বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনার লকডাউন চলাকালে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম চড়লেও সব ধরনের মুরগির দামের পারদ ছিল নিচের দিকে। এখন করোনার প্রভাব অনেকটা কাটিয়ে সব কিছু স্বাভাবিক হলেও মুরগির দাম হঠাৎ যেন ‘পাগলা ঘোড়া’। গেল দেড় মাসে মুরগির দাম ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দর।
বিক্রেতারা বলছেন, করোনায় আটকে থাকা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এখন একযোগে শুরু হয়েছে। আগে শুধু শুক্রবার ও শনিবার মুরগির চাহিদা বাড়ত, এখন প্রতিদিনই বাড়তি চাপ। বন্ধের দিন এ চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। মাঝখানে ব্রয়লার মুরগির দাম খুচরায় ১৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এখন অবশ্য পাঁচ-দশ টাকা কম। কিন্তু তার পরও অন্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি।
খামারিরা বলছেন, বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের বাড়তি চাহিদা ছাড়াও মুরগির দাম বাড়ার আরেকটি কারণ পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বাড়ার ফলে পোল্ট্রি খাদ্যের প্রধান কাঁচামাল সয়ামিলের দাম কেজিতে ১৩ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এতে গড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া আবহাওয়ার কারণে মুরগির বেড়ে ওঠার হার কমে যাওয়া এবং বাচ্চার উৎপাদন কম হওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখছেন তাঁরা। গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণেও মুরগির ওপর বাড়তি চাহিদা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে রোজার আগে মুরগির দাম কমে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
রাজধানীর মুগদার পোশাককর্মী রাবেয়া বলেন, দাম কম থাকায় মুরগি আগে গরিবের খাবার ছিল। গরুর মাংসের মতো মুরগিও ধনীদের খাবার হয়ে গেল। এখন মুরগি খুব বেশি পাতে ওঠে না। মতিঝিলের ব্যাংক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য ভোগ্যপণ্যের মতো মুরগির দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আয় তো আর বাড়েনি।
আমার দুই ছেলে মুরগি পছন্দ করত, তাই কেনা হতো বেশি। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন কিনছি কম।’ মানিকনগরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সরওয়ার বলেন, ‘সোনালি মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি বেকায়দায় পড়েছে বিয়ে-বনভোজনসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। নির্ধারিত বাজেটের মধ্যেই তাঁদের অনুষ্ঠান শেষ করতে হচ্ছে।’
রাজধানীর মুগদা, মালিবাগ, বসুন্ধরা গেট কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে ব্রয়ালার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা কেজিতে। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। এক মাস আগেও ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যেত ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। মধ্য জানুয়ারিতে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। মাসখানেক আগে সোনালি মুরগি পাওয়া যেত ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি। এর আগে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেশে খুচরায় ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। গত বছর এই সময় ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
বসুন্ধরা গেট এলাকার সায়েদ আলী সুপার মার্কেটের বিসমিল্লাহ চিকেন হাউসের স্বত্বাধিকারী কাজী আতিক বলেন, ‘একদিকে হঠাৎ চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে মুরগির সরবরাহ কম। ফলে উভয় দিকেই চাপে রয়েছে বাজার। এতে দামও চড়ছে। তবে এখন আর বাড়ছে না।
আগের বাড়তি দামই রয়েছে। ওই মার্কেটের ভাই ভাই চিকেন স্টোরের ওসমান গনি বলেন, আগে ডিলাররা চাওয়ার চেয়ে বেশি মুরগি নিয়ে আসত। এখন যা চাই তার চেয়ে কম নিয়ে আসে। দামও বেশি রাখছে। ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
.
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বিপিকেআরজেপি) এবং পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি) সূত্রে জানা যায়, খামার থেকে সব ধরনের মুরগি ডিলারের হাত ঘুরে পাইকারি বাজার কিংবা সরাসরি বড় বাজারের খুচরা দোকানে চলে আসে। তাঁদের তথ্য মতে, গতকাল ঢাকার আশপাশের খামারগুলোতে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১২৩ থেকে ১২৫ টাকা কেজি। মাসখানেক আগেও ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি। ১৫ জানুয়ারি খামারগুলোতে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা কেজি। অর্থাৎ খামারপর্যায়ে দেড় মাসে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
বর্তমানে খামারপর্যায়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি, যা এক মাস আগেও ছিল ১৯০ টাকা কেজি। মধ্য জানুয়ারিতে অর্থাৎ মাস দেড়েক আগে খামারপর্যায়ে সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ দেড় মাসে এই জাতের মুরগির দাম বেড়েছে ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে এই মুরগির ব্যবহার বেশি হওয়ায় এর দামই বেশি বেড়েছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহসীন বলেন, সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক অনুষ্ঠান বেশি থাকে। এতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ মুরগির চাহিদা বাড়ে। এবার করোনার কারণে আটকে থাকা অনুষ্ঠানগুলো একযোগে শুরু হওয়ায় মুরগির চাহিদা বেড়েছে ১৫-১৬ শতাংশ।
বিপরীতে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বাড়তি থাকায় পোল্ট্রি খাবারের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। আগে গড়ে ৪২ টাকায় খাবার পাওয়া গেলেও এখন লাগছে ৪৭ টাকার ওপর।
এ ছাড়া শীতের সময় আবহাওয়ার কারণে মুরগির গড় ওজনও কম বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাড়তি চাহিদা, জোগানে ঘাটতি এবং উৎপাদন খরচ বাড়ায় মুরগির বাজার চড়ছে। তবে মার্চের মাঝামাঝিতেই দাম কমে আসতে পারে।
Leave a Reply