শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৩ অপরাহ্ন
বানারীপাড়া প্রতিনিধি॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জামায়াত কানেকশনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যপারে সম্প্রতি বানারীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও হানিফ মিয়া নামের এক ব্যক্তি বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ব্যাংকের হিসাববিবরণী সহ পৃথক ওই অভিযোগের অনুলিপিও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বানারীপাড়ার সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবী নূরুল আলম তার নামে -বেনামে থাকা দুই-তিন কোটি টাকার এফডিআর ভাঙিয়ে তার সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দিতে চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন এতো টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রাখলে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট হয়ে যাবে এবং আপনার ক্ষতি হবে। কারণ আপনার আয়ের সঙ্গে ওই টাকার মিল নাই। আমাকে দুই লাখ টাকা দিলে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবো।
নিজেকে রক্ষায় ওই গ্রাহক শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমানকে দুই লাখ টাকা উৎকোচ দিলে ওই গ্রাহকের নামে-বেনামে ৬টি পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করে দেন। পেমেন্ট অর্ডার ও এফডিআর ইস্যুর সময় মুরি বহিতে গ্রাহকের স্বাক্ষর করতে হয় এবং প্রদানের সময় মুরির স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে প্রদান করতে হয়। ফলে কার স্বাক্ষর দিয়ে বেনামের পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করা হলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এছাড়া তিনি সোনালী ব্যাংকের আড়ৎদার পট্টী শাখা ব্যবস্থাপক থাকাকালীণ তার প্রতিবেশী সান্টু নামের এক ব্যক্তিকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে একটি বড় লোন দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তার বিরুদ্ধে বানারীপাড়া শাখা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে কনজুমার ঋন দেওয়া ও উৎকোচ ব্যতিরেকে কোন ঋন প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি সোনালী ব্যাংকের অদূরে বানারীপাড়া পৌর শহরের ৬ নং ওয়ার্ডে শ্বশুর বাড়িতে ৪৫ লাখ টাকার গৃহ নির্মাণ ঋন নিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকার ৪তলা বিশিষ্ট আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমানের শ্বশুর বানারীপাড়া পৌর জামায়াতের সাবেক আমির ও উপজেলা জামায়াতের বর্তমান রোকন রফিক উদ্দিন মিয়া ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দুই দফা হাজতবাস করেন।
তার শ্যালক পৌর শিবিরের সাবেক সভাপতি সাব্বির আহম্মেদের বিরুদ্ধে ককটেল বিষ্ফোরণ,পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগে মামলা এবং শাশুড়ি ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০/১২ জনের মহিলা জামায়াত টিম নিয়ে নির্বাচনের সময় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ও অপ-প্রচার চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
তার উপস্থিতিতে বিভিন্ন সময় শ্বশুর বাড়িতে জামায়াতের সরকার বিরোধী গোপন বৈঠক হওয়া ও সেই বৈঠকের খরচ বহনের অভিযোগ রয়েছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী ও শ্যালকের শেল্টারদাতা ও জামায়াত কানেকশনের কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে জামায়াত কানেকশনের কারণে সাইদুর রহমানকে ইলেকশন ডিউটি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বানারীপাড়ার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সোনালী ব্যাংকের বরিশালের জিএম’র সঙ্গে দেখা করে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াত সমর্থক শাখা ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ভাতার টাকা নিতে তাদের লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে তাকে অন্যত্র বদলীর দাবী জানান।
জানতে চাইলে বানারীপাড়ার সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার দাবী করে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার পরে কেন জামায়াত পরিবারে বিয়ে করলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
Leave a Reply