বর্জ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা চামড়া শিল্পনগরীতে Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




বর্জ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা চামড়া শিল্পনগরীতে

বর্জ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা চামড়া শিল্পনগরীতে




চলতি মাসের শেষভাগেই ঈদুল আজহা। আসন্ন ঈদে প্রায় সোয়া কোটি পশু কোরবানি হতে পারে। এই পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করা হবে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে। সেখানে দ্বিগুণের বেশি সক্ষমতা নিয়ে ১১৩ ট্যানারি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে প্রস্তুত। কিন্তু বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চামড়ার বর্জ্য পরিশোধন নিয়ে। বর্তমানে পশুর সীমিত চামড়ার বর্জ্য নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্যানারিগুলোকে। কোরবানির চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু হলে অতিরিক্ত বর্জ্যে চামড়া শিল্পনগরী এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তা ও সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) কর্মকর্তারা।

সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে ১৫৫ ট্যানারি প্লট বরাদ্দ পেলেও এখনও সব কারখানা চালু হয়নি। দুটি ট্যানারি মামলার কারণে বন্ধ থাকলেও ৪০টি ট্যানারি নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি। চালু হয়েছে ১১৩টি ট্যানারি। গত বছরের এপ্রিল থেকে ঢাকার হাজারীবাগে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর পর সাভারে উৎপাদন শুরু করলেও বেশির ভাগ ট্যানারি শুধু কারখানার ওয়েট ব্লু (পরিশোধনের প্রাথমিক পর্ব) অংশ চালু করেছে। চূড়ান্ত প্রক্রিয়াকরণ করছে অল্পসংখ্যক ট্যানারি। আর এসব

ট্যানারিতে স্থাপন করা সিইটিপির চারটি মডিউলে প্রতিদিন ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য শোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। এখন ঈদের আগেই প্রতিদিন ২৩ থেকে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে। গত ২৮ জুলাই প্রায় ২৬ হাজার কিউবিক মিটার ও ২৩ জুলাই ২৮ হাজার ৫৮০ কিউবিক মিটার বর্জ্য সিইটিপিতে এসেছে। ঈদের পর ট্যানারিগুলোতে পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে সিইটিপি সক্ষমতার দেড়গুণ বেশি বর্জ্য আসবে। এই অতিরিক্ত বর্জ্য পরিশোধনে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন যে সময় হাতে আছে তাতে দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে না। ফলে শিল্পনগরী বর্জ্যের স্তূপে পরিণত হতে পারে বলে মনে করছেন সিইটিপি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

চামড়া শিল্পনগরী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চালু কারখানাগুলো এখন সক্ষমতার অর্ধেক চামড়া প্রক্রিয়াজাত করছে। এ অবস্থায় বর্তমানে চামড়ার বর্জ্যেই ডুবে আছে ড্রেন। পাইপ লাইনের ম্যানহোল থেকে বর্জ্য উপচে পড়ছে সড়কে। শিল্পনগরীর পূর্ব-দক্ষিণ কর্নারে সিটি লেদার ট্যানারির সামনের সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এ সড়কে ম্যানহোল থেকে উপচে পড়ে বর্জ্যের পানি পুরো সড়কে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এলাকায় ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। প্রগতি লেদারের বিপরীত দিকের আহসান হাবিব ট্যানারির পাশের সড়কও বর্জ্যে ডুবে আছে। এ ট্যানারির সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া নালা বর্জ্যে ভরে আছে। একই অবস্থা শিল্পনগরীর বেশিরভাগ নালায়। কোথাও বর্জ্যে ভরা আবার কোথাও মাটি, বালি ও চামড়ার টুকরায় আটকে আছে। এসব ট্যানারির কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে অস্থায়ী ডাম্পিং ইয়ার্ডে (বড় পুকুরে)।

নদীর পাড়ে খোলা জায়গায় পুকুরে ফেলা এই বর্জ্য নিয়ে ঘটেছে ভয়াবহ কাণ্ড। বর্জ্যে ভরা এ পুকুরের নদীর পাশের পাড় গত জুন ও জুলাই মাসে দু’বার কেটে সরাসরি বর্জ্য ফেলা হয়েছে নদীতে। নদীতে এই বর্জ্য ফেলার জন্য প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শিল্পনগরী এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলায় আশপাশে বাস করা দায়। বারবার প্রতিবাদ জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ষায় নদীর পানি স্বাভাবিক হলেও সরাসরি বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

একাধিক ট্যানারির মালিক ও শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, শিল্পনগরীতে বিসিকের তত্ত্বাবধানে সিইটিপি চালু হলেও প্রায়ই ট্যানারিগুলোর তরল বর্জ্য নির্দিষ্ট পাইপলাইনের ঢাকনা উপচে সড়কে এসে পড়ছে। সিইটিপি সার্বক্ষণিক চালু রাখা হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কোরবানির পর চামড়া শিল্পনগরীতে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। তারা বলেন, ডাম্পিং ইয়ার্ড গত এক বছরের বেশি সময় ময়লার স্তূপে পরিপূর্ণ ছিল। হঠাৎ করে গত জুনে নদীর পাড় দিয়ে বর্জ্য সরাসরি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরে বাঁধ দিলেও গত জুলাই মাসে আবারও একইভাবে বাঁধ কেটে ইয়ার্ডের বর্জ্যের সঙ্গে খরচ বাঁচাতে সিইটিপির বর্জ্যও নদীতে ফেলা হয়। এখন কোনোমতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। তবে কোরবানির পশুর বর্জ্য ফেললে ওই বাঁধ ভেঙে আবারও নদীতে বর্জ্য যাবে। এ ছাড়া শিল্পনগরীর ভেতরের সড়কের বেশিরভাগ খানাখন্দে ভরা। গত রমজানের আগে এই সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হলেও এখনও শেষ হয়নি। এবার কোরবানির পশুর চামড়াবোঝাই ট্রাক নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হবে বলে জানান তারা।

গত সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কাছে কোরবানির চামড়ার বর্জ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন উদ্যোক্তারা। এর আগে গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহা-পরবর্তী ট্যানারির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে করণীয় বিষয়ে বৈঠকে শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা দেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সিইটিপির তরল বর্জ্যের লাইনে ট্যানারি মালিকরা কঠিন বর্জ্য ফেলে বন্ধ করে রাখছেন। এটি সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। ডাম্পিং ইয়ার্ডের বেড়িবাঁধ দিয়ে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়া বন্ধ করতে বাঁধ সঠিকভাবে মেরামতের নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যথাসময়ে সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করার তাগিদও দেন শিল্প সচিব।

চামড়া শিল্পনগরীরর সাবেক প্রকল্প পরিচালক ও সিইটিপির সমন্বয়ক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সিইটিপির বর্জ্য পরীক্ষা করে বুয়েটের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্জ্য পরিশোধন আদর্শ মানের কাছাকাছি এসেছে। ভারত, চীন ও আমেরিকার মান অনুযায়ী পরিশোধন করা হবে। তিনি বলেন, সিইটিপির সক্ষমতা আছে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধনের। এখনই মাঝেমধ্যে এর চেয়ে বেশি হচ্ছে। ঈদের পরে বর্জ্য দ্বিগুণের বেশি হবে। তখন যে নির্দেশনা আসবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেশি বর্জ্য সিইটিপিতে এলে সঠিকভাবে পরিশোধন ছাড়াই ছেড়ে দিতে হবে। বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ৪ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়। ঈদের পরে সঠিকভাবে পরিশোধন করা হলে শিল্পনগরীর মধ্যে ড্রেন থেকে বর্র্জ্য সড়কে উপচে পড়বে। তিনি আরও বলেন, এখনও সব ট্যানারি চালু হয়নি। সব ট্যানারি চালু হলে এই সিইটিপি দিয়ে সম্পূর্ণ বর্জ্য পরিশোধন সম্ভব হবে না। এ জন্য অতি সত্বর আরেকটি বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন সিইটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ফিনিশ্‌ড লেদার, লেদার গুডস, ফুটওয়্যার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন মাহিন বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তর হলেও এখন পর্যন্ত অনেক বিষয়ের সমাধান হয়নি। ফলে এবার বর্জ্য নিয়ে বড় বিপর্যয় হবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সবাই মিলে সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্জ্যের দুরবস্থা হলে ট্যানারি মালিকরা দায় নেবেন না। কঠিন বর্জ্যের জন্য বিদ্যমান ডাম্পিং ইয়ার্ডের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে দূষণের ক্ষতি থেকে রেয়াই পেতে চান তারা। দূষণের কারণে এবার রফতানিতে ধস নেমেছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, শিল্পনগরীতে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। তার ওপর বর্জ্যের পানি রাস্তায় পড়ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সড়কের সমাধান কোরবানির ঈদের আগে না হলে এবার সংকটে পড়তে হবে। তিনি বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান সিইটিপি নিয়ে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সময় বর্জ্য পরিশোধনে বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এভাবে ঈদের পরে চলতে থাকলে গত বছরের চেয়ে এবার ভয়ঙ্কর বর্জ্য দূষণের কবলে পড়তে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD