বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ আসন্ন ঈদ উল আযহায় নদী ও সড়ক পথে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। তাই অন্তত যাত্রীদের কথা চিন্তা করে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র চালকরা সচেতন হলে সড়ক ও নৌ পথে ৭০ ভাগ দুর্ঘটনা রোধ হবে। পাশাপাশি লঞ্চের স্টাফ কেবিন কোনভাবেই যাত্রীদের কাছে ভাড়া না দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
সোমবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১২টায় আসন্ন ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে জেলার “আইন শৃঙ্খলা” বিষয়ক সভায় জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান সভাপতির বক্তৃতায় লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি এই আহ্বান জানান।
বরিশাল জেরা প্রশাসন কার্যালয়ের সভা কক্ষে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ঈদ প্রস্তুতি সভায় জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান আরো বলেন, নদীমাত্রিক অঞ্চল হওয়ায় নৌ রুট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিযোগিতার চিন্তা ধারা ফুলে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল চালাতে হবে। এতে যেমন যাত্রীরা নিরাপদ থাকবে তেমনি লঞ্চ মালিকরাও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।লঞ্চ মালিকদের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রতিটি লঞ্চে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতিবন্ধিদের জন্য প্রতি লঞ্চে অন্তত একটি করে পৃথক টয়লেট রাখতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তার দাবীর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক বরিশাল-ঢাকা সহ অভ্যন্তরিন রুটের লঞ্চ শ্রমিকদের অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রন সম্পর্কিত প্রশিক্ষক বাধ্যতামুলক করেছেন। তিনি বলেছেন প্রতিটি লঞ্চ থেকে অন্তত ৫ জন করে শ্রমিককে এই প্রশিক্ষনের আওতায় আনতে হবে। এতে লঞ্চে অগ্নিকান্ড ঘটলে তা ওই শ্রমিকরাই নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা রাখতে পারবে। এর পাশাপাশি লঞ্চ গুলোতে অগ্নিনির্বাচক যন্ত্র বাধ্যতামুলকভাবে রাখতে বলা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রা পথে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লঞ্চে থাকতে হয়। এসময়ের মধ্যে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু অধিকাংশ লঞ্চেই তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই প্রতিটি লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ লঞ্চগুলো পরিদর্শন করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। তারা যে যে ওষুধের কথা বলবেন রোগীদের চিকিৎসার জন্য সেইসব ওষুধ লঞ্চগুলোতে বাধ্যতামুলক রাখতে হবে।
অপরদিকে নৌ-পুলিশ, কোস্টডার্গ ও নৌবাহিনীর উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ঈদে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। তাই এই সময়ে মাঝ নদীতে লঞ্চ থামিয়ে কোন প্রকার তল্লাশী করা চলবে না। আপনারা লঞ্চ ছাড়ার আগে আপনাদের তল্লাশী সহ সকল কার্যক্রম সেড়ে নিবেন।
পাশাপাশি ঈদের আগে পরে নিরাপদ যাত্রার সার্থে নৌ পথে বাল্কহেড সহ পন্যবাহী জাহান চলাচল যাতে না করতে পারে সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া নদী সড়ক পথে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তি রোধে বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতি ও বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা সভা লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে মিয়ারচর চ্যানেলে ডুবে থাকা বাল্কহেড উদ্ধারের বিষয়টিতে জোড় দেন তারা। অন্যথায় এই ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনার আশংকার কথা প্রকাশ করেন তারা।
এর উত্তরে বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, প্রায় দুই মাস পূর্বে ডুবে যাওয়া ওই বাল্কহেডটি উদ্ধারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু নদীর স্রোত এতটাই বেশি যে এই মুহুর্তে উদ্ধার তৎপরতা চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই আপাতত ওই পয়েন্টে একটি লাইটিং বয়া’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই রুটে সাবধানতা অবলম্বন করে চলাচল করার পরামর্শ দিয়ে বন্দর কর্মকর্তা বলেন, লঞ্চগুলো উলানিয়া-কালিগঞ্জ হয়ে যেতে পারে।
এতে লঞ্চ আটকে যাওয়ার ঝুঁকি নেই। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি দাবী করে ওই রুট ব্যবহারে অপরাগতা প্রকাশ করেন লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা। তাছাড়া পন্টুন সংকট এখনই দুর হচ্ছে না জানিয়ে বন্দর কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল নদী বন্দরে নতুন তিনটি পন্টুন স্থাপন করা হবে। যার নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো গ্যাং ওয়ে সহ অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তাই এই ঈদের আগে পন্টুন সংকট দুর হচ্ছে না।
এদিকে ঈদ উল আযহায় কোরবানীর পশু জবাই এবং পরবর্তী পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে বলেছেন জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করতে হবে। এমনকি জবাই পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোরবানীর পশুর বর্জ্য সরিয়ে ফেলতে হবে। যাতে কোন প্রকার গন্ধও না থাকে সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া কোরবানীর পশুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জাল টাকার ব্যবহার এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে সড়ক পথে পশুবাহী ট্রাক থামানো যাবে না। ট্রাক থামিয়ে যাতে কোন প্রকার চাঁদাবাজী না হয় সে বিষয়টি থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন।
Leave a Reply