নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে ভাসমান শ্রমিকের হাট ! Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে ভাসমান শ্রমিকের হাট !

নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে ভাসমান শ্রমিকের হাট !

নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে ভাসমান শ্রমিকের হাট !




তানজিদ বসুনিয়া॥ রাজধানীর ভাটারার নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাত। ভোর থেকে সেখানে বসে বিপুল মানুষের মেলা। জড়ো হওয়া মানুষের কারো কাঁধে কোদাল, কারো হাতে কাস্তে। কেউ আবার ভবন ঢালাইয়ের টুকরি নিয়ে শামিল হচ্ছেন জমায়েতে। কারো কাঁধে গামছা, রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে কয়েকজনের মাথায় দেখা গেল মাথাল। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে স্থানটিতে জড়ো হন অন্তত হাজারখানেক মানুষ। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, শ্রমিকের মিলনমেলা। অনুসন্ধিত্সু চোখে এই শ্রমিকরা কিছু একটা খুঁজছেন।

 

 

পাশে গিয়ে জানা গেল, এই মানুষগুলো তাঁদের শ্রম বিক্রি করতে সেখানে জড়ো হয়েছেন। অনুসন্ধিত্সু চোখে তাঁরা খুঁজছেন কেউ যদি তাঁদের শ্রম কিনতে আসেন।

 

 

জটলার কাছে পৌঁছানোর আগেই ছুটে আসেন এক যুবক। তাঁর নাম রামীম। তিনি বললেন, ‘স্যার, মানুষ লাগব? কয়জন নিবেন? আমরা সব কাম করতে পারি। বালু উঠানো, অফিস পাল্টানো, সব কাম।

 

 

কিশোরগঞ্জের ইটনা থেকে কাজের খোঁজে ঢাকায় আসা রামীম এর আগে নারায়ণগঞ্জে একটি প্রাইভেট কম্পানির কাভার্ড ভ্যানের চালক ছিলেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হলে অঘোষিত লকডাউনে তাঁর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উপায় না পেয়ে ফিরে যান ইটনায়। সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে কাজ শুরু হলে কর্মস্থলে ফিরে শোনেন যে তাঁর চাকরি নেই। অন্য কয়েক জায়গায় কাজ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। শেষে দুই মুঠো খাবার জোটাতে নাম লেখান ভাসমান শ্রমিকের খাতায়। রামীম বলেন, ‘ড্রাইভারির চাকরি হারাইয়া এক মাস ধইরা এহানে আছি। এই এক মাসে কাজ পাইছি মাত্র তিন দিন। আয় হইছে মাত্র এক হাজার ২৫০ টাকা। এই আয় দিয়া ক্যামনে চলি!’

 

 

রামীমের মতো প্রতিদিন ভোরে যে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হন নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন ফুটপাতে, তাঁদের সবাই ভাসমান শ্রমিক। দৈনিক চুক্তিতে কাজের খোঁজে সেখানে জড়ো হন তাঁরা। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। পাঁচজন থেকে শুরু করে ২০ জন পর্যন্ত ছোট ছোট দলে চলে অপেক্ষার পালা। এই জমায়েতে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি কাজের সন্ধানে আসেন নারী শ্রমিকরাও। তাঁরা রান্নাবান্না, ইট, বালু, সিমেন্ট ওঠানো-নামানো, টাইলস পরিষ্কার, ভবন ঢালাই, বাসা ধোয়ামোছা, রাজমিস্ত্রির সহযোগী, মাটি কাটা, ইট পরিষ্কার ও ভাঙানো, টাইলস পুডিং পর্যায়ের সব কাজ করেন।

 

 

ভিড় থেকে পছন্দ অনুযায়ী শ্রমিক বাছাই করে চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়ে যান নিয়োগকর্তারা। একজন থেকে শুরু করে ৫০ জন পর্যন্ত শ্রমিকও নেন কেউ কেউ। দৈনিক ভিত্তিতে এসব শ্রমিকের গড় মজুরি ধরা হয় ৫০০ টাকা। প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসে চুক্তি করে শ্রমিকদের নিয়ে যায়। কখনো কখনো প্রায় সব শ্রমিকের দৈনিক এই কাজ জোটে। তবে করোনার কারণে বর্তমানে শ্রমিকদের চাহিদা ও পারিশ্রমিক দুই-ই কমেছে।

 

 

নতুন বাজারের নূরের চালা থেকে আসা শ্রমিক ইকবাল হাসান বলেন, ‘করোনার আগে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার চুক্তিতে কাম করতাম। তহন সপ্তাহের প্রতিদিন কাজ পাইতাম। এহন সপ্তাহে এক বা দুই দিনের বেশি কাজ পাই না। আর এক দিন কাজ কইরা এহন পাই ৪০০ টাকা। সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হইতাছে।

 

 

ইকবাল হাসানের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশের শ্রমিকরাও এগিয়ে আসেন। বলতে থাকেন নিজেদের কষ্টের কথা। নুরুল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আপনারা (গণমাধ্যমকর্মীরা) তো সবার দুঃখ-কষ্ট নিয়া লেখেন, আমাদের কষ্টের কথাও একটু তুইলা ধইরেন, স্যার। আমরা গরিব মানুষ, কাজকাম পাই না, পরিবার নিয়া ক্যামনে বাঁচুম!’

 

 

এ সময় দিলারা বেগম নামের এক নারী শ্রমিক বললেন, ‘আমি আগে বাসায় রান্নার কাম করতাম। করোনার জন্য হেরা বাসা ছাইড়া দিছে। অনেক চেষ্টা কইরাও আর কাজ না পাইয়া এইহানে আইছি। আপনের বাসায় বুয়া লাগলে আমারে কাজ দেন।

 

 

শ্রমিকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, তখন পাশেই একটা জটলা তৈরি হয়। উত্তর বাড্ডার আমিনুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ইট ও বালু পরিবহনের জন্য দুজন শ্রমিক খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘বাসায় কিছু কাজ করাতে হবে। এ জন্য ইট ও বালু আনব। দুজন শ্রমিক দরকার।’ পরে দেখা গেল, শ্রমিক বেশি থাকায় দৈনিক ৪০০ টাকায় দুজন শ্রমিক নিয়ে গেছেন তিনি। আর সেদিকে চেয়ে থাকল শ্রমিকদের হাজার জোড়া চোখ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD