মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়ার কর্মজীবনের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট)। পুলিশে ৩২ বছর চাকরির শেষভাগে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রায় চার বছর সাত মাস কর্মমুখর ছিলেন। বিদায়ী দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগআপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন,দেশের স্বার্থ আর মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় সবসময়ই আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। সবার ভালোবাসা ও সুস্থতা নিয়ে অবসরে যাচ্ছি। অবসরের পরও দেশের জন্য কাজ করতে চাই, দেশের স্বার্থে সবসময় নিয়োজিত থাকতে চাই।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টা নিজের শেষ কর্মদিবসে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণের পর টানা ৯২দিন আগুন সন্ত্রাস হয়েছিল। আমরা নগরবাসীকে সাথে নিয়ে সেই আগুন সন্ত্রাসকে দমন করেছি। ১ জুলাই ২০১৬ হলি আর্টিসান হামলায় দেশী বিদেশী ২২জন নাগরিক নিহত হন। স্বল্প সময়ের মধ্যে আমি আমরা অন্যান্য অফিসার নিয়ে হলি আর্টিসানে গিয়ে হাজির হই। আমার পাশেই সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গেলেও প্রাণ হারায় আমরা প্রিয় দুই সহকর্মী। এই সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে দেশজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নাগরিক ঐক্য তৈরি হয়। হলি আর্টিসান হামলার পর আমরা ছোট বড় ৬০টি প্রিভেনটিভ জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালিয়েছি। তাতে অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে এবং অনেককেই আমরা গ্রেফতার করেছি। ৬ মাসের মধ্যে আমরা এই জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত করেছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের আস্তা আমরা স্বল্প সময়ে অর্জন করতে পেরেছি বলে দেশে বিনিয়োগ চলমান রয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় জিরো টলারেন্স। আমরা ঢাকা মহানগরীরে মাদক বিরোধী অনেক অভিযান করেছি। মাদকের আখড়া বলে খ্যাত সকল স্থান ভেঙ্গে সামাজিক প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, এক হাজার ৬৮০ দিনের কমিশনার থাকাকালীন দুই জায়গায় ব্যর্থতার আক্ষেপ রয়েছে। একটি হচ্ছে, জনগণ থানায় যে সেবা প্রত্যাশা করছে, অনেকাংশে তা পূরণে ব্যর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে আমরা অনেক উন্নতি করলেও, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আরেকটি হচ্ছে, মহানগরী ঢাকার যানজট। আমরা যে যানজটমুক্ত গতিশীল ঢাকার প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা করতে পারিনি। তবে এ দায় শুধু ডিএমপির নয়। ঢাকায় সিগন্যাল ব্যবস্থা একটি সংস্থা দেখভাল করে, পানি জমলে আরেক সংস্থা দেখে, সড়ক দেখে আরেক সংস্থা। এছাড়া এর সঙ্গে আমাদের আইন না মানার সংস্কৃতি অন্যতম আরেকটি কারণ। এক্ষেত্রে শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা সফল হতে পারিনি।
ডিএমপি’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আমার কার্যকালীন ডিএমপি রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়েছে, এর কোনো সত্যতা নেই। এটি যারা বলে এবং প্রচার করে সেটি উদ্দেশ্যমূলক। গাড়ি ভাঙচুর-জ্বালাও-পোড়াও হবে, সরকারি অফিসে আগুন দেবে, এমন যেকোনো নৈরাজ্য প্রতিহত করে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের ওপর ন্যস্ত। এক্ষেত্রে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশের কথা বললে, এটি তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বলছেন। ডিএমপি সবসময় আইন-বিধি অনুযায়ী কাজ করেছে।
পুলিশ সদস্যদের অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্যায়-দুর্নীতি দেশের সব পেশাতেই কম-বেশি আছে। আমার দায়িত্বকালীন পুলিশের দ্বারা যেন মানুষ হয়রানির শিকার না হয়, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ৯৯ ভাগ কমিয়ে আনতে পেরেছি।
নগরবাসীর উদ্দেশে আসাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আসুন আমরা সকলে আইন মানি। আমরা এদেশের নাগরিক। সু নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেই আইন মানবেন ও অন্যকে আইন মানতে বলবেন। আমরা সকলে আইন মানলে ও আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করলে দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
Leave a Reply