বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ‘মুক্তির মহানায়ক’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ)। অপেক্ষার প্রহর শেষে এসেছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সেই শুভক্ষণ। বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আজ এক শ বছরে পা দিতেন। তিনি বেঁচে নেই, তবে সময়ের ঘড়ি ঠিক ঠিক জানান দিচ্ছে কাল পরিক্রমায় এই দিনেই জন্ম হয়েছিল বাঙালি জাতির সহস্র বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সেই শুভক্ষণ থেকেই শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী পালনের সব আয়োজন।
বছরব্যাপী এই উৎসবের অনুষ্ঠান শেষ হবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ। তার জন্মদিনকে স্মরণ করে জন্মশতবার্ষিকীতে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হবে তার জন্মক্ষণ ১৭ মার্চ মঙ্গলবার রাত ৮টায়। মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মাধ্যমে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় পিক্সেল শোয়ের মাধ্যমে শেষ হবে এ অনুষ্ঠান। মূলত টেলিভিশনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে ‘মুক্তির মহানায়ক’।
সোমবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানা তার অনুভূতি প্রকাশ করবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শেখ রেহানার লেখা কবিতা প্রধানমন্ত্রীর আবৃত্তিতে প্রচার করা হবে। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রধানদের বাণীও প্রচার করা হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে থিম সং, যন্ত্র সঙ্গীত, শত শিশুর কণ্ঠে সঙ্গীত। অনুষ্ঠান শুরু করা হবে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এবং বাংলাদেশেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়ায় আগে থেকে নির্ধারিত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিবর্তন এনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সব গণমাধ্যমে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সফরও বাতিল করা হয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, একশ বছর আগে আজকের এই দিনে (১৯২০ সালের ১৭ মার্চ) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অর্থাৎ ইতিহাসের এই দিনে শতবর্ষে বাঙালির মহানায়ক। সেখান থেকে উঠে আসা শেখ মুজিব দীর্ঘ সংগ্রাম জেল জুলুমের মধ্য দিয়ে পর্যায়ক্রমে বাঙালি জাতির নেতা, স্বাধীনতার স্থপতি ও মহানায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে উপাধি পেয়েছিলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় শেখ মুজিব ছিলেন তরুণ ছাত্রনেতা। পরবর্তীকালে তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। সমাজতন্ত্রের সমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন। তারই নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য উদ্বুদ্ধ হয় বাংলাদেশের জনগণ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা তাকে সপরিবারে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির সদস্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা অধীর আগ্রহে মুজিববর্ষের সূচনার জন্য অপেক্ষা করে আছি। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আমরা উদ্যাপন কমিটি থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। তৃণমূল পর্যায় থেকে সারা দেশে এবং দেশের বাইরে বছরব্যাপী এসব অনুষ্ঠান পালন করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জাতীয় কমিটির সভায় স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য পুরো অনুষ্ঠান প্রক্রিয়া পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জনসমাগম এড়ানোর জন্য জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। তবে রেকর্ড বিভিন্ন অনুষ্ঠান সব টেলিভিশন, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় একযোগে প্রচার করা হবে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৭ মার্চ রাত ৮টায়। সেই সময়ে আতশবাজির অনুষ্ঠান টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। আমরা আশা করি দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ পর্যন্ত এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। সরাসরি সম্প্রচারের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ এটি উপভোগ করতে পারবেন। রাত ৮টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশাপাশি ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে একযোগে দেশব্যাপী আতশবাজির অনুষ্ঠান পালিত হবে। এরপর রাত ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পিক্সেল ম্যাপিং প্রদর্শনের মাধ্যমে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষ হবে।
Leave a Reply