বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৪১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বরিশাল মহানগরীতে বিভিন্ন স্পোটিং ও সামাজিক ক্লাবের আড়ালে চলছে রমরমা জুয়া আর মাদক ব্যবসা। প্রতি রাতে এসব ক্লাবে চলছে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে এমনই একটি ক্লাবে অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ এর নিয়ন্ত্রিত ‘নবজাগরণ সংঘ’ নামের ওই ক্লাবে অভিযান চালিয়েছে এক কেজি গাঁজা, ১ বোতল মদ, জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি ও জুয়া খেলার দুই হাজার ৬শ টাকাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে তারা।
আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে নগরীর নাজিরের পুল এলাকায় প্যানেল মেয়ার রফিকুল ইসলাম খোকন ওরফে মামা খোকনের ওই ক্লাবটিতে অভিযান চালায় মডেল থানা পুলিশ। এর আগে রোববার রাতে লক্ষাধিক টাকা সহ নূরিয়া স্কুল থেকে আটক করা হয় আরো ৮ জনকে।
আটকৃকৃতরা হলো- নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মোতালেব হাওলাদারের ছেলে নূরুজ্জামান (৫০), কাউনিয়া সাবান ফ্যাক্টরির মোহাম্মদ আলীর ছেলে মানিক হাওলাদার (৪০), ভাটিখানা এলাকা জবেদ আলীর ছেলে সুলতান হাওলাদার (৪৫), সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জব্বার আলী’র ছেলে হারুন অর রশিদ (৪০) ও কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোডের বাসিন্দা সুরেন্দ্র নাথ দাস এর ছেলে পরীক্ষিত নাথ দাস (৫৫)।
তথ্য নিশ্চিত করে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, দেশব্যাপী মাদক, সন্ত্রাস ও জুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে বরিশালেও এটি তারই একটি অংশ।
তিনি বলেন, ‘রোববার রাত থেকে জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের শুরুতেই রাতে নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় নুরিয়া স্কুলের দ্বিতীয় তলায় অভিযান করে ৮ জুয়ারিকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে বিসিসি’র সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন এর ভাতিজা সোয়েব আহসান সেজান রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে এক লাখ ৯ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
ওই রাতে আটককৃতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনে মামলা করে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ‘নবজাগরণ সংঘ’ থেকে আটকের ঘটনায় মামলা হবে। এই ঘটনার সাথে ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম খোকন এর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও তাকে মামলার আসামি করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।
অপরদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কয়েকটি দায়িত্বশিল সূত্র জানিয়েছে, ‘মহানগরীর বেশ কয়েকটি ক্লাব রয়েছে। যেখানে প্রতিনিয়ম জুয়ার আসর বসছে। সেখানে মাদক সেবন এমনকি মাদক ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে।
যার মধ্যে নগরীর নাম করা জিলা স্কুল মোড়ের ‘বরিশাল ক্লাব লিমিটেড, সদর রোডের ক্রীড়া সংগঠন মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত আউটার স্টেডিয়ামে সোনালী অতিত ফুটবল ক্লাব, নাজিরের পুল নবজাগরণ সংঘ, কালুশাহ সড়ক রহিম সেবা সংঘ, নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব, পুলিশ লাইন রোডের আমবাগান ক্লাব’ অন্যতম।
এছাড়াও নগরীর পোর্ট রোড মৎস্য আড়ৎ, চাঁদমারী বিটিসিএল (টিএন্ডটি) শ্রমিক লীগ ক্লাব, রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকার রূপাতলী হোটেল, ১ তলা লঞ্চ ঘাট, চাঁদমারী ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল সংলগ্ন গোলাম মাওলাদার ময়দার মিলের পেছনে, কেডিসি বালুর মাঠ বস্তির জালাল এর বাসা, প্যারারা রোডের একটি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালসহ নগর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে জুয়ার আসর বসছে।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব ক্লাবে জুয়ার আসর বসছে। যেখানে প্রতি রাতে তাসের মাধ্যমে ‘রামি, পোস, নাইন কার্ড সহ বিভিন্ন জুয়ার আসনে লাখ লাখ টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে। তবে ইতিপূর্বে ক্লাব সহ জুয়ার আসর গুলোতে রহস্যজনক কারনে পুলিশের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। তবে দেশব্যাপী জুয়ার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারনে বরিশালেও ওইসব জুয়া এবং মদের আসরে অভিযানে নেমেছে নগর পুলিশ।
সোমবার দুপুরে নগরীর নথুল্লাবাদ লুৎফর রহমান সড়কে উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মোকতার হোসেন বলেন, ‘জুয়া এবং মাদক সহ সকল অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। খুব শিঘ্রই এর ভালো ফলাফলও আমরা সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে আসতে পারব।
Leave a Reply