সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে ২০ বছর বয়সী এক এক তরুনীকে ডেকে নিয়ে রুবেল নামের তাঁর প্রেমিক কতৃক ধর্ষণ ও তাঁর পরিবার-পরিজন সহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগের ৯ দিন পর মামলা নিয়ে ধর্ষক রুবেলকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল ১১ দিকে স্থানীয় মানিকার বাজারের কুতুবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ মিয়ার ব্যক্তিগত অফিসে ওই ঘটনা নিয়ে শালিশ-বিচার করা অবস্থায় থানা-পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।
এর আগে সোমবার দুপুরে ওই তরুণী তাঁর বাবা মা সহ সংবাদ সম্মেলন করে গত ২ আগষ্ট ঘটনার দিন থানায় গেলে পুলিশ মামলা না নেয়ার অভিযোগ করেন। সোমবার স্থানীয় সাংবাদিকগণ এ ব্যাপারে ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। ওই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ার ২৪ ঘন্টার আগেই মামলা হয় ও রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের এসআই(এসআই)মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, সোমবার রাতে থানায় মামলা রুজু করা হয়। তিনি পুলিশ ফোর্স নিয়ে শালিশস্থল থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে রুবেলকে গ্রেফতার করেন।
সোমবার দুপুরে স্থানীয় রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই তরুনী তাঁকে রুবেলের বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ওই সময় লাবনীর পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেননি বলে অভিযোগ করেন। সে সাথে জনপ্রতিনিধিদের কাছে তরুনীর পরিবার বার বার ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। ওই তরুনী উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের রাজমিস্ত্রী মো. সিরাজের মেয়ে। রুবেল একই এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে।
ওই তরুনী তাঁর বক্তব্যে জানান, রুবেলের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক আড়াই বছরের। এর মধ্যে আমাদের কথা-বার্তা, দেখা-শুনা হত। বিয়ের কথা বললেই রুবেল আর ক’টা দিন পরে বলে সময় নিত। প্রতিজ্ঞা করে আমাদের আংটি বিনিময় হয়েছে। ঈদ-উল-আযহার আগে ঢাকায় আমাদের বিয়ে হবে বলে আমাকে ঈদের ৪-৫ দিন আগে ঢাকা আসতে বলে।
ঢাকা যাওয়ার জন্য গঙ্গাপুর ল ঘাটে এক লোকের মাধ্যমে ঢাকা যাওয়ার জন্য বিকাশে তিন হাজার টাকা পাঠায়। আমি লে ঢাকা চলে যাই। সদরঘাটে রুবেল আমাকে নিতে আসে। ওই স্থান থেকে আমাকে অসুবিধা আছে বলে আমার নাক-মুখ ঢেকে রাখে। ঢাকার কোন এলাকার একটি খালি বাড়িতে নিয়ে যায় তবে কোথায় এটা জানা সম্ভব হয়নি। বিয়ের কথা বললে সে একসাথে দেশে গিয়ে বিয়ে করবে বলে। ওই বাড়িতে আমি বাঁধা দেয়া সত্তে¡ও সে ৪ দিন আমাকে দৈহিক মিলনে বাধ্য করে। ঈদের আগের দিন আমরা উভয়ে দেশে ফিরে আসি।
ঈদের দিন আমাকে রুবেল তাঁর বাড়িতে যেতে বলে। বিকালে আমি ওই বাড়ি যাই। কিন্তু তাঁর পরিবারের লোকজন আমার দিকে তেড়ে আসলে আমি বাড়িতে চলে আসি। পরদিন সকালে সে ফোনে বলে বাড়ির সবাইকে ম্যানেজ করেছি। তুমি আমাদের বাড়িতে চলে এসো। আমি সরল মনে তাঁদের বাড়িতে যাই।
বাড়িতে ঢোকার পর-পর রুবেল, তাঁর বাবা-মা, ভাই-বোন সহ ৭-৮ জন ছেলে আমার উপর হামলা করে। যার হাতে যা ছিল তা দিয়ে আমাকে মারতে থাকে। এক সময় আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি হাসপাতালে। আমার সারা দেহ রক্ত জমে লাল হয়ে আছে। পরে জানতে পারি স্থানীয় কেরামত হাওলাদার ও সৈয়দ আহমেদ মোল্লা ওই বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় আমাকে আর না পিটানোর অনুরোধ করে ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। পরে কিভাবে যেন খবর শুনে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ আমাদের বাড়িতে আসেন। পুলিশ আসে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হবে বললে পুলিশ চলে যায়। আমরা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মামলা নেননি। চেয়ারম্যানের কাছে বার বার ধর্ণা ধরেও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে তরুনীর বাবা মো. সিরাজ ও মিনারা বেগম উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাঁেদর মেয়ের উপর অত্যাচারের ন্যায় বিচার দাবি করেন।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কেরামত হাওলাদার ও সৈয়দ আহমেদ মোল্লা জানান, আমরা ওই পথ দিয়ে যাবার সময় কান্না আর হৈ-চৈয়ের শব্দ শুনতে পাই। মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে তা এটা না দেখলে বিশ্বাস হত না। আমরা উভয়ে মেয়েটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি। আর না পিটানোর অনুরোধ করি। ঘটনা যা-ই হোক চেয়ারম্যান মেম্বারের শরনাপন্ন হতে বলি।
এ ব্যাপারে কুতুবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ জানান, আমি গিয়ে ওই মেয়েকে আধা অচেতন অবস্থায় পাই। পরে সে জ্ঞান হারায়। তাঁকে প্রচুর মারধর করা হয়েছে।
তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবে ফয়সালার জন্য দিন-তারিখ ধার্য করি। একবার বসার পর আবার মঙ্গলবার(১১ আগষ্ট) ওই বিষয় নিয়ে বসা হবে।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান সাদী জানান, হাসপাতালে আনার পর আঘাতের ফলে ওই রোগীর মাথা ফোলা পাওয়া যায়। এছাড়া পিঠ, মুখ, বাঁ কাধ, গলা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া ছেলা ছিল।
মঙ্গলবার বোরহানউদ্দিন থানার ওসি মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন কৌশগত কারণে আগে মামলা না নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, সোমবার রাতে ওই তরুনীর নানা আব্দুর রব ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামীদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
Leave a Reply