বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মিথ্যা পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক সুবিধা নিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা (জেকেজি) হেলথ কেয়ার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখিয়ে হুমকি দেওয়াসহ দুর্ব্যবহার করতেন।
করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই সনদ দেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে সোমবার আশকোনা থেকে হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে।
জেকেজি’র অনুমোদন বাতিল
কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ, কেন্দ্র স্থাপন ও প্রশিক্ষণে কাজ করে আসা জেকেজি হেলথ কেয়ারের অনুমোদন বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জে কার্যক্রম বন্ধ
করোনার রিপোর্ট জালিয়াতি ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগে শীর্ষ কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে জেকেজি হেলথ কেয়ারের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মো. ইমতিয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জেকেজির সকল কার্যক্রম স্থগিত করে বন্ধের নির্দেশ দেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেকেজি হেলথ কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানটি নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ও এম ডব্লিউ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করছেন। আপনাদের নমুনা সংগ্রহের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির মতামত চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রকার সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জেকেজি হেলথ কেয়ারের সন্দেহজনক করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করা হল।
রিমান্ডে জেকেজি’র সিইও আরিফসহ ৫
বুধবার রাতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, জেকেজি) হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল ইসলামসহ পাঁচকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।
জেকেজি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আরিফুলের স্ত্রী ডা. সাবরিনা
জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আরিফুলের স্ত্রী ডা. সাবরিনা চৌধুরী জানান, আদর্শের কথা চিন্তা করেই নাকি তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
ওই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, যদি কেউ দোষ করে থাকে তার প্রমাণ সাপেক্ষে অবশ্যই সাজা হবে! হওয়াই উচিত।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে যোগযোগ করা হলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) কার্ডিয়াক সার্জন সাবরিনা চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাবরিনা চৌধুরী জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা প্রভাব খাটাত আরিফুল
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা প্রভাব খাটিয়ে কৌশলে অনৈতিক কাজ হাতিয়ে নিত জেকেজি’র সিইও আরিফুল চৌধুরী।
আরিফুল অনেক সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেশ কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি দিয়ে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখিয়ে নিজেদের অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছিল । তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাড়া না দেওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্বব্যহারও করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নামটাই শুধু আরিফ ও তার প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করত। মূলত এটা জেকেজি হেলথকেয়ারের বিভিন্ন স্থানে প্রভাব বিস্তারের একটা কৌশল মাত্র।
সরকারি হাসপাতালে পিপিই সংকটে জেকেজি পেয়েছে হাজার পিপিই!
করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এপ্রিল মাসের দিকে পিপিই’র ব্যাপক সংকট ছিল। ওই সময়ও জেকেজি’র কয়েকটি বুথের টেকনোলজিস্ট ও সংশ্লিষ্টদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া হয়েছে কয়েক হাজার পিপিই! ওই সময় সরকারি হাসপাতালগুলোও পিপিই চেয়ে তালিকা পাঠালে সংকটের কারণে তাদের কাটছাঁট করে সরবরাহ করা হতো। অথচ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেকেজি হেলথকেয়ারকে একাধিকবার চাহিদামতো পিপিই ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
গত এপ্রিলে কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমতি পায় জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা জেকেজি হেলথ কেয়ার।
জেকেজি বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথ কেয়ার ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।
Leave a Reply