রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল নগরবাসীর ভোগান্তি যেন নিত্যসঙ্গি। একদিকে চলাচলের ফুটপাত দখল, অন্যদিকে যত্রতত্র পার্কিং এবং অবৈধ অটো ও থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড গড়ে উঠছে। ছোট এই নগরীতে যানবাহন পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ফলে সময়ের অপচয়সহ প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এমনকি দুর্ঘটনায় প্রাণহানীও ঘটছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও প্রতিনিয়ত যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। আর তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে অবৈধ স্থাপনা।
অপরদিকে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকারদের অবৈধ স্থাপনা ও স্থায়ী দখলে রাখায় পথচারীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। অভিযোগ রয়েছে, সড়কে অবৈধ স্ট্যান্ড এবং হকারদের স্থাপনা থেকে ফায়দা লুটছে স্থানীয় একটি মহল। তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, পর্যায়ক্রমে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর আমতলার মোড় থেকে রূপাতলী চান্দু মার্কেট, সদর রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিবির পুকুরপাড়, ফজলুল হক এভিনিউ, লাইন রোডের মুখ ও নতুন বাজার, জেলখানার মোড়, বটতলা বাজার চৌরাস্তা সহ নবগ্রাম রোডÑচৌমহনী ও নথুল্লাবাদে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনসাল সহ কয়েকটি এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজটে নাকাল নগরবাসী। এসব এলাকায়ই যানজটের প্রধান কারণ সড়কগুলোর অত্যাধিক যানবাহনের ধারন ক্ষমতার অভাব। একইসাথে অতিরিক্ত তিন চাকার যানবাহনের আধিক্য, বিশেষ করে সিএনজি, হলুদ অটো, ব্যাটারী চালিত রিকশার ভারে এ নগরীর প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত।
জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে চলাচলকারী গন পরিবহনের প্রায় ৮০ ভাগ যানাবহনই অবৈধ, কোন ধরনের ও রুট-পারমিট নেই। তথ্য অনুযায়ী বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় নিবন্ধিত প্রায় আড়াই হাজার ইজিবাইক ও ১২ হাজার প্যাডেল চালিত রিক্সা ছাড়াও বিআরটিএ কর্তৃক প্রায় ৫ হাজার নিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে। তবে নগর ভবনের ইজিবাইক ও রিক্সার কোন লাইসেন্স নবায়ন হয়নি গত প্রায় ৪ বছর। এ নগরীতে এখন অবৈধ ইজবাইক ও ব্যাটারী চালিত রিক্সার সংখ্যাই প্রায় ১৫ হাজার বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
একইসাথে নগরীর নতুনবাজার মোড় ও জেলখানার মোড়ের রাস্তাজুড়ে কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, মুদি বাজার সহ ভ্যান রিক্সার ওপর পথ খাবারের দোকান গোটা নগরীর পরিবেশ বিপর্যয় যানযটের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। সড়ক ও সড়কের পার্শ্ব দখল করে এমনভাবে এসব স্থাপনাগুলো গড়ে উঠছে দেখলে মনে হবে এটি কোন মার্কেট। মোটকথা সড়কের অর্ধেকটা দখলে নিয়ে অবৈধ এসকল স্থাপনা গড়ে ওঠায় যানজট ও চলাচলে মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ব্যস্ততম সড়কগুলোর পার্শ্বে অবৈধ এ স্থাপনায় সকাল থেকে রাত অবধি যানজট লেগেই থাকে । আর ভোগান্তির শিকার হন পথচারীরা।
এদিকে ভোগান্তিতে শুধু পথচারীরাই নন বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা জানান, নিয়মিত ট্যাক্স-ভাড়া সহ যাবতীয় সব নিয়মানুযায়ী পালনের মধ্য আমরা ব্যবসা পরিচালনা করে থাকি। অথচ ভ্রাম্যমান ও অস্থায়ী হকার কারণে তাদের বেচাবিক্রিও কম হয়। ফলে লোকসানের মুখে পড়ছে তাদের ব্যবসা। খোদ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পার্শ্বে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রোডের সম্মুখের সড়কের অনেকাংশ এবং জেলা পরিষদ সংলগ্ন সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠেছে ভাসমান অবৈধ এ স্থাপনাগুলো। বিভিন্ন সময়ে সিটি কর্পোরেশনের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে ঠিক একইভাবে গড়ে ওঠছে অবৈধ এসব স্থাপনা ও সড়কের পার্শ্বে অবৈধ স্ট্যান্ড।
বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বরিশাল নগরীতে স্থায়ী কোন থ্রি-হুইলার স্ট্যান্ড নেই। নেই পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন স্থান। ফলে যত্রতত্র পার্কিং করছে বিভিন্ন যানবাহন। তাছাড়া জনবল সংকটের কারণে নিয়মিত তদারকিও সম্ভব হচ্ছে না। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সচিব মোসাঃ মাসুমা আক্তার জানান, পর্যায়ক্রমে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
Leave a Reply