রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
থানা প্রতিনিধি:বরিশালের আগৈলঝাড়ায় অপচিকিৎসা, প্রসুতির মৃত্যু ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সেই দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। চিকিৎসকদের অপচিকিৎসায় অপারেশনের টেবিলে এক গৃহবধূর মর্মান্তিক মৃত্যু ও মৃত্যুর পরে বরিশালে প্রেরণের অভিনব নাটকের সংবাদ বুধবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পর স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ নজরে পরে সংবাটি। এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লা তাৎক্ষনিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাসকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন।
এমপির নির্দেশ পেয়ে বুধবার বারোটার দিকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস পুলিশ ফোর্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে অপচিকিৎসালয় খ্যাত শহরের ফুল্লশ্রী বাইপাস এলাকায় অবস্থিত দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসাপতালে অভিযান পরিচালনা করেন।
আদালতের অভিযানের সময় ১০ বেডের ওই হাসপাতালে তিন জন এমবিবিএস চিকিৎসক, ৬ জন প্রশিক্ষিত নার্স, ল্যাবরেটরী টেকনিশিয়ানসহ প্রয়োজনীয় জনবল কাঠোমো, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের সনদপত্র না থাকা সর্বোপরি রোগীদের ভুল ও অপচিকিৎসা প্রদানসহ আনারি চিকিৎসকের “এনেস্থাপিকফেইলর” এর কারণে প্রসুতি মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন ম্যাজিষ্ট্রেট।
এসময় আদালত সেখানে ভর্তি রোগীদের উপজেলা সরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরেরও নির্দেশ দেন। অভিযানের সময় ওই হাসপাতালটিতে কোন চিকিৎসক, নার্স ও ল্যাবরেটরী টেকনোলজিষ্টের উপস্থিতি পায়নি ভ্রাম্যমান আদালত। তাছাড়া ৩১ জানুয়ারি অন্তসত্তার ভর্তি রেজিষ্ট্রারে কোন চিকিৎসকেরও নাম দেখতে পায়নি আদালত। এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন ফোনে আদালতকে এ্যানেসথেসিয়রা কোন সনদপত্র তার নেই জানিয়ে সত্যতা স্বীকার করেছেন।
আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, হাসপাতাল পরিচালক, স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের অনুরোধে বুধবার বিকেল চারটার মধ্যে হাসপাতাল পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে পরবর্তি সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও জানান তিনি।
প্রসংগত, ৩০ জানুয়ারি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য বাহাদুরপুর গ্রামের লিটন অধিকারীর স্ত্রী অন্তসত্তা পলিকে দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করে ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (গাইনী) ডা. বিপুল বিশ্বাস। এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় কর্মরত ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন। সন্ধ্যা ৭.১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায় পলি। এর পর মৃত পলিকে নিয়ে অভিনব নাটকে নামে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর অভিযানের আগে বুধবার সকালে হাসপাতালের অপচিকিৎসায় মৃত পলির স্বজনদের ম্যানেজ করে তাদের কাছ থেকে একটি মুচলেকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনার সময় ম্যাজিষ্টেটের সাথে ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মনিরুল ইসলাম, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শুকলাল সিকদার, এসআই আব্বাসসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
একই দিন একই আদালত উপজেলা সদরের ডিজিটাল ডায়াগনিষ্ট সেন্টারে অভিযান চালিয়ে মেডিকেল প্রাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরী (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২(৪) ধারায় ২ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানের টের পেয়ে উপজেলা সদরের জনসেবা ডায়গনিষ্টিক সেন্টার বন্ধ করে মালিক সোহেল মিয়া পালিয়ে যায়।
Leave a Reply