সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
শামীম আহমেদ॥ বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলে কোনো কারণ ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। একটু হাওয়া বইলেই বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ, আঁধারে ডোবে তিন লাখ পরিবার। ২৪ ঘণ্টায় ১৫-২০ বার লোডশেডিং হয়।
শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ আবাসিক গ্রাহকদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। অথচ উন্নত সেবা নিশ্চিত করাসহ চুরি ও দুর্নীতি বন্ধের অঙ্গীকার নিয়েই ২০০৫ সালে পিডিবি’র অধিভুক্ত কোম্পানি হিসেবে ওজোপাডিকো যাত্রা শুরু করেছিল।
‘সিষ্টেম লস’ এর নামে বিদ্যুৎ চুরি বাহুলাংশে কমিয়ে আনা গেলেও মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আন্তরিক ও মনযোগী করতে পারেনি ওজোপাডিকো। এমনকি কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কোনো কোনো কর্মকর্তা নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঢাকায় অবস্থান করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এসব কর্মকর্তা কখনোই গ্রাহকদের অভিযোগ দূরের কথা, তাদের কাছে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌঁছার বিষয়েও কোনো খোঁজ খবর রাখার সময় পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে দক্ষিণাঞ্চলেও পিডিবি’র কোম্পানিটির গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ আজো নিশ্চিত হয়নি।
গত এক দশকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও ওজোডিকো’র বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। কিন্তু সেবার মান সেই তলানিতেই রয়ে গেছে।
নগরবাসী এক্ষেত্রে নিজেদেরকে পুরনো দিনের পাঠশালার ছাত্র বলেই মনে করেন। এখন থেকে কয়েক দশক আগে যেমন আকাশে মেঘ দেখে গ্রামের পাঠশালাগুলো ছুটি দিতে হতো, তেমনি এখনো মেঘের গর্জন শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
নগরীর রূপাতলী ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাব-স্টেশন থেকে ৪টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনের মাধ্যমে মহানগরীর প্রায় ২৫টি ১১/.০৪ ফিডারের লক্ষাধিক গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে দুটি বিতরণ বিভাগ।
৩০ বছরের পুরনো ১১ কেভি ও .০৪ কেভি সরবরাহ ও বিতরণ লাইন এর আনুসঙ্গিক বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ ৩৩ কেভি লাইনগুলো এখনো নাজুক। অনেক গ্রাহকই অনুমোদিত লোড অপেক্ষা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় ট্রান্সফর্মার ও লাইনের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। ফলে ঘন ঘন ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে।
তবে বেশিরভাগ ফিডারের এইচটি ও এলটি লাইনসহ ট্রান্সফর্মারগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণসহ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেও সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নগরীর মেডিকেল ফিডারসহ একাধিক ফিডার ওভার লোডেড হয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
একই অবস্থা পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী জেলা সদরেও। সর্বত্রই নাজুক বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ওজোপাডিকো’র গ্রাহকদের দুর্ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি করে চলেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে শিল্প উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য।
পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারি অর্থায়নে পশ্চিমজোনের ২১টি জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওজোপাডিকো। তবে কোনো প্রকল্পের কাজই সময়মত শেষ হচ্ছে না।
কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
ওজোপাডিকো’র বরিশাল সার্কেলের ডিজিএম জানান, গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোম্পানি সবসময়ই সজাগ রয়েছে। আগামী শীতে সব ফিডারগুলো পরিপূর্ণভাবে রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বরিশাল, খুলনা ও গোপালগঞ্জ সদরের সব ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন ভূগর্ভস্থ ক্যাবলে স্থানান্তরের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
Leave a Reply