বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:২০ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনা ঠেকাতে দুই মাসের বেশি বন্ধ ছিল বাস চলাচল। ১ জুন থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিয়ে ভাড়া বাড়ানো হয় ৬০ শতাংশ। এখন মালিকরা বলছেন, বাড়তি ভাড়া আদায় করেও লোকসান হচ্ছে। বাস সার্ভিস অব্যাহত রাখতে তারা সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি দাবি করছেন। এরই মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ভর্তুকি চেয়ে আবেদন করেছেন বাস মালিকরা। বিষয়টি আমলে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ভর্তুকির প্রস্তাব করেছে মহাসড়ক বিভাগ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ে দেশে যত বাস ও মিনিবাস চলাচল করত, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মাত্র ৩০ শতাংশ পরিচালনায় আছে। দূরপাল্লার বাসে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকছে। সিটি সার্ভিসে সকালবেলা অফিস শুরুর আগে কিছু যাত্রী পাওয়া যায়। এরপর সারাদিন বলতে গেলে এক ধরনের ফাঁকা বাস চালাতে হয়। সন্ধ্যার আগে আগে একটা ট্রিপে কিছু যাত্রী হয়। এরপর আর যাত্রী মেলে না। এভাবে চলতে থাকলে একটা পর্যায়ে গিয়ে আর গাড়ি চালানো সম্ভব হবে না। যাত্রী কম থাকায় অনেক মালিক যেমন বাস চালুই করেননি, তেমনি চালুর পর বাস পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক মালিক।
বাস মালিকরা বলছেন, দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটির পর যখন বাস চালু করা হয়, তখন প্রথম কিছুদিন মোটামুটি যাত্রী পাওয়া যেত। কিন্তু সপ্তাহখানেক পরই কমতে শুরু করে যাত্রী সংখ্যা। এখন তা কমতে কমতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ৪০ আসনের একটি বাসে ১০ জন যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির আগে কোনো আসনই খালি থাকত না। পাশাপাশি প্রচুর দাঁড়ানো যাত্রী পাওয়া যেত। বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, একটা ট্রিপ শেষ করে বাসের জ্বালানি খরচই তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর সঙ্গে চালক-শ্রমিকদের বেতন রয়েছে। বাসের রক্ষণাবেক্ষণ আছে। বিভিন্ন ধরনের চাঁদা রয়েছে। সব মিলিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছেন মালিকরা। এমন অবস্থায় বাস পরিচালনা স্বাভাবিক রাখতে ভর্তুকি চেয়েছেন মালিকরা।
ভর্তুকি চেয়ে মালিকদের করা ওই আবেদনটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে জমা দেয়া হয় চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। তবে ওই আবেদনে ভর্তুকির কোনো পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। মালিকরা চান, পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হবে তা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ই ঠিক করে দিক।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তুকি চেয়ে বাস মালিকদের করা আবেদনটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মালিকদের ভর্তুকি দেয়া হবে কিনা, হলেও কী পরিমাণে দেয়া হবে তা দুই মন্ত্রণালয় ঠিক করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু সঙ্গে তো ৫০ শতাংশ যাত্রী কম তুলতে বলেছে। এভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে, ভাড়া বাড়িয়ে বাস মালিকদের আদতে কোনো লাভ হয়নি। শুরু থেকেই আমরা সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস পরিচালনা করছি। ১ জুন যখন বাস চলাচল শুরু হয়, তখন প্রথম সপ্তাহটা মোটামুটি ভালোই ছিল। পরের সপ্তাহ থেকে যাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। জুনের তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে গিয়ে যাত্রীর সংখ্যা বলতে গেলে ১০ শতাংশের নিচে চলে এসেছে।
যাত্রী কমার পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাধারণ ছুটির পর নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন জেলায় লকডাউন দিয়েছে সরকার। একইভাবে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে লকডাউন দেয়া হচ্ছে। লকডাউনে থাকা এলাকায় বাস পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সব মিলিয়ে খুব খারাপ সময় পার করছেন বাস মালিকরা। সরকারি প্রণোদনা ছাড়া বাস সেবা খুব বেশিদিন চালু রাখা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
যাত্রী না থাকায় নিয়মিত লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনও। সংগঠনটির সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ দাবি করেন, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন রুটের বাসগুলোতে ৭০ শতাংশের মতো আসন ফাঁকা থাকছে। যাত্রী না থাকায় বাসের শিডিউলও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে লোকসান দিতে থাকলে বাস মালিকরা শিগগির পথে বসার দশায় চলে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
Leave a Reply