শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক// ভোলার চরফ্যাশনে হাসপাতাল রোডের দুটি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই ব্যক্তির (প্রসূতি) রক্তের গ্রুপের রিপোর্ট দুই ধরনের পাওয়া গেছে। পরে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে আগের রিপোর্টটি ভুল বলে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি ধরা পড়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চরফ্যাশন সিটি হার্ট হাসপাতালে প্রসূতিকে অস্ত্রোপচার (সিজার) করাতে রক্ত ক্রস-ম্যাচিংয়ের সময়। রিপোর্ট ভুলের কারণে অস্ত্রোপচারে দেরি হওয়ায় ভুগতে হয়েছে প্রসূতিকে।
চিকিৎসক বলেছেন- ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে রক্ত পুশ করা হলে তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল।
ভুল রিপোর্টের উৎস চরফ্যাশনের সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর একজন মালিক রিপোর্টটি ভুল বলে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন উপজেলার নীলকমলের নাংলাপাতা গ্রামের প্রসূতি সুরমা বেগমের শ্বশুর আলমগীর হোসেন।
অভিযোগ ও রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে- আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সুরমা বেগম গত ৩১ আগস্ট চরফ্যাশনের সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত চেকআপের জন্য আসেন। সেখানে চেম্বারে বসা চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহিন আরা আহম্মেদ প্রসূতিকে রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেন। সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুরমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে ‘বি’ (+ve) পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হয়। রিপোর্টে সেন্টারটির ল্যাব টেকনোলজিস্ট মো. রিফাত হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে।
সন্তান প্রসবের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করায় গত বৃহস্পতিবার সুরমা বেগম সিটি হার্ট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. বিনয় কৃষ্ণ গোলদারের শরণাপন্ন হন। ডা. বিনয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগীর পানিশূন্যতা ও প্রি-একলামশিয়ার সমস্যা শনাক্ত করেন। গর্ভের সন্তানের জীবন বাঁচাতে মাকে রক্ত দেওয়া ও দ্রুত সিজার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেন্ট্রাল হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী ‘বি’ (+ve) পজিটিভ রক্ত খোঁজা হয়। স্বজনরা একজন মুমূর্ষু প্রসূতিকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে রক্ত চেয়ে চরফ্যাশন বাজারে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাইকিং করে। রক্তদাতা মিলে যায়। রক্তদাতাকে নিয়ে রোগীর রক্তের সঙ্গে ক্রস-ম্যাচিং করাতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। এতে চিকিৎসকরা সুরমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করান। সিটি হার্ট হাসপাতালের পরীক্ষায় দেখা যায়, সুরমার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ (+ve) পজিটিভ। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. বিনয় কৃষ্ণ গোলদার বলেন, ‘রক্তের ভুল গ্রুপের কারণে সময়মতো সিজার করতে পারিনি। এ জন্য প্রসূতিকে কষ্ট পেতে হয়েছে। যদি অসাবধানতাবশত রোগীর শরীরে ‘বি’ (+ve) পজিটিভ রক্ত পুশ করা হতো তাহলে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা ছিল।’
ডা. শাহিন আরা আহম্মেদ বলেন, ‘রক্ত পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। ল্যাব টেকনোলজিস্টরা ভুল করলে আমার কিছু করার নেই। ভুলের জন্য দায় হবে ডায়াগনস্টিকের মালিকের।’
সেন্ট্রাল জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআরডিবি চরফ্যাশনের চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান (মিজান মিয়া) বলেন, ‘বিষয়টি (রিপোর্ট) ভুল ছিল। এ ভুলের কারণে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এম ডি রিফাত হোসনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সেন্ট্রালের আরেক শেয়ারহোন্ডার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ভুল হতেই পারে। রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হতেই পারে। রক্ত পরীক্ষা করতে কোনো টেকনিশিয়ান লাগে না।’
চরফ্যাশন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেম্বারে বসা বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহাদাৎ হোসেন জুয়েল বলেন, ‘রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয় না। একই রোগীর রক্ত পরীক্ষা দুই ধরনের রিপোর্টে একটি অবশ্যই ভুল।’
ভোলা সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘জীবনে কখনো মানুষের রক্তের গ্রুপ পরিবর্তন হয় না। রিপোর্টের যেকোনো একটি নিশ্চিত ভুল।’
Leave a Reply