বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ পোশাককর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ছিল শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব-ইতিহাসেরই অন্যতম ভয়াবহ শিল্প-দুর্ঘটনা। আলোচিত ওই ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার।
প্রায় চার বছর আগে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে দুই মামলার বিচার মোটেও এগোয়নি। এখনো একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্য দিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালত সূত্র জানায়, অভিযোগ গঠনের পর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান কয়েকজন আসামি। বৈধতা চ্যালেঞ্জের আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলা দুটির সাক্ষ্য নিতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে রিভিশনে ইমারত নির্মাণ আইনে মামলায় ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।
হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, অভিযোগ গঠনের পর কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিত করেন। তাদের মধ্যে এখনো সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাত উল্লাহ এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলীর পক্ষে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ফলে বিচার প্রক্রিয়ার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
ইমারত নির্মাণ আইনে দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল বলেন, কয়েকজন আসামি অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিভিশন মামলা করেন। তাদের মধ্যে নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বজলুস সামাদ ও সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের রিভিশন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। অপরদিকে ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামের রিভিশন মঞ্জুর করে অব্যাহতি দেয়া হয়। রিভিশনের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা যাবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনের দুই মামলায় প্রায় চার বছর আগে অভিযোগ গঠন হয়েছে। কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। তাদের পক্ষে স্থগিতাদেশ থাকায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, মামলায় রানা ছাড়া সবাই জামিনে আছেন। মামলায় কোন সাক্ষী হচ্ছে না আর আসামি রানাকে জামিনও দিচ্ছে না আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের উচিত দ্রুত স্থগিতাদেশ নিষ্পত্তি করে মামলার কার্যক্রম চালু করা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে সাভারের রানা প্লাজা ভবন। ভবনের নিচে চাপা পড়েন সাড়ে পাঁচ হাজার পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনায় এক হাজার ১৩৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত ও পঙ্গু হন প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় সাভার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়ালী আশরাফ ভবন নির্মাণে ‘অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা’ মামলা করেন।
২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জনকে। মামলার ৪১ আসামির মধ্যে আবু বক্কর সিদ্দিক ও আবুল হোসেন মারা যান। দুজনকে বাদ দিয়ে এখন আসামির সংখ্যা ৩৯ জন।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি।
একই ঘটনায় ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন ওইদিন সাভার থানায় মামলাটি করেন। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ভবনের মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয় ১৩০ জনকে।
২০১৬ সালের ১৪ জুন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বর্তমানে ওই আদালতে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। অভিযোগ গঠন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একজনেরও সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
দুই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিন) এ টি এম মাসুদ রেজা, প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইন, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, সাভার পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাভার পৌরসভার সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আব্দুল মোত্তালিব, পৌরসভার সাবেক সচিব মর্জিনা খান, সাবেক সচিব মো. আবুল বাশার, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নিউ ওয়েব বটমস লিমিটেডের এমডি বজলুস সামাদ ও ইথার টেক্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান।
সম্পদের হিসাব দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের দণ্ড দেয়া হয়।
২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার মা মর্জিনা বেগমকে ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
কারাদণ্ডের পাশাপাশি তার ছয় কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ টাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন আদালত। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।
Leave a Reply