শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বরিশালের মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালটিতে রোগী নেই বললেই চলে অথচ পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ক্লিনিকে রোগীর দীর্ঘলাইন দেখা গেছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে অন্তত ২০-২৫ জনের একটি দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব দালালের হাতে উপজেলার সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বেশিরভাগ রোগী এখানে ভর্তি হতে পারে না। নানা অজুহাতে তাদের শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানো হয়।
কেউ কেউ কৌশলে ভর্তি হলেও তাদের ঠিকমতো চিকিৎসা হয় না। দেয়া হয় না কোন ওষুধ। বাধ্য হয়ে বাইর থেকে ওষুধ কিনে নিতে হয়।
লোকবল নেই এই অজুহাতে কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে আছে। বন্ধ আছে প্যাথলজি কার্যক্রম। পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটার থাকলেও রোগীদের কোনো কাজে আসে না।
স্থানীয়রা জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকদের চুক্তি রয়েছে। রোগী পাঠালে সেখান থেকে অনেক টাকা পান চিকিৎসকরা। সেজন্য রোগীদের সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইয়েদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সিন্ডিকেট সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
নতুন কোনো চিকিৎসক এলে সিন্ডিকেটের কথামতো চলতে হয়। কথা না শুনলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এতে কাজ না হলে বদলি করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর ধরে সাইয়েদুর রহমান মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন সদর রোড এলাকায়। এর আগে অনিয়মের অভিযোগে বরিশালের হিজলা উপজেলায় ও চট্টগ্রামে তাকে বদলি করা হয়েছিল। তবে কয়েকদিনের মধ্যে তদবির করে পুনরায় মুলাদীতে যোগ দেন তিনি।
তিন বছর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি পান সাইয়েদুর রহমান। এরপরও তিনি একই কর্মস্থলে থেকে গেছেন। মুলাদী শহরে তিনি ও আরো দুইজন চিকিৎসক মিলে ‘ফেয়ার ক্লিনিক’ নামে একটি ক্লিনিক গড়েছেন। ওই ক্লিনিকের পরিচালক পদে রয়েছেন তিনি।
তার সব চিন্তা-ভাবনা ওই ক্লিনিক ঘিরে। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের নিজের ক্লিনিকে পাঠান তিনি। তারপর সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দেন সাইয়েদুর রহমান।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দালালদের উৎপাত নিত্যদিনের ঘটনা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চোখে পড়ে দালালদের রোগী নিয়ে টানাটানির দৃশ্য। তাদের বাঁধা পেরিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের কাছে কোনো রোগী পৌঁছাতে পারে না।
জানা যায়, বর্তমানে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাত্র ছয়জন রোগী রয়েছেন। বাকি ৪৪টি শয্যা খালি। অথচ পাশে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিকে রোগীর প্রচন্ড ভীড় দেখা গেছে।
এদিকে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলেও অদৃশ্য কারণে তা স্থাপন না করে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ফেলে রেখে অকেজো করে দেয়া হয়েছে। টেকনিশিয়ান না থাকায় ২০১৭ সাল থেকে প্যাথলজিতে কোনো প্রকার পরীক্ষা হচ্ছে না। চার মাস আগে হাসপাতালে একজন ডেন্টাল সার্জন যোগদান করলেও ডেন্টাল ইউনিট না থাকায় রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, রোগীদের নিয়ে দালালদের কিছুটা উৎপাত রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় দালালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এখন দালালের উৎপাত কমে গেছে।
কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ফেলে রাখার বিষয়ে ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছিল। তখন নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি। তাই যন্ত্রপাতি স্থাপন করা যায়নি। নতুন ভবনে যন্ত্রপাতি স্থাপন করার জন্য বলা হয়েছে। শিগগিরই যন্ত্রপাতি স্থাপন করে অপারেশন থিয়েটার ও প্যাথলজি কার্যক্রম চালু করা হবে।
বেসরকারি ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি-না জানতে চাইলে ডা. সাইয়েদুর রহমান বলেন, বিকেলে হাসপাতালের সামনের একটি চেম্বারে রোগী দেখি। আমি কোনো ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। মুলাদী শহরের বাসিন্দা আমি। তাই এলাকার সবাই আমাকে চেনেন এবং সম্মান করেন। নিজ এলাকায় থাকায় অনিয়ম দূরের কথা কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইয়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।
Leave a Reply