গে তখন তার গাড়ির পেছনে সেই যুবককে আবার দেখতে পাওয়া বড়ই বেমানান। জানি না ওই গাড়ির ভেতরে মেয়র সাহেব ছিলেন কিনা। যদি তিনি থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি মাসুদকে দেখেছেন। সেক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক অতীত বক্তব্যে বিতর্কিত ব্যক্তির তার দরজায় স্থান নেই, সেই কথাটির যথার্থ্য প্রয়োগ মিলল কোথায়? নাকি ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ ঘটে। একজন পাঠক হিসেবে মহানগর প্রজন্মলীগের শীর্ষ নেতা পলাশ চৌধুরী নিজের সরল অভিমত প্রকাশ করেছিলেন এই বলে যে, বিট মাসুদকে নিয়ে এত বড় লেখার প্রয়োজন কি? সে যে মাপের তার থেকেও লেখনীতে বড় কিছু বানিয়ে ফেলা হল। অর্থাৎ স্টার। এখন দেখছি আসলেই সে স্টার হয়ে গেল! বলা বাহুল্য যে, এরই মাঝে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাদিক আবদুল্লাহর মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার আভাস দিয়ে লেখা হয়েছে- ফাটাকেস্ট আসছেন, দুর্নীতিবাজরা সাবধান। তাহলে বিট মাসুদরা কি সেই সতর্ক বার্তার বাহিরের? আবার এমনও হতে পারে লেখালেখিতে মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাওয়ায় সাদিক আবদুল্লাহর অজান্তে গাড়ির পেছনে থেকে নিজেকে জাহির করলেন তিনি নিরাপদেই আছেন এবং নেতার বিশ্বস্ততার পরিচয় নগরবাসীর কাছে তুলে ধরার প্রয়াস খুঁজলেন।
নানা সূত্রের দাবি, লেখালেখিতে মেয়রের বাসায় এই যুবকের যাতায়াত এখনো বন্ধ হয়নি। এমনকি কোন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়নি। বরং স্বদম্ভে মাসুদ সাংবাদিকদের নিয়ে নানা মন্তব্য করে চলেছেন বলে কানে আসছে। এতে প্রমাণ করে নবনির্বাচিত মেয়রের কাছে সম্ভবত মাসুদের কদর আছে। তবে এ লক্ষণ শুভ নয়। সাদিক আবদুল্লাহর মত একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা যখন অনেক, তখন বিতর্কিতরা যদি চারপাশে এভাবে ঘোরাঘুরি করে তাহলে নেতার ইমেজের কুঠিরে বিতর্ক জেঁকে ধরতে সময় লাগবে কি?
Leave a Reply