সাবরিনার এক রহস্যময় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা Latest Update News of Bangladesh

বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




সাবরিনার এক রহস্যময় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা

সাবরিনার এক রহস্যময় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা

সাবরিনার এক রহস্যময় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ করোনাভাইরাস পরীক্ষার মনগড়া প্রতিবেদন দিয়ে আলোচনায় আসা জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ওরফে সাবরিনা শারমিন হুসাইনের এক রহস্যময় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা পুলিশ ও তেজগাঁও বিভাগের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

 

 

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন এবং কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিন দিনের রিমান্ডে আছেন। গত রোববার তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার পর গত সোমবার নেওয়া হয় তিন দিনের রিমান্ডে। মঙ্গলবার মামলার নথি এবং আসামি সাবরিনাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়।

 

 

সাবরিনার মামলা তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, রহস্যময় এক নারীর সঙ্গে ওঠাবসা ও বেশ ঘনিষ্ঠতা ছিল সাবরিনার। ওই নারী নিজেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিআই) পরিচালক পরিচয় দিয়ে থাকেন। একটি অনুমোদনহীন টেলিভিশন (আইপি) চ্যানেলের মালিক বলেও দাবি করেন তিনি। কথিত ওই টেলিভিশন চ্যানেলটির বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয়পত্র বিক্রি এবং সেখানকার সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগও বহু পুরনো। সাবরিনার ওই বান্ধবীর রয়েছে একাধিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। রহস্যময় ওই নারীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। তার স্বামী তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী। সাবরিনার ওই বান্ধবীর সঙ্গে সমাজে প্রতিষ্ঠিত বহু লোকের ছবিও ফেসবুকে বহুবার ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়া তার ওই বান্ধবী একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকের সঙ্গে ডুয়েট গান করার প্রস্তাব দিয়েও তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। ইফতার পার্টিতে সিনেমার গান পরিবেশন করেও ফেসবুকে ভাইরাল হন ওই বান্ধবী। সচিবালয় ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর-অধিদপ্তরে তার রয়েছে অবাধ যাতায়াত। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও রয়েছে তার। অনেক অনুষ্ঠানে ডা. সাবরিনাকে তার সেই বান্ধবীর সঙ্গে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। তারা রাজধানীর ধানমণ্ডির উঠান রেস্টুরেন্টে প্রতি সপ্তাহে আড্ডা দিতেন। সেই আড্ডায় দেশীয় পানীয়র পাশাপাশি বিদেশি দামি পানীয়র ব্যবস্থাও থাকতো। সেখানে তাদের আরো বেশ কয়েকজন বান্ধবী অংশ নিতেন। এমনটাই জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা।

 

 

তদন্ত কর্মকর্তারা সাবরিনার সেই বান্ধবীর নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, তার কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেকেজিকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সেই বান্ধবীর সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

 

 

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে সাবরিনার এক আত্মীয় বলেন, ২০১৪ সালের দিকে আরিফ রোগী হিসেবে মোহাম্মদপুরের হুমায়ন রোডের বিডিএম হাসপাতালে ডা. সাবরিনার কাছে যেতেন। বিডিএম হাসপাতালে প্রাইভেট চেম্বার করতেন ডা. সাবরিনা। সেখানে রোগী হিসেবে যাতায়াতের সুবাধে আরিফ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ওভাল গ্রুপের সিইও পরিচয় দেন। স্বামীর সঙ্গে আগেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় সাবরিনা তখন ছিলেন অনেকটা নিঃসঙ্গ। সেই সুযোগ নেন আরিফ। সাবরিনার আগের সংসারে থাকা ছেলের দায়িত্বও নিতে রাজি হন আরিফ। সাবরিনাকে মধুর মধুর কথা বলে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সেইসব ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। হৃদরোগের নারী চিকিৎসক হিসেবে সাবরিনার বেশ খ্যাতি ছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন প্রচারপ্রিয়। টেলিভিশনের স্বাস্থ্যবিষয়ক আলোচনা ও পত্রিকায় স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখি করতেন সাবরিনা। তার খ্যাতিকে পুঁজি করে আরিফ তার ব্যবসায়িক কাজে লাগান। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ এবং ঠিকাদারি বাগিয়ে নিতে সাবরিনাকে কাজে লাগায় কৌশলী আরিফ। করোনাকাল শুরু হলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিনে পয়সায় করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের অনুমোদন পেতেও সাবরিনাকে কাজে লাগায় আরিফ। এ ছাড়া বিডিএম হাসপাতালের অপর একজন চিকিৎসকের সঙ্গেও সাবরিনার ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

 

 

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতি থেকে উপার্জিত টাকার ভাগ নিয়ে আরিফ ও সাবরিনার মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সাবরিনাকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন আরিফ। কিন্তু ওই চেকটি প্রত্যাখ্যাত হয়। সাবরিনা তখন আরিফকে উকিল নোটিসও পাঠান।

 

 

তবে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সাবরিনা বলেছেন, তিনি জেকেজিতে স্বেচ্ছাশ্রম দিতেন। জালিয়াতির খবর তিনি জানতেন না। জানার পরই জুনের প্রথম সপ্তাহে তিনি সরে আসেন। পুলিশ তার এসব বক্তব্য মানতে নারাজ। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী জেকেজি নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। এর অল্প কিছুদিন পরই তারা অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি ভেঙে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করতে থাকে। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) লিখিতভাবে জেকেজিকে সতর্কও করে। তারপরও তারা এই কাজ চালিয়ে যায়।

 

 

জেকেজি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি নমুনা বুথ বসিয়ে এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে থাকে। অথচ প্রতিষ্ঠানটির বৈধ লাইসেন্সও ছিল না। নানা কৌশলে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি ‘বুকিং বিডি’ ও ‘হেলথ কেয়ার’ নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নেওয়া এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিতে শুরু করে। তারা হটলাইন খুলে বাসাবাড়িতে থেকেই পরিচয় প্রকাশ না করেও নমুনা দেওয়ার জন্য মানুষকে প্রলুব্ধ করত। তারা সারা দেশ থেকে ২৭ হাজার নমুনা সংগ্রহ করে। তারা আইইডিসিআরের মাধ্যমে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার পরীক্ষার সনদ দেয়। তাদের রিপোর্ট সঠিক বলে ধরে নিয়েছে পুলিশ। কিন্তু বাকি ১৫ হাজার ৪৬০টি রিপোর্ট তারা গুলশানে নিজ কার্যালয়ে বসেই তৈরি করে, যার প্রমাণ জেকেজির অফিস থেকে জব্দ করা ল্যাপটপে পাওয়া গেছে। ভুয়া রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরবরাহ করে ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় জেকেজি। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদকও।

 

 

পুলিশি জেরার মুখে ডা. সাবরিনা বরাবরই পুলিশকে বলছেন, তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। যৌথ মূলধনী কোম্পানি নিন্ধন পরিদপ্তরের নথিপত্রে তার নাম নেই। জেকেজির কর্মীরা তাকে মুখে মুখে চেয়ারম্যান বলতেন। তিনি আরও বলেন, ৮ মাস থেকেই তিনি বাবার বাড়িতে ছিলেন। আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন জুনের প্রথম দিক থেকে। আরিফের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। উকিল নোটিস দিয়েছেন। এ সব কারণে আরিফ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে তালাকের নোটিসও দিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD