বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রাজধানীর আদাবরে মাইন্ডএইড হাসপাতালে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আনিসুল করিম শিপন হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে আগামী ১২ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলামের আদালত নতুন এ দিন ধার্য করেন।
এদিন এএসপি মো. আনিসুল করিম হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. ফারুক মোল্লা প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এজন্য আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে আগামী ১২ এপ্রিল নতুন এ দিন ধার্য করেন।
গত ১০ নভেম্বর আদাবর থানায় আনিসুল করিম শিপনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাইজুদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে দুই আসামি পলাতক রয়েছে।
তারা হলেন, মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাজ্জাদ আমিন। এ মামলার আসামি মাইন্ডএইড হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, পরিচালক ফাতেমা খাতুন ময়না, মুহাম্মাদ নিয়াজ মোর্শেদ, কো-অর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মো. মাসুদ, ওয়ার্ড বয় জোবায়ের হোসেন, ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান, ওয়ার্ড বয় মো. তানিম মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, মো. লিটন আহাম্মদ, মো. সাইফুল ইসলাম পলাশ কারাগারে আছেন। এ মামলায় একমাত্র আসামি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জামিনে আছেন।
এদিকে এ মামলায় আসামি কিচেন সেফ মাসুদ খান, ওয়ার্ড বয় অসীম চন্দ্র পাল, মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, সজিব চৌধুরী, হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মো. তানভীর হাসান ও ওয়ার্ড বয় মো. তানিম মোল্লা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে আনিসুল হকের বাবা বলেন, আমার ছেলে মো. আনিসুল করিম ৩১ তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। আমার ছেলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে কর্মরত ছিল। গত ৩/৪ দিন যাবৎ হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে যায়। পরিবারের সকলের মতামত অনুযায়ী আমার ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গত ৯ নভেম্বর প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাই। অতঃপর আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য একই দিন বেলা সাড়ে টার দিকে আদাবরের মাইন্ডএইড হাসপাতালে নিয়ে যাই। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরিফ মাহমুদ জয়, রেদোয়ান সাব্বির ও ডা. নুসরাত ফারজানা আমার ছেলে মো. আনিসুল করিমকে হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া করতে থাকেন। ওই সময় আমার ছেলে হাসপাতালের সব স্টাফদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করে। হাসপাতালের নিচতলায় একটি কক্ষে বসে হালকা খাবার খায়। খাবার খাওয়ার পর আমার ছেলে আনিসুল করিম ওয়াশরুমে যেতে চায়। বেলা পৌনে ১২ টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় আমার ছেলেকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যায়। তখন আমার মেয়ে উম্মে সালমা আমার ছেলের সঙ্গে যেতে চাইলে আসামি আরিফ মাহমুদ জয় ও রেদোয়ান সাব্বির বাধা দেয় এবং কলাপসিবল গেট আটকে দেয়। তখন আমি, আমার ছেলে রেজাউল করিম ও মেয়ে সালমা (সাথী) নীচতলায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলাম।
এরপর এজাহারে উল্লেখিতসহ আরো অজ্ঞাতনামা কয়েকজন আমার ছেলে আনিসুল করিমকে চিকিৎসার নামে দোতলার একটি ‘অবজারভেশন রুমে’ (বিশেষভাবে তৈরি কক্ষ) নিয়ে যায়। উক্ত আসামিরা আমার ছেলেকে চিকিৎসা করার অজুহাতে অবজারভেশন রুমে মারতে মারতে ঢুকায়। তাকে উক্ত রুমের ফ্লোরে জোরপূর্বক উপুড় করে শুইয়ে ৩-৪ জন হাঁটু দ্বারা পিঠের উপর চেপে বসে, কয়েকজন আমার ছেলেকে পিঠ মোচড় করে ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধে । কয়েকজন আসামি কনুই দিয়ে আমার ছেলের ঘাড়ের পিছনে ও মাথায় আঘাত করে। একজন মাথার উপরে চেপে বসে এবং আসামীরা সকলে মিলে আমার ছেলের পিঠ, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করে।
এরপর বেলা ১২ টার দিকে আমার ছেলে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। যা হাসপাতালে স্থাপিত সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান। নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর আসামি আরিফ মাহমুদ জয় নিচে এসে আমাদেরকে ইশারায় উপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেয়। আমি আমার ছেলে ও মেয়েসহ অবজারভেশন রুমে গিয়ে আমার ছেলেকে ফ্লোরে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পাই। অতঃপর জরুরিভিত্তিতে আমার ছেলেকে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা করে আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করেন।
Leave a Reply