মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ২২ বছরেও স্থাপিত হয়নি ময়লা পরিশোধনের ডাম্পিং স্টেশন। পৌরসভার আওতাধীন একাধিক সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে পৌরশহরের খাল সহ একাধিক স্পট। যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদের দূর্গন্ধ এখন নিত্যসঙ্গী।
পৌরশহরকে বেষ্টনকারী খালটি এখন ময়লার ভারে বেশীর ভাগ স্থান দিয়ে মরা খালে পরিনত হয়েছে। এছাড়া ওই খালে বর্জ্য ফেলায় পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত হলেও পৌর শহরে বাস করা অনেকে গোসল সহ গৃহস্থালী কজে ওই পানি ব্যবহার করছেন। এমনকি হাসপাতালে রোগীদের ব্যবহৃত বিষাক্ত ময়লাও ফেলা হয় উন্মুক্ত স্থানে।
নির্দিষ্ট স্থান এবং অপরিকল্পিতভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হতে যাচ্ছে। ময়লায় বেওয়ারিশ কুকুর, বিড়াল এবং গবাদি পশুদের বিচরণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দুর্গন্ধে পরিণত হচ্ছে। দুর্গন্ধের পাশাপাশি ওই স্থান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে পৌরবাসীর ক্ষোভ থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি তারা জমির অভাবে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্থাপিত বোরহানউদ্দিন পৌরসভা ২০১৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। প্রায় ৩.২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার বিশ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস। নাগরিক সুবিধার জন্য রয়েছে ২ টি হাটবাজার, ২ টি কসাইখানা, ৫৫ কিলোমিটার পাকারাস্তা, আরসিসি সড়ক ১৭ কিলোমিটার, কাঁচারাস্তা ১২কিলোমিটার, সোলিং সড়ক ২ কিলোমিটার এ ছাড়াও পাঁকা ড্রেন রয়েছে ১৭ কিলোমিটার, কাঁচা ড্রেন ১১ কিলোমিটার, ১ টি ল টার্মিনাল, সড়কবাতি ৬ শত ৫০ টি।
পৌর শহরের কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম, আনর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন খালে বর্জ্য পদার্থের দুর্গন্ধে শ^াস বন্ধ হয়ে আসে। পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের বালিকা বিদ্যালয় সড়ক এলাকার বাসিন্দা মো. নোমান, মুশফিকুর রহমান বলেন, এলাকার আবাসিক বাসিন্দারা সড়কের পাশে ফাঁকা জায়গায় আবর্জনা ফেলে রাখে। আমরা ওই ময়লার দুর্গন্ধে এখন অতিষ্ঠ। এছাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এ সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় নাকে কাপড় পেঁচিয়ে কোন রকমে এলাকা পার হয়।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা(চলতি দ্বায়িত্ব) ডা. মশিউর রহমান সাদী বলেন, বর্জ্য-আবর্জনাযুক্ত পানি ব্যবহারে মানুষের রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুন বেড়ে যায়। এছাড়া উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য থেকেও একই রকম ঝুঁকি থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, পরিচ্ছন্ন পরিবেশবান্ধব পৌরসভার জন্য ডাম্পিং জোন প্রয়োজন। এ ছাড়াও পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের ময়লা-আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করতে পারে। তাদের সংগৃহীত বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, বর্জ্য দুই ধরনের। একটি তরল ও অপরটি শক্ত। শক্ত বর্জ্য থেকে পলিথিন যাতে না আসে, অথবা পলিথিন পাওয়া গেলে তা বের করে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের (রি-সাইকেলিং) মাধ্যমে তরল ও শক্ত বর্জ্য সংরক্ষণ করে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উন্নতমানের জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। এতে ফসলি জমির উর্বরতা বাড়বে।
এদিকে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী(অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব)শামিম হাসান জানান, পৌর শহরের পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে ডাম্পিং স্টেশন একান্ত প্রয়োজন। ডাম্পিং স্টেশন নির্মানের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনারের(ভূমি)দপ্তরে জমি বরাদ্দ নেয়ার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপকূলীয় শহর পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে(সিটিইআইআইপি) অন্তভূক্তি প্রক্রিয়াধীন। এ পৌরসভায় ওই প্রকল্প অনুমোদন হলে নগরবাসীর এ সমস্যা আর থাকবেনা।
সদ্য যোগদানকারী উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ও উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. বশির গাজী জানান, পৌরসভাকে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের কাজ চলমান আছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা পৌরশহরের ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করার উদ্যোগ নিলেও জায়গা না পাওয়ায় ডাম্পিং জোন স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। শহরের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আবর্জনা ডাম্পিং করতে না পারায় পৌরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমরা ডাম্পিং জোনের জন্য প্রায় নয় বছর ধরে সরকারি জায়গা চেয়েও নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত তা পাইনি। জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে অধিগ্রহণ হলে ডাম্পিং জোন নির্মাণ করা হবে।
Leave a Reply