মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলার বোরহানউদ্দিনে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত নয়জনকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক।
রবিবার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা সদরের বোরহানউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে এলাকায় এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এ দিন সংঘর্ষের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার।
পুলিশ সুপার জানান, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ শুভ নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে। আমরা হ্যাকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আটক করেছি। আমরা এ নিয়ে গত রাতে স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছে আজকের প্রোগ্রাম হবে না। কিন্তু সকাল থেকে আমাদের কাছে খবর আসে সেখানে মাইকিং হচ্ছে এবং স্টেজ বানানো হচ্ছে। সেখানে গিয়ে আমরা উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি নিজে সেখানে বক্তব্য দিয়েছি। তারা সবাই আমার বক্তব্য শুনেছে।
তিনি জানান, যখন আমি স্টেজ থেকে নেমে আসি তখন এক দল উত্তেজিত জনতা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে একটি রুমে গিয়ে আশ্রয় নেই। যখন তারা আমাদের রুমের জানালা ভেঙে ফেলছে তখন আমরা প্রথমে শর্টগানের ফাকা গুলি ছুঁড়ি। পরবর্তীতে এতে কাজ না হওয়ায় উপরের দিকে গুলি চালানো হয়। এতে আমার জানা মতে একজন পুলিশ সদস্যের বুকে গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন নিহত হয়েছেন। তবে বাকি আরও থাকতে পারে সেটা আমাদের কাছে তথ্য নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন রয়েছে।
এ দিকে সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- বোরহানউদ্দিন উপজেলার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌর সভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।
আহতদের মধ্যে মিজানুর রহমান, নান্টু, মাকসুদ, তানভির, ওলিউল্লাহ, ছিদ্দিক, আবু তাহের, শামিম ও সোহরাবের নাম প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিপ্লব নামে এক যুবকের হযরত (সঃ) সম্পর্কে ফেসবুক আপত্তিকর পোস্টকে কেন্দ্র করে উপজেলাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার ওই যুবকসহ আরও একজনকে আটকও করে পুলিশ। ফেসবুক পোস্টটির জেরে রবিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় স্থানীয় তাওহিদী জনতা। তারা বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠ এলাকায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের সমাবেশ না করার জন্য অনুরোধ করে। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও আত্মরক্ষার্থে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে ভোলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
রোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহীন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত মাহফুজ ও মিজানের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহতাবস্থায় বেশ কয়েকজন ভর্তি রয়েছে।
ভোলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. তৈয়বুর রহমান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা দুই ব্যক্তি মারা যান।
Leave a Reply