সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্থগিতকৃত ৯টি কেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৯টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
৯টি কেন্দ্রে পুনঃভোটে বিজয়ী কাউন্সিলররা হলেন- ১নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আমীর বিশ্বাস, ১৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের তৌহিদুল ইসলাম ছাবিদ। ১৭নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের গাজী আক্তারুজ্জামান হিরু, ২২নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আনিছুর রহমান দুলাল, ২৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার ও ২৪নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আনিছুর রহমান শরীফ।
এছাড়া তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের দুটিতে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত-৫ (১৩.১৪.১৫) নং ওয়ার্ডে ইসমত আরা লাভলী, সংরক্ষিত-৬ (১৬.১৭.১৮)নং ওয়ার্ডে আ’লীগের গায়েত্রী সরকার পাখি ও সংরক্ষিত-৯ (২৪.২৫.২৬) নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেত্রী সেলিনা বেগম পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে শনিবার সকালে বৃষ্টি বিঘ্নিত আবহাওয়ার মধ্যে ১, ১৪, ১৭, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহন শুরু হয়। এর মধ্যে ১৭ ও ২২ ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্র হলেও বাকি ওয়ার্ড গুলোর ১টি করে কেন্দ্রে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ২৫নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এম জাকির হোসেন ৩০ জুলাইর ভোটে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় ওই কেন্দ্রটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হয়নি।
শুধুমাত্র সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ভোট হয়েছে ওই ওয়ার্ডটিতে। তবে সকালে বৃষ্টির কারনে ৯টি কেন্দ্রিই ভোটারদের উপস্থিত কম ছিলো। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কেন্দ্র গুলোতে ভোটার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। পুনঃভোট গ্রহন অনুষ্ঠানে ভোটারদের সর্বাধিক উপস্থিতি ছিলো ১৪নং ওয়ার্ডের ফারিয়া কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে। অবশ্য ৯টি কেন্দ্রের কোনটিতেই ভোটারদের শতভাগ উপস্থিতি ছিলো না বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান।
তিনি জানান, ৯টি কেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহনের লক্ষ্যে শুক্রবার রাত থেকেই র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তা বলয়ে ঘিরে ছিলো ভোট কেন্দ্র সহ নির্বাচনী এলাকা। ভোট গ্রহনের শুরু থেকে ভোট গননার শেষ সময় পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন করে মোট ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মনিটরিং এর দায়িত্বে ছিলেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ছিলো দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য। কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে পুলিশের একজন পরিদর্শকের নেতৃত্বে ছিলো পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ২৮ জন সদস্য। এছাড়া পুলিশের আরো দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ছিলো। তাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার কারনে ভোট গ্রহনকে কেন্দ্র করে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ১৭নং ওয়ার্ডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট চলাকালিন অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী মো. ইকবাল হোসেন নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দীপক কুমার দাস এর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম। জরিমানা দেয়া ইকবাল হোসেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুরের নয়নপুর এলাকার মো. সবুজ মোল্লার ছেলে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী বলে জানাগেছে।
এছাড়াও ১৭নং ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থীত সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী গায়েত্রী সরকার পাখি’র পক্ষে জাল ভোট পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মজিদা বোরহান এর কর্মী সমর্থকরা। তবে এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী প্রিজাইডিং অফিসারের।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে ৯টি কেন্দ্রে অনিয়মের প্রমান পায়। তাই ওই ৯টি কেন্দ্রে পুনঃভোট গ্রহনের নির্দেশনা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী গতকাল ১৩ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের দেয়া নির্ধারিত দিনে ৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ন পরিবেশে পুনঃভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর পূর্বে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলিয়ে ৩১টি ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর গেজেট ভুক্ত করে সরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষনা করেন। শনিবার পুনঃভোটে নির্বাচিতদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রেরন করা হবে। সেখান থেকে দু’একদিনের মধ্যেই ৬ সাধারণ ও ৩ সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের নাম গেজেভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান।
Leave a Reply