শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোটের পরিধি বাড়ানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে সরকারি দলের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে কুড়িটিরও বেশি রাজনৈতিক দলের। তবে এখনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও শিগগিরই জোট সম্প্রসারণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতারা। গেলো শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত দলটির যৌথসভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপির নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট ‘ইসলামিক ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক ফ্রন্ট এবং মোস্তফা আমীর ফয়সলের নেতৃত্বাধীন জাকের পার্টিকে নির্বাচনী জোট তথা মহাজোটে যুক্ত করার বিষয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। দলে যৌথ সভায়ও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি গেলো ২৬ জুলাই সচিবালয়ে বৈঠক করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। একই দিনে আলাদাভাবে বৈঠক করেন তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে।
তারও আগে গেলো ২৪ জুলাই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয়ে গিয়ে দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে সিপিবি মহাজোটে যোগ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্টতই নাকচ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে তারা পৃথক বাম গণতান্ত্রিক জোটের কার্যক্রমই অব্যহত রাখতে চায়।
এদিকে, গেলো ১৮ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বিএনএ’র আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এ সময় নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বিএনএ জোটের শরিক- তৃণমূল বিএনপি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একমত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া জোটে অংশ নিতে ‘প্রগতিশীল জোট’ এর শরীক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই জোটে আছে জাকির হোসেনের গণফ্রন্ট, সামিনা মতিনের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) এবং মুসলিম লীগ।
এদিকে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টকেও জোটে নিতে চায় আওয়ামী লীগ। তবে বাম শরিকদের আপত্তিতে এতদিন তা হয়নি। ভবিষ্যতে দলটিকে নেয়া হতেও পারে বলে আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানিয়েছেন।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ আরও বেশ কয়েকটি দল নিয়ে মহাজোট হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না অংশ নেয়ায় মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি বেরিয়ে আলাদা নির্বাচনে অংশ নেয়।
এদিকে জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি গেলো ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বলেন, অলরেডি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছে জাকের পার্টি, সাত দলীয় একটা বাম জোট অফিসে এসে একটা আবেদন রেখে গেছে। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে চায়। ইসলামী ফ্রন্টের বাহাদুর শাহ, তিনিও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী ঐক্যে শামিল হতে চান। প্রতিদিনই দুই-একটা দল আবেদন বা দেখা করে তারা তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করছে। তবে আমরা এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছি না। সবার কথা শুনছি। আমাদের নেত্রীর উপস্থিতিতে কার্যনির্বাহী সংসদে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কাকে আমরা জোটে নেব, কাকে নেব না। অলরেডি এদিকে ১৪ দল, ওইদিকে জাতীয় পার্টি আছে।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক ন্যাপের সহকারী সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সরকারি জোটে ক্ষমতার লোভে অনেক দলই আসতে চায়। কিছু দল যোগাযোগও করেছে। সেটা আলাপ আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে, এখনো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। ১৪ দলের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে।
১৪ দলীয় জোটের শরিক গণ-আজাদী লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, জোটের পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে। তবে এটি নির্ভর করছে জোট প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি যদি মনে করেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটের পরিধি বাড়ানো দরকার তাহলে বাড়বে। এখনও এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়া হয়নি। হয়তো জোটের বৈঠকে আলোচনা হবে।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, জোটের পরিধি বাড়বে কিনা, এ বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মধ্যে আছে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করবে। সময় আসুক, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ১৪ দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ১৪ দলের শরিক সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
Leave a Reply