বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী সংবাদদাতা॥ পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মো. সিয়াম মাহমুদকে (১১) হাত ও পায়ের রগ কেটে, চোখ উপড়ে, গলাকেটে নৃশংসভাবে খুন করে মো. সাইদুল ইসলাম ওরফে জামাল মেম্বার।
আদালতে এসব কথা স্বীকার করেছেন সাইদুল ইসলাম ওরফে জামাল মেম্বার।সোমবার দুপুরে মির্জাগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসিফ এলাহী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে জামাল হোসেন জানান, মায়ের সঙ্গে তাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় অপকর্মের একমাত্র স্বাক্ষী সিয়ামকে হত্যা করা হয়। হত্যায় অংশ নেয় ভাড়াটে খুনিসহ ৬ জন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহআলম জানান, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রাতে উপজেলার মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের সুলতানাবাদ গ্রামে মো. শাহজাহান গাজীর একমাত্র শিশুপুত্র মো. সিয়াম মাহমুদ বাড়ির পাশে একটি মাহফিলের মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়। ১৬ ঘণ্টা পর ২৬ জানুয়ারি একটি ধানক্ষেত থেকে সিয়ামের হাত-পায়ের রগ কাটা, চোখ উপড়ানো এবং গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার একদিন পর ২৭ জানুয়ারি সিয়ামের বাবা মো. শাহজাহান গাজী চাচাতো ভাইয়ের ছেলে জুয়েল গাজীসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাদের ধারণা পূর্ব শত্রুতার জেরে হয়তো সিয়ামকে হত্যা করা হয়েছে।
একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাইদুল ইসলাম ওরফে জামাল মেম্বার সিয়ামের বাবার সঙ্গে থেকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।
প্রথমে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. নজরুল ইসলাম, মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস ও পরে পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহআলমের তদন্তে বেড়িয়ে আসতে থাকে শিশু সিয়াম হত্যার মূল রহস্য।
মির্জাগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, ঘটনার ৬ মাস পর গত সোমবার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য মো. সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি জানান, মো. শাহজাহান গাজীর বাসায় প্রতিবেশি জামাল মেম্বারের দীর্ঘদিন যাবত আসা-যাওয়া ছিল। এক পর্যায়ে শাহজাহান গাজীর স্ত্রী মোসা. শিল্পি বেগমের সঙ্গে জামাল মেম্বারের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২৫ জানুয়ারি বাড়ির পাশে একটি মাহফিল থেকে মায়ের জন্য পান দিতে এসে শিশু সিয়াম তার মাকে জামাল মেম্বারের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে।
তাদের এ ঘটনার একমাত্র স্বাক্ষী সিয়ামকে শেষ করতে জামালসহ আরও ৬ জন ভাড়াটে খুনি মিলে মাহফিলের মাঠ থেকে সুকৌশলে শিশুটির মুখে মাপলা পেঁচিয়ে পাশের ধানক্ষেতে নিয়ে যায় ঘাতকরা। সেখানে নৃশংসভাবে হাত-পায়ের রগ কেটে, খুঁচিয়ে চোখ উপড়ে ও গলাকেটে সিয়ামের মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে আসে।
ওসি আরও বলেন, ঘটনা অন্যদিকে নেয়ার অনেক অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অবশেষে পটুয়াখালী ও মির্জাগঞ্জ থানার পুলিশ অফিসারের প্রচেষ্টায় মাত্র ৬ মাসেই মামলার রহস্য উৎঘাটিত হলো।
জামালকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply