বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা পুরনো। পবিত্র এ মাসে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় সিন্ডিকেট করে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেন।
তবে এবার রমজান আসার পূর্বেই নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হতে শুরু করেছে। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষের আয় কমেছে। এ অবস্থায় বেশ কিছু পণ্যের দাম নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে রমজানে বাজারে আরো অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে।
গতকাল সরজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রমজান না আসতেই প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বাড়তে শুরু করেছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কারণ ছাড়াই চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
যা ভোক্তাদের ওপর চরম জুলুম বলে মনে করছেন তারা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে, চিনি, আটা, গুঁড়া দুধ, তেল, পিয়াজ, বেগুন, খেজুর, শসা ও লেবুর দাম ইতিমধ্যেই চড়া হতে শুরু করেছে। বিক্রেতাদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির হিসেবে গত বছর এই সময়ে যার মূল্য ছিল ১০০ থেকে ১০৮ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে লিটারে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল লিটার বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। বছরে বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আরো ১-২ মাস আগে থেকেই ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এদিকে চড়া হতে শুরু করেছে চিনির দাম। বর্তমানে দেশি প্যাকেটজাত লাল চিনি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সাদা চিনি ৭৫ টাকা।
যা ৩ দিন আগেও ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২ দশমিক ২২ শতাংশ। গত বছর এই সময়ে ছিল ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া বাজারে খোলা চিনি কেজিতে ৬৫ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ৩ দিন আগে যা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে বিক্রেতারা জানান।
বর্তমান বাজারে সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ৩৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা কিছুদিন আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকা। আটার ২ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। ওদিকে হঠাৎ করে বাজারে গুঁড়া দুধের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কেজিতে অন্তত ৪০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে গুঁড়া দুধ কেজিতে ৬৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ৩ দিন আগে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে বেড়েছে বলে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে বেগুন অন্যতম। এ মাসে সবজিটির চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। কয়েকদিন সস্তায় বিক্রি হলেও ২ দিন ধরে চড়া হতে শুরু করেছে বেগুনের দাম। ২-৩ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১০-১২ টাকা। খুচরা বাজারে বেগুন গতকাল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ২ দিন আগেও ছিল ২০-৩০ টাকা। কয়েকদিন আগে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসা এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা পর্যন্ত। লেবু হালিপ্রতি ৫০ থেকে শুরু করে ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এক সপ্তাহ আগে মূল্য ছিল ৪০ টাকা।
ওদিকে এখনো কমেনি মুরগিসহ অন্যান্য মাংসের দাম। বরং ক্রমেই আরো ঊর্ধ্বমুখী। মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজারে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে চাওয়া হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা।
এক মাস আগেও যার মূল্য ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। দেশি কক মুরগি কয়েকদিন আগে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন যা ৫৫০ টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। এ ছাড়া ১ মাস আগে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়।
সাদা ব্রয়লার ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক মাস আগে যার মূল্য ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। ডালের দাম নতুন করে না বাড়লেও এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল দেখা যায়, দেশি ভালো মানের ডাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা ডাল ৬৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ছোলার দাম না বাড়লেও বৃদ্ধির লক্ষণ রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। মানভেদে এখন কেজিতে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা।
অন্যদিকে চালের দামও কমার লক্ষণ নেই। বর্তমানে মিনিকেট দেশি চাল ৬৪ থেকে ৭০ টাকা এবং ভারতের মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য হলো খেজুর। ইফতারে খেজুর খান না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখা গেছে খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় অনেকটা বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়।
গাছ পাকা মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রেতারা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আরব আমিরাতের ভালো মানের বরই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়, যা গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকায়।
রমজানে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মোহাম্মদপুর টাউনহলের মুদি দোকানি মোজাম্মেল হক বলেন, রমজান এলে কিছু পণ্যের দাম বাড়ে। এটা আমাদের দেশের একটা রীতি হয়ে গেছে। তবে এ ক্ষেত্রে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা যে দামেই পণ্য কিনি সীমিত লাভে তা বিক্রি করতে হয়। অতিরিক্ত লাভ করেন বড় ব্যবসায়ীরা। তারা বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে আমাদের ব্যবসা করতেও সমস্যায় পড়তে হয়।
দাম বাড়লে কাস্টমারদের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটকারীদের কারসাজি থাকে। রমজান এলেই পণ্যের দাম বাড়ানোর নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে।
এক সময় রমজানের মধ্যে পণ্যের দাম বাড়ানো হতো আর এখন রমজান আসার ১-২ মাস আগেই কৌশলে দাম বাড়ানো হয়। আবার রোজার সপ্তাহ খানেক আগে একটু কমানো হয়। দেখা যায় যে, বাড়ানো হয় ২০ শতাংশ আর সেই সময় কমানো হয় ৫ শতাংশ। যেন তারা বলতে পারে যে পণ্যের দাম কমেছে।
এই ধরনের অপকৌশল ভোক্তাদের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণার শামিল বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এ অবস্থায় রমজানে যদি সিন্ডিকেট না ভাঙা যায় তবে বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
সেজন্য সরকারের যে সমস্ত সংস্থাগুলো আছে তাদের উচিত সিন্ডিকেটগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া।
কিন্তু বরাবরই তাদের মধ্যে সেই সদিচ্ছা দেখা যায় না। অথবা যেকোনো কারণেই হোক তারা সিন্ডিকেট ভাঙতে পারে না। তারা যেন এই কাজগুলো করতে পারে সেজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের প্রতি আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
Leave a Reply