সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ভোলা-বরিশাল জাতীয় মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্ততার কাজে অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও তা কানে নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ উঠেছে, তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর সঙ্গে ঠিকাদারের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তিনি ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গাচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশালের চরকাউয়া থেকে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আওতায় লক্ষ্মীপুর অংশে রয়েছে মজু চৌধুরীহাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ।
বাড়তি কাজসহ মোট ১০৫ কোটি টাকা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মঈনউদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড কাজটি পেয়েছে। কাজটি স্থানীয়ভাবে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটের ইস্কান্দার মির্জা শামীম সমন্বয় করছেন।
দুজন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় ১৩ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তাদের ভাষ্য, সড়কের এ কাজে কার্যাদেশ মানা হচ্ছে না। তদারকির প্রকৌশলী ছাড়াই ঠিকাদারের ইচ্ছামতো রাতেও কার্পেটিং কাজ করা হয়। বালুভর্তি (ফিলিং) করে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা শুধু কাগজ-কলমে। পুরোনো লেন মিলিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তা হয়নি।
কয়েকটি অংশে পুরোনো-পরিত্যক্ত পাথর ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। খোয়া ও বালু দিয়ে সাববেইজ করার কথা থাকলেও আগের কার্পেটিং সিলকোট ফের ব্যবহার করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। সাববেইজে ৭০ ভাগ খোয়া, ৩০ ভাগ বালুর সংমিশ্রণের নিয়ম থাকলেও নির্ধারিত বালু না দিয়ে ভিটি বালু ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন ও পল্লীচিকিৎসক মো. ইসমাইল জানান, মেকাডমে আমদানি করা কালো পাথর ৮০ ভাগ ব্যবহারের কথা থাকলেও তা নামকাওয়াস্তে রাখা হয়েছে। স্টকইয়ার্ডে বেসিক প্ল্যান্ট বসিয়ে বেইজ ও ওয়ারিং কোর্স করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। মাটি বাইরে থেকে পরিবহন করে রাস্তার পাশ বাঁধাই করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পাশের ক্ষেতের মাটি ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে কাজটি করা হচ্ছে। লোক দেখানো সামান্য পানি ছিটানো হলেও ধুলাবালিতে একাকার থাকে পুরো এলাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঠিকাদার মন্ত্রীর (সেতুমন্ত্রী) আত্মীয়। তদারকি কর্মকর্তার বাড়িও নোয়াখালীতে। তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন ইচ্ছামতো কাজ করছেন। এছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি কাজে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করায় ঠিকাদার ‘শেল্টার’ পাচ্ছেন।
চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ ছৈয়াল জাগো নিউজকে বলেন, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করেন। এ সড়কে যেভাবে কাজ হচ্ছে তার চেয়ে নিম্মমানের কাজ আর হয় না। ঠিকাদার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় আমাদেরও ভয়ে থাকতে হয়। প্রতিবাদ করলে আমাদের চাঁদাবাজ বলা হবে।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, শতকোটি টাকার প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে সরকারের বদনাম করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় পুরোনো রাস্তার ওপর কার্পেটিং দেওয়া হচ্ছে। কয়েকমাস না যেতেই রাস্তাটির ভগ্নদশা হবে। তদারকি কর্মকর্তারা ঠিকাদারের কাছে ম্যানেজ থাকায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ নেই। ব্যস্ততম এ সড়কের কাজে চুরি নয়, দিন-দুপুরে ডাকাতি হচ্ছে।
তবে ঠিকাদারের সমন্বয়ক ইস্কান্দার মির্জা শামীমের দাবি, নিয়মানুযায়ী ভালো পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে কাজটি করা হচ্ছে। কাজটি না পেয়ে স্থানীয় একটি মহল অপপ্রচার করছেন।
তদারকির দায়িত্বে থাকা লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কাজের শুরুতে কিছুটা অনিয়ম হলেও এখন সঠিক নিয়মে হচ্ছে। ঠিকাদার ভালো করে কাজ করছেন। আমরাও নিয়মিত তদারকি করছি। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। জুনের মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তুহিন আল মামুন বলেন, জানুয়ারিতে আমি এখানে যোগদান করেছি। এরপর কাজের গুণগতমান ভালো দেখছি। তবে অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, অনিয়মের অভিযোগে তিনবার কাজটি বন্ধ করা হয়। বিষয়টি আমি লিখিতভাবে সড়ক সচিবকেও জানিয়েছি। গুণগতমান ঠিক করে কাজ করতে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।সুত্র,জাগো নিউজ
Leave a Reply