শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ অপরাহ্ন
আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে বেড়েছে গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি চোরাচালানের পরিমাণ। সংঘবদ্ধ একটি চোরাচালান চক্রের মাধ্যমে ভারত থেকে হিলি সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছে এসব বড়ির কোটি কোটি টাকা মূল্যের চালান। মাঝে মধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে এসব নিষিদ্ধ বড়ির কিছু ধরা পড়লেও বেশিরভাগ চালানই আরও এক সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।
হিলি সীমান্তের বিভিন্ন বিজিবি ক্যাম্প ও হাকিমপুর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে হিলি সীমান্ত এলাকায় সাতটি অভিযান চালিয়ে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ পিস গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে একলাখ পিস বড়ি জব্দ করেছে পুলিশ। বাকি সব বড়ি জব্দ করেছে বিজিবি। উদ্ধার হওয়া বড়ির বাজারমূল্য পাঁচ কোটি ৭৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, প্রতিবছর কুরবানির ঈদের আগে এক শ্রেণির অসাধু খামার মালিক ও ব্যবসায়ী গরু মোটাতাজাকরণ বড়ির জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এতে সীমান্ত দিয়ে এসব বড়ির চোরাচালান বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে দুইটি চক্র তৎপর হয়। একটি চক্র ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি দেশে নিয়ে আসে। আর আরেকটি চক্র তা খামার মালিক ও গরু ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেয়।
এ সূত্র আরও জানায়, ভারতে লাল রঙের এক হাজার প্রাকটিন বড়ির দাম ২২০ টাকা এবং সাদা রঙের এক হাজার ডেক্সিন বড়ির দাম ২৯০-৩০০ টাকা। তবে দেশের বাজারে, বিশেষ করে বগুড়ায় লাল রঙের এক হাজার প্রাকটিন বড়ি বিক্রি হয় ২৭০-২৮০ টাকায় এবং সাদা রঙের এক হাজার ডেক্সিন বড়ি বিক্রি হয় ৩৯০ টাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ সূত্র জানায়, গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি বিক্রির জন্য ভারতেও একটা সংঘবদ্ধ চক্র আছে। এ চক্রের কাছ থেকে তা হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে এদেশেরই একটি চক্র। এ চক্রের সদস্যরা আবার ভারত থেকে চোরাই পথে আসা বড়ি গাইবান্ধা ও বগুড়ায় পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে আবার তা আরও এক চক্রের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে যায়।
সূত্রটি জানায়, ভারত থেকে চোরাই পথে বড়ি নিয়ে এসে তা গাইবান্ধা ও বগুড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ যারা করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতো হিলি সীমান্তের পাশের উপজেলা পাঁচবিবির চেচড়া গ্রামের বাবু নামের এক ব্যক্তি। ৫-৬ দিন আগে পাঁচ সহযোগীসহ বাবুকে গ্রেফতার করে র্যাব। এখন বাবুর দায়িত্ব আরও একজন নিয়েছে।
বিজিবি বাসুদেবপুর ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার জয়েন উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ বড়ির চোরাচালানরোধে টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে সন্দেহজনকভাবে কাউকে ঘুরাফেরা করতে দেখলে তল্লাশি করা হচ্ছে।’
জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিছুল হক বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ বড়ির পাচাররোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিজিবির টহলও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসামরিক সোর্স নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশ-র্যাবকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের অন্যান্য কার্যক্রমও অব্যাহত আছে।’
হাকিমপুর থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ চোরাচালানরোধে বিজিবির পাশাপাশি পুলিশও নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এ ছাড়া, হিলি থেকে যে সব রুটে দিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায় গরু মোটাতাজাকরণ বড়ি পৌঁছায় সে সব রুটে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।’
Leave a Reply