মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার বোরহানউদ্দিন নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী মনির হোসেন লোকমানের বিরুদ্ধে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে অস্বীকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্বীকৃতি পেতে স্বামী মনির হোসেনের বিরুদ্ধে ভোলার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করেছেন ভুক্তভোগী সালমা বেগম।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ভোলার জজ আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করেন প্রতারণার শিকার সালমা বেগম। মামলা নং-১১৫/২০। প্রতারক মনির হোসেন লোকমান চরফ্যাশন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের জালাল মাস্টারের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কাশেমগঞ্জ এলাকার মেয়ে সালমা বেগম ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য চরফ্যাশন নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে উক্ত অফিসের অফিস সহকারী মনির হোসেন লোকমান ভোটার আইডি কার্ড দ্রুত সংশোধন করে দেওয়ার কথা বলে সালমা বেগমের কাছ থেকে কাগজপত্র নিয়ে নেয়। এ সময় লোকমান ভুক্তভোগী সালমা বেগমের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার রেখে বাড়ী চলে যেতে বলে। পরের দিন লোকমান সালমা বেগমকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে লোকমান সালমা বেগমকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে লোকমান সুন্দর ভবিষ্যতে প্রলোভন দেখিয়ে সালমা বেগমকে প্রেমে রাজি করায়। এর কিছুদিন পর লোকমান সালমা বেগমকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। সালমা বেগম সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরল মনে বিয়েতে রাজি হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি লোকমান বিয়ের কথা বলে সালমা বেগমকে ঢাকার শ্যামলীতে লোকমানের বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে কাজীর মাধ্যমে লোকমানের সঙ্গে সালমা বেগমের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
পরে সালমা বেগম কাবিননামার কথা বললে লোকমান আইডি কার্ড সংশোধন করা হলে তারপর কাবিন করবেন বলে সালমাকে জানান। বিবাহের পর থেকে তাদের দুজনের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। সালমা বেগমের বাড়ীতেও লোকমানের যাতায়াত শুরু হয়। লোকমান সালমা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতেও যায়। কিছুদিন তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিল।
তবে লোকমান সালমা বেগমের অশ্লীল ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করে রাখে। কিছুদিন পর সালমা বেগম লোকমানের কাছে স্বামীর স্বীকৃতিস্বরূপ কাবিননামা চাইলে লোকমান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। লোকমান উত্তেজিত হয়ে সালমা বেগমকে মারধর করে এবং তার সাথে কোনো বিয়ে হয়নি বলে জানায়। এছাড়া বিভিন্ন সময় সালমা বেগমের তোলা অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়। সালমা বেগম বিয়ের বিষয়টি লোকমানের চাচা হারুন, আলম গংরাও জানতেন। সালমা বেগমকে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ধৈর্য ধরার কথা বললেও তারা এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরে তারা সালমা বেগমকে কিছু টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। সালমা বেগম তাতে রাজি না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন লোকজন দিয়ে লোকমান সালমা বেগমকে হুমকি দিতে থাকে।
এরপর সালমা বেগম নিরুপায় হয়ে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানায়। লোকমান গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গরা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। লোকমান চরফ্যাশন নির্বাচন অফিস থেকে বদলী হয়ে পটুয়াখালী যোগদান করে বর্তমানে বোরহানউদ্দিন অফিসে কর্মরত আছে। স্বামীর স্বীকৃতি পেতে লোকমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সালমা বেগমকে প্রাণ নাশের হুমকি ও ইন্টারনেটে আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে লোকমান সালমা বেগমকে চিনে না বলে জানিয়ে দেয়। লোকমান সালমা বেগমকে আরও বলে, আমার অনেক টাকা ও ক্ষমতা আছে। আমাকে তুমি কিছুই করতে পারবে না। এরপরই বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী সালমা বেগম বাদী হয়ে ভোলার জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী সালমা বেগম বলেন, আমি গরীব ঘরের মেয়ে। আমার প্রথম বিবাহের পর দীর্ঘদিন সুখে-শান্তিতে সংসার চলছিলো। গত ৫ বছর আগে আমার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। আমার আগের ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে প্রতারক লোকমান আমার কাগজপত্র এবং আমার ফোন নাম্বার রাখে। তারপর সে আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে এবং প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে আমি রাজি না হলে সে ভবিষ্যতের কথা বলে আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিয়ে প্রস্তাবে রাজি হয়। সে আমাকে ঢাকা নিয়ে কাজী এনে বিবাহ করে। তারপর থেকে তার সাথে আমার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। লোকমান বিভিন্ন সময় আমার আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে। বিষয়টি লোকমানের চাচা হারুন, আলম গংরাও জানতেন। তারা আমাকে একটু ধৈর্য ধরার কথা বলে সান্ত্বনা দিতেন। পরে কাবিননামা চাইলে সে আমার সাথে প্রতারণা করে। আমার অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দেয় এবং আমাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে। আমি স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনির হোসেন লোকমানের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সালমা বেগম আমার কাছে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আসে। পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে সালামই প্রথম আমার সঙ্গে কথা বলে। তার সঙ্গে আমার কিছুদিন আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। এর বাইরে আর কিছু নয়। তাকে আমি বিয়ে করিনি। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। অশ্লীল ভিডিও ও ছবির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তা অস্বীকার করেন লোকমান।
Leave a Reply