বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিতদের ‘নকল’ মাস্ক সরবরাহ করায় ফেঁসে যেতে পারে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার শারমিন জাহান। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটিতে ১১ হাজার মাস্ক সরবারহের অনুমতি পেয়েছিল অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল। চার দফায় তিন হাজার ৪৬০টি মাস্ক সরবাহর করলেও তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় মানহীন মাস্ক সরবারহ করা হয়েছে এমন অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
শাহবাগ থানায় বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাফফর আহমেদ। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, মামলা হয়েছে। এখন বিষয়টি তদন্ত করে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, মামলার একমাত্র আসামি শারমিন জাহানের দাবি, মাস্ক সরবাহর করা নিয়ে যা হচ্ছে এটা গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করবেন।
মামলার সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৪ জুলাই থেকে বিএসএমএমইউতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়। সেখানে রোগীদের সেবা নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উন্নতমানের এন-৯৫ মাস্ক দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
পরে শারমিন জাহানের অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালসহ আরো একটি প্রতিষ্ঠানকে মাস্ক সরবারহ করার জন্য গত ২৭ জুন অনুমতি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা ১১ হাজার মাস্ক দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর প্রথম দফায় ৩০ জুন এক হাজার ৩০০, দ্বিতীয় দফায় ২ জুলাই ৪৬০, একইদিনে আরো এক হাজার এবং সবশেষ ১৩ জুলাই ৭০০ পিস মাস্ক সরবরাহ করে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রথম দুই দফার মাস্কের মান ঠিক থাকলেও পরের দুই দফায় দেয়া মাস্কে অসঙ্গতি ধরা পরে। কোনোটার ফিতা ছেঁড়া, কোনোটাতে উপরের লট নম্বর না থাকা ও ইংরেজি লেখায় বানান ভুল ধরা পড়ে। শুধু তাই নয়, এন-৯৫ মাস্কের সঙ্গে নকল মাস্কও দেয়া হয়।
এ পর্যন্ত প্রায় ৮০-৯৫ লাখ টাকার মাস্ক অপরাজিতার কাছ থেকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি দায়িত্বরত চিকিৎসকদের নজরে আসার পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে নড়চড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ঘটনায় ‘অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল’কে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। তাদের তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার তার জবাব দিয়েছেন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান। তারা বিষয়টিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, নকল মাস্ক সরবরাহ করার কোনো ইচ্ছা তাদের ছিল না। তাদের কাছে যেখানে প্যাকেটজাত অবস্থায় মাস্কগুলো এসেছে সেভাবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তারা সেসব মাস্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেছেন, কারণ দর্শানো নোটিশে তারা যা বলছেন তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা মহামারিতে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের আপস নয়। যারা এই ঘৃণ্য কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এরপরই মামলা দায়ের করা হলো। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করেছে অর্থাৎ দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। তাই বিষয়টি আমলে নিয়ে আসামি শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হলো।
এদিকে নকল মাস্ক সরবাহর নিয়ে যা হচ্ছে তাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালে স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহান। তিনি বলেন, আমার দেয়া মাস্ক দেখে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন। কিন্তু যখন মাস্কে সমস্যা দেখা দিল তারা সেগুলো ফেরত দিয়েছে। আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। কারণ এটা তো আমি তৈরি করিনি। কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা তো দুঃখজনক। যেহেতু মামলা হয়েছে আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনিভাবে মোকাবিলা করবো।
Leave a Reply