রাতভর উত্তাল বরিশাল, সংঘর্ষে জড়াল ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা, আহত শতাধিক Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:১৪ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




রাতভর উত্তাল বরিশাল, সংঘর্ষে জড়াল ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা, আহত শতাধিক

রাতভর উত্তাল বরিশাল, সংঘর্ষে জড়াল ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা, আহত শতাধিক




নিজস্ব প্রতিবেদক: জমি-জমার দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় কমপক্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পথচারী, সংবাদকর্মী ও যানবাহন চালকও রয়েছেন। এ সময় উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, নগরীর বাংলাবাজার এলাকার ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসনুভা চৌধুরী জোয়ার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে প্রতিবেশী এক পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সোমবার রাতে বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিচয়ে সেই বিরোধ নিরসনে জোয়ার বাড়ি গেলে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। সে সময় জোয়া সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। এরপর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীরা এলে বিএম কলেজের সেই শিক্ষার্থীরা তাদের মারধর করেন। এ ঘটনায় জোয়া গতকাল বরিশাল কোতোয়ালি থানায় অমি, মোস্তাফিজুর রহমানসহ চার যুবকের নামে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার মানববন্ধন করেন বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওদিকে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাতের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নগরীর বটতলা এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজির অভিযোগে মারধর করেন। এরপর রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে ঘটনাস্থলে যান। সে সময় বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং চালকসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে মারধর করেন। এসব ঘটনার সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলা-ভাঙচুর চালান। তারা রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবন, তিনটি হল এবং শ্রেণিকক্ষ ভাংচুর করেন। পরে ক্যাম্পাসজুড়ে ভাংচুর করেন ববি শিক্ষার্থীরা।

এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাত পৌনে ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তারা। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়েছে। সকাল সাড়ে ৬টার পর পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে।

বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, এ ঘটনায় আমাদের প্রায় ৪৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ড. উন্মেষ রায় জানান, হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

এদিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে বলেন, একজন গরিব বাসচালকের কাছে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ৬০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় এবং তাকে জিম্মি করে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে আরও ২০ হাজার টাকা আদায়কালে দুজন চাঁদাবাজ বটতলা এলাকায় এলাকাবাসীর হাতে আটক হন। এলাকাবাসীর অনুরোধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয়ে চাঁদাবাজদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে ঘটনাক্রমে জানা যায়, চাঁদাবাজ দুজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি বিবেচনা না করে এবং দুজন চাঁদাবাজের পক্ষ নিয়ে রাত ১২টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসযোগে একদল শিক্ষার্থী এসে বটতলায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তখন বরিশালের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানমাল রক্ষার্থে জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেস স্টাডি না করেই নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চাঁদাবাজ শিক্ষার্থী দুজনের পক্ষে দেশীয় অস্ত্র এবং ট্রাকভর্তি ইট-পাথর নিয়ে বিএম কলেজে হামলা চালায়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল- বাস নিয়ে আসা হামলাকারী, বটতলায় চাঁদাবাজকারী, এর পেছনে মদদদাতা এবং উসকানি প্রদান করা সবার সুষ্ঠু বিচার করা, মধ্যরাতে বিএম কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলার ফলে যেসব শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তাদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে গ্রহণ করা, বিএম কলেজসহ সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীকে কোনোরূপ হয়রানি না করা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল শহরে কোনো ধরনের অরাজকতা যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কলেজ, সব হোস্টেল এবং সাধারণ মানুষের বাসাবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনার সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেয়া, হামলায় জড়িত সব সন্ত্রাসীকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ভবিষ্যতে আর কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হলে এর দায়ভার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।

অপরদিকে পাল্টা অভিযোগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সোমবার নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর পরিবারের বিরোধীয় সম্পত্তি দখলের চেষ্টায় হুমকি এবং তাদের এক সহপাঠী ও তার মাকে হেনস্তা করেন বিএম কলেজের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান রাফি। খবর পেয়ে ববি শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে হাজির হলে রাফিসহ তার সহযোগীদের হামলার শিকার হয়। এরপর মঙ্গলবার রাতে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে দুই সহপাঠীকে মারধর করে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তিনটি বাসে চড়ে ববি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে নগরের বটতলা এলাকার দিকে রওনা দেন। একটি বাস নগরীর বটতলা এলাকায় পৌঁছানোর পথে শিক্ষার্থীবোঝাই বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। তখন ববি শিক্ষার্থীরা বিএম কলেজ অভিমুখে গেলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং বহু শিক্ষার্থীকে আহত করা হয়।

এদিকে ঘটনাটির বিষয়ে বিএম কলেজ প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ডিন ড. মো. শফিউল আলম। তবে বুধবার সকালে বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে বিএম কলেজে ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD