শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সর্ববৃহত শিল্প নগরী ‘বরিশাল শিল্প নগরী’ (বিসিক)। আর এ শিল্প নগরীতে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়তই গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি বিসিক সংশ্লীষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধ স্থাপনাগুলো গড়ে তুলছেন। যার ফলে শিল্প নগরীটি এখন নিষিদ্ধ নগরী হিসেবে রুপ নিচ্ছে। পরিচিতি লাভ করেছে অপরাধ জোন হিসেবে। বিসিকের বরাদ্দকৃত জমিতে কোন প্রকার দোকান উত্তোলন করে ভাড়া দেয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না শিল্প মালিকরা।
বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তাদের আর্থিক ভাবে সুবিধা দিয়ে শিল্পকারখানার নামে বরাদ্দকৃত জায়গায় অবৈধভাবে দোকান উত্তোলন করে ভাড়া দিচ্ছেন অনেকেই। বিসিক শিল্প নগরীর কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড়ে শিল্পকারখানার নামে বরাদ্ধকৃত জায়গায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে দোকান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিক কর্মকর্তারা মুখ খুলছেন না। সাবেক বিসিক কর্মকর্তা মোঃ মোজাম্মেল হককে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে দোকান তৈরি করে শিল্প মালিকরা। মোজাম্মেল হকের বদলির পরে বিসিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন মোঃ শাফাউল করিম। তার যোগদানের পর পরই শিল্প মালিকরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকেও ম্যানেজ করে নেন। যার কারনে তিনিও রয়েছেন নিশ্চুপ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিসিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড়ে সিদ্দিকুর রহমান ও সাহাবুদ্দিন’র বরাদ্দকৃত জায়গায় কারখানা তৈরি না করে ভাড়া দেয়ার জন্য দু’জনে মিলে ১১টি দোকান উত্তোলন করেছেন। অক্ষরজ্ঞানহীন সিদ্দিকুর রহমান ওরফে দালাল সিদ্দিক দীর্ঘদিন ঢাকায় দালালি করে অবৈধভাবে টাকার কুমির হয়ে বরিশালে এসেও শুরু করেছেন অবৈধ বেআইনি কর্মকান্ড। তার ক্ষমতার প্রধান উৎসই হল অবৈধ টাকা এবং অপরাধ জগৎ। তিনি অবৈধ টাকা দিয়েই সব ম্যানেজ করে থাকেন। ঠিক তেমনই বিসিক কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে শিল্পকারখানার নামে বরাদ্ধকৃত জায়গায় দোকান উত্তলন করে তা ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন তিনি। এটাই এখন তার দোকান ভাড়ার ব্যবসা। অপরদিকে সাহাবুদ্দিন স্থানীয় প্রভাবসালী ব্যক্তি হওয়ায় অনেকেই মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উজিরপুর এলাকার এক ব্যবসায়ি জানায়, সিদ্দিক শুধু বিসিক শিল্প নগরীতেই নয়, তার জন্মস্থান উজিরপুরেও চালাচ্ছেন দখল বাণিজ্য। সিদ্দিকুর রহমান ওরফে সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিসিক শিল্প নগরীর কারখানা মালিকদের রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। শিল্প মালিকরা সিদ্দিকের অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কারন এই বিসিক শিল্প নগরীতে অনেক অজ্ঞাত হত্যা কর্মকান্ড ঘটেছে। যার কোন কুল কিনারা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানায়, কাউনিয়া টেক্সটাইল মোড়ে গড়েওঠা ১১টি দোকানের মধ্যে ৭টিই সিদ্দিক’র, বাকি ৪টি সাহাবুদ্দিন’র। দু’জনেই মোটা অংকের টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে দেন। ৭টি দোকানের প্রত্যেকটি থেকে সিদ্দিক ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। এদিকে সাহাবুদ্দিনও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৪টি দোকানই ভাড়া দিয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে বিসিক কর্মকর্তা মোঃ শাফাউল করিম ভয়েস অব বরিশালকে জানান, ভাই আপনারা সবই বোঝেন, ইচ্ছে করলেই আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই উপরের ফোনের কারনে আর অগ্রসর হতে পারি না। তিনি আরও বলেন, শুনেছি আমি যোগদান করার পূর্বে দোকান ঘর ভাড়া না দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু তারা নোটিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একটির পর একটি অনুনোমোদিত দোকান ঘর স্থাপন করে ভাড়া দিয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিক শিল্প নগরীতে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, সিদ্দিক ও সাহাবুদ্দিন বিসিক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই অবৈধভাবে দোকান ভাড়া দিচ্ছেন। নোটিশ দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, লোক দেখানো নোটিশ দিয়ে লাভ কি?
এ ব্যাপারে সিদ্দিকুর রহমান’র সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, বিসিকে অনেকেই এভাবে দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছে, তাদের কাছে আগে যান, তারপরে আমার কাছে আসেন। তিনি আরও বলেন, এখানে শিল্প কলকারখানা করা সম্ভব নয় কারন পানি, ড্রেন, বিদ্যুত ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় এখানে শিল্প কারখানা গড়ে তোলার প্রশ্নই অবান্তর। বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিসিক শিল্প নগরীতে তার সাথে দেখা কথা বলেন। অপর মালিক সাহাবুদ্দিন দেশের বাহিরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে বরিশাল শিল্প নগরীর সভাপতি বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কোন কিছুই বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply