বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য অনু বিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগমের ওপর নজরদারি শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত তার অবৈধ সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করছেন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্যানুসন্ধানও শুরু হয়েছে।
গত সোমবার পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন রোজিনা। সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন জেবুন্নেছা। এর পর থেকেই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে।
জানা গেছে, ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জেবুন্নেছার নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি, ব্যাংকে জমানো টাকার তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ঢাকায় তার নামে চারটি বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। একাধিক ব্যাংকে তার নামে-বেনামে শতকোটি টাকার এফডিআর থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার অদূরে গাজীপুরে তার নামে ২১ বিঘা জমি, কানাডায় তিনটি বাড়ি ও পূর্ব লন্ডনে বাড়ির তথ্যও উঠে এসেছে। এসব তথ্য দুদকেরও নজরে এসেছে।
কাজী জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ক্ষতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার জহুরুল হক। বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা—এমন প্রশ্নের উত্তরে দুদক কমিশনার বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য এলে আমরা খতিয়ে দেখব। এমনি বললে হবে না। এখানে এত বিঘা ও বিদেশে এত সম্পত্তি এটা বললে হবে না। জমি থাকলে কোন জায়গায়, টাকা কোন হিসাবে—এ রকম সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে আমরা খতিয়ে দেখব।
এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, যে কোনো সময় যে কোনো দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেলে এবং দুর্নীতির তথ্যগুলো সঠিকভাবে এলে আমরা তদন্ত করতে বাধ্য। এর জন্যই দুদক সৃষ্টি, আইনও এ জন্যই হয়েছে।
দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ওই অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে কোনো দালিলিক প্রমাণ বা কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই দুদক এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো তাদের কাছে আসতে থাকলে তারা সেগুলো অনুসন্ধানের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। তখন ওই কর্মকর্তাই তথ্য খুঁজে বের করবেন। এখন কেউ চাইলে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে পারবেন। সেটাও তাদের কাজে লাগবে।
এ ব্যাপারে জেবুন্নেছার বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইলে বারবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। একপর্যায়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
জানা গেছে, জেবুন্নেছার নামে-বেনামে সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক বাংলাদেশ ব্যাংক, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব, বিআরটিএসহ সংশ্নিষ্ট অফিসগুলোর কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে। তথ্য পাওয়ার পর সেগুলো যাচাই করা হবে। এরপর জেবুন্নেছাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। তার বক্তব্য নেওয়ার পর তার নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিক রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তার পর সারাদেশে জেবুন্নেছার আচরণের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। একে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার পেশাদারিত্বের বড় ধরনের ঘাটতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সমালোচনার পর তিনি ওই নারী সাংবাদিককে হেনস্তার কথা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তা সাংবাদিক সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
Leave a Reply