কী এমন মধু বরিশালে সোয়া শতাংশ জমিতে? Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] অথবা [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




কী এমন মধু বরিশালে সোয়া শতাংশ জমিতে?

কী এমন মধু বরিশালে সোয়া শতাংশ জমিতে?

কী এমন মধু বরিশালে সোয়া শতাংশ জমিতে?




আকতার ফারুক শাহিন॥ মাত্র সোয়া ১ শতাংশ জমি নিয়ে চলছে তুলকালাম কাণ্ড। ব্যস্ত মহাসড়ক ঘেঁষে ফুটপাথ হিসেবে ব্যবহৃত ওই জমিটুকু লিজ দিতে যেন মরিয়া বরিশাল জেলা পরিষদ।

 

 

বিতর্কিত এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা, আদালতের নোটিশ, বহু মানুষের বিক্ষোভ এমনকি খোদ জেলা পরিষদের সার্ভে রিপোর্টে পর্যন্ত নেতিবাচক মন্তব্য আসার পরও কী কারণে তা বহাল রাখতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন জেলা চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা- সেটিই এখন বড় প্রশ্ন এলাকাবাসীর কাছে।

 

 

বরিশাল নগরীর ২২নং ওয়ার্ডে অবস্থান আলোচিত এই জমির। ওই এলাকার জিয়া সড়ক ও নবগ্রাম রোডের সংযোগস্থলে থাকা পিয়ন বাড়ি এলাকার ওই জমি লিজ দেয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে জটিলতা।

 

 

গত বছরের শেষনাগাদ মো. নাসির আহম্মেদ নামে এক ব্যক্তিকে জমিটি লিজ দেয়ার উদ্যোগ নেয় জেলা পরিষদ। আলোচ্য নাসির আহম্মেদের বসবাস ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে নগরের বগুড়া রোড এলাকায়। অন্য কেউ লিজ নেয়ার চেষ্টা করছে জানতে পেরে জমির পেছনের বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামও সেটি লিজ চেয়ে আবেদন করেন জেলা পরিষদে। এখান থেকেই শুরু জটিলতা।

 

 

আমিনুল ইসলাম বলেন, নবগ্রাম রোড চৌমাথা থেকে এই সড়কটি চলে গেছে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী হয়ে খুলনা পর্যন্ত। এটি দিয়ে যাতায়াত করা যায় ঝালকাঠী এবং মৎস্য বন্দর পাথরঘাটায়। অত্যন্ত ব্যস্ত এই মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে জন চলাচলের ফুটপাথ বাইরের একজনকে লিজ দেয়া হচ্ছে শুনেই আমি লিজের আবেদন করি। তাছাড়া খবর পেয়েছিলাম লিজ নিয়ে এখানে ফুটপাথ বন্ধ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে নাসির আহম্মেদের। সে ক্ষেত্রে কেবল ফুটপাথই নয়, আমার ঘর থেকে বেরুনোর পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

 

 

লিজ চেয়ে দুইজন আবেদন করার পর জটিলতা এড়াতে আল আমিন নামে এক সার্ভেয়ারকে ঘটনাস্থল দেখে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পাঠায় জেলা পরিষদ। গত বছরের ৭ নভেম্বর সার্ভেয়ার আল আমিনের দাখিল করা প্রতিবেদনে মহাসড়ক সংলগ্ন ফুটপাথ লিজ না দেয়ার পক্ষে মতামত আসে। নাসির আহম্মেদ ওই এলাকার বাসিন্দা নয়, সেটিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন আল আমিন।

 

 

এতকিছুর পরও রহস্যজনক কারণে জেলা পরিষদ সব বিধি উপেক্ষা করে ৪০ ফুট দীর্ঘ এবং ১৪ ফুট প্রশস্ত ওই জমিটি নাসির আহম্মেদের নামে লিজ দেয়। লিজ পাওয়ার পরপরই ফুটপাথে ওয়াল করে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নেন নাসির। তখন থেকেই শুরু হয় গোলমাল। ফুটপাথ আটকে পাকা স্থাপনা করার উদ্যোগে বাঁধা দেয় এলাকার মানুষ। বাঁধার মুখে সেখান থেকে চলে আসেন নাসির।

 

 

অতীত ইতিহাস অনুযায়ী, কাউকে জমি লিজ দিলে তার চৌহদ্দি চিহ্নিত করে দেয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব থাকে না সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। জমির দখল বুঝে নিয়ে আবেদন অনুযায়ী সেখানে স্থাপনা নির্মাণের দায় দায়িত্বটা থাকে লিজ গ্রহীতার। কিন্তু এই সোয়া এক শতাংশের ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা গেছে জেলা পরিষদের আচরণে।

 

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদ এবং লিজের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পরও মঙ্গলবার সেখানে পাঠানো হয় র্যাবব, পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট। লিজ গ্রহীতা নাসিরকে বুঝিয়ে দিতে তারা সেখানে খুঁটির ওপর লাল কাপড় বেঁধে চিহ্নিত করেন জমি।

 

 

এদিকে স্থাপনা নির্মাণের উদ্দেশ্যে তৈরি কাঠামো নিয়ে ট্রাকে করে সেখানে হাজির হন নাসির। উদ্যোগ নেন ঘর তোলার। এমন পরিস্থিতিতে বাধা দেন এলাকাবাসী। বাধার মুখে নাসিরকে জমি বুঝিয়ে দেয়া কিংবা স্থাপনা তৈরি না করেই ফিরে যান সবাই।

 

 

স্থানীয় হাজী মো. আবুল হোসেন বলেন, এখানে স্থাপনা হলে চলাচলে জটিলতা হবে। এখানে সড়ক সংলগ্ন কোনো জমিই লিজ দেয়নি জেলা পরিষদ। হঠাৎ করে এই জমিটুকু লিজ দেয়া কেন জরুরি হয়ে গেল সেটাই তো বুঝতে পারছি না। কেবল লিজ দেয়াই নয়, দখল বুঝিয়ে দিতে বাহিনী নিয়ে চলে এলো। এত আগ্রহের কারণ কী?

 

 

আরেক বাসিন্দা মোজাম্মেল হক খান বলেন, পাবলিক ইন্টারেস্টের বিষয়টি ভেবে এই লিজের বিরুদ্ধে বরিশালের ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। গত ৪ ডিসেম্বর দেয়া নোটিশে আদালত বিষয়টি সর্ম্পকে জবাব দেয়ার জন্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। তাছাড়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী বরাবর ডিমান্ড অব জাস্টিসের নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম। তবে তারও কোনো জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি জেলা পরিষদ।

 

 

সড়ক মহাসড়কের পাশে জমি লিজ দেয়া কিংবা স্থাপনা নির্মাণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলোচ্য সড়কটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়ক মহাসড়কের পাশে জমি লিজ কিংবা যে কোনো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ ফিট জায়গা রেখে কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে লিজ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা লিজ গ্রহীতা অবশ্যই এই বিধান মেনে সীমানা চিহ্নিত করবেন। এর বাইরে কিছু হলে তা আইনসিদ্ধ হবে না।

 

 

তিনি বলেন, বিধানে এভাবে বলা হলেও সরেজমিনে জমিতে গিয়ে তা প্রতিপালনের কোনো নমুনাই মেলেনি। বরঞ্চ এমনভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে যাতে চিহ্নিতকরণ খুঁটি পড়েছে সড়কের একেবারে গাঁ ঘেঁষে।

 

 

বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে বরিশাল জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মানিকহার রহমান বলেন, তারা দুজনেই (আমিনুল ও নাসির) লিজ চেয়ে আবেদন করেছিল। একজনকে দেয়া হয়েছে অপরজনকে হয়নি। যতদূর জানি আলোচ্য স্থানে লিজ গ্রহীতার জমি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে একপক্ষ অভিযোগ করেছে। বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের কাছে করা ওই অভিযোগটি বিচেনাধীন রয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

 

 

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে নাসির আহম্মেদের। পরে তার বড়ভাই মহিউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওখানে নাসিরের শ্বশুরবাড়ি। নাসিরেরও জমি রয়েছে। জমিটুকু লিজ না পেলে সে তার জমি থেকে মূল সড়কে বের হতে পারবে না।

 

 

ফুটপাথ লিজ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিয়ম বিধান মেনেই জমি লিজ নেয়া হয়েছে। স্থাপনা করার ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনেই করা হবে। এক্ষেত্রে নিয়মের বাইরে কিছুই করা হবে না।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD