ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার আশংকা Latest Update News of Bangladesh

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার আশংকা

ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার আশংকা

ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার আশংকা




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ চালসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ কিংবা রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার মতো যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভারত, সেটি এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার এবং এর জের ধরে বাংলাদেশের বাজারকেও অস্থির করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

 

 

যদিও শুক্রবার ভারতের জয়পুরে অনুষ্ঠিত জি-২০ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ মন্ত্রীদের সভার আগে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সাথে বৈঠকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

 

টিপু মুনশি সম্প্রতি পেঁয়াজের উপর শতকরা ৪০ ভাগ রপ্তানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দামের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ওই বৈঠকে।

 

 

জবাবে ভারতীয় মন্ত্রী জানিয়েছেন প্রতিকূল আবহাওয়াসহ কিছু কারণে ভারতে উৎপাদন কম হয়েছে সেজন্য তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে তিনি বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেছেন দ্রুত ভারত এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

 

 

পেঁয়াজ ছাড়াও চালের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়েছে ভারত। এছাড়া বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে চিনি রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে দেশটি, যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।

 

 

তবে পেঁয়াজ, চাল ও চিনির বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন ভারতীয় সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে সহসা খুব একটা হবে না কারণ এসব পণ্যের যথেষ্ট মজুদ এখনো বাংলাদেশের আছে।

 

 

তবে ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলছেন ভারত তাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থির করে দিচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।

 

 

‘ভারতের সিদ্ধান্তকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে বাংলাদেশে যারা এসব পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে তারা সুযোগ নেবে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

চালে নিষেধাজ্ঞা- অতিরিক্ত শুল্ক

 

 

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত বাসমতি ছাড়া সব ধরণের সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে গত মাসেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো।

 

 

সবশেষ শুক্রবার আতপ ও সেদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেশটি।

 

 

গত বছর দেশটি ৭৪ লাখ টন আতপ চাল রপ্তানি করেছিলো। এবার সেদ্ধ চাল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার পর আতপ চালের রপ্তানি বাড়ছিলো।

 

 

এখন অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় বাংলাদেশসহ যেসব দেশ ভারত থেকে চাল আমদানি করে সেখানে দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

দেশের শীর্ষস্থানীয় চাল আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান মজুমদার ট্রেডার্স এর মালিক চিত্ত মজুমদার অবশ্য বলছেন চাল নিয়ে ভারতীয় সিদ্ধান্তের কোনো নেতিবাচক প্রভাব এখনই পড়ার সম্ভাবনা নেই।

 

 

‘আমরা ছয় মাস আগে যে চাল আমদানি করেছি সেগুলোই এখনো বিক্রি হয়নি। তাছাড়া আমাদের ইরি উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনে আমনও ভালো হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে বলে আশা করছি,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

পেঁয়াজেও বাড়তি শুল্ক

 

 

গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পণ্য পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর এই শুল্ক বহাল থাকবে।

 

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন সীমান্ত দিয়ে গড়ে প্রতিদিন দুশোটি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে প্রতিদিন আসা পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন।

 

 

বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর পেঁয়াজ উৎপাদন ভালো। কিন্তু তারপরেও পেঁয়াজের দাম কমানো যায় না চাহিদার কারণে।

 

 

তাছাড়া উৎপাদন বাড়লেও বাংলাদেশে পাবনা ছাড়া আর কোথাও পেঁয়াজ মজুদ করে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে অন্য জায়গার কৃষকদের মৌসুমের মধ্যেই পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলতে হয়।

 

 

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। এরপরেও মোট চাহিদা পূরণ হতে ৩০ শতাংশের মতো পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

 

 

চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টনের মতো। আরও দশ লাখ টন আমদানির অনুমতি পেয়েছে আমদানিকারকরা।

 

 

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুন উর রশিদ বলছেন পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে।

 

 

‘আমদানি হলে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমদানি হলে বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত হয়। না হলে তো দাম বাড়বেই। ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে ন্যূনতম ১৫০ ডলারের এলসিতে এখন দিতে হবে ৩২৫ ডলার। ফলে দাম বেড়ে যাবে বাজারে। তবে রপ্তানি নিরুৎসাহিত করায় ভারতের স্থানীয় বাজারে দাম অনেক কমলে হয়তো পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে চিনিতে

 

 

অক্টোবর থেকে চিনি রপ্তানিও ভারত বন্ধ করার পরিকল্পনা করছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যদিও বাংলাদেশ বেশিরভাগ পরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকেই আমদানি করে তারপরেও ভারতের সিদ্ধান্তের প্রভাব আন্তর্জাতিক বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

 

গত মৌসুমে ৫৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আর ৫৫ লাখ টন পরিশোধিত চিনি রপ্তানি করেছে ভারত। এখন দেশটি রপ্তানি বন্ধ করলে আমদানিকারক দেশগুলো বিকল্প উৎস খুঁজবে আর তাতেই দাম অনেকটা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

 

তাছাড়া ভারত থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি বাংলাদেশই বেশী করে। এমনিতেই ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত এক বছরে চিনি আমদানিতে খরচ এক চতুর্থাংশ বেড়েছে।

 

 

গত অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। আর পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে দেড় লাখ টনের বেশি।

 

 

সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বিবিসি বাংলাকে বলছেন চিনি পাওয়া নিয়ে উদ্বেগ নেই, তবে উদ্বেগ হলো ডলারের সাপোর্ট নিয়ে।

 

 

‘আমরা এক দামে এলসি খুলি আর এক দামে পেমেন্টে করি। প্রতি কেজিতে শুল্ক হবে ৫৫ টাকা। গ্যাস খরচ কেজি প্রতি ৪ টাকা । আছে আরও খরচ। এরপর ডলারের দাম কেমন হবে জানি না। এর মধ্যে ভারত যদি রপ্তানি বন্ধ করে তাহলে বিশ্ব বাজারে ঘাটতি হবে। তখন দাম বাড়বে,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

কেন ভারত এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে

 

 

এসব পণ্যের ক্ষেত্রে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে বড় সরবরাহকারী। সে কারণে বাংলাদেশ সরাসরি আমদানি না করলেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব পড়বে এবং দাম বেড়ে যাবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের বাজারেও এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে বলে বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের ধারণা।

 

 

জাহিদ হোসেন বলছেন সামনে, ভারতের নির্বাচন, তাই দেশটির সরকার স্থানীয় বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে।

 

 

‘কিন্তু সমস্যা হলো বাংলাদেশে এসব ব্যবসা যারা নিয়ন্ত্রণ করে তারা এমন পরিস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে যৌক্তিকতা না থাকলেও দাম অনেক বাড়িয়ে দেয়,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

অবশ্য ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশিত উৎপাদন ভারতে না হওয়াটাও শুল্ক বাড়ানো বা রপ্তানি বন্ধের মতো সিদ্ধান্তের অন্যতম কারণ।

 

 

বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার অনেক দেশেই পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সামনে এর প্রভাবও বিশ্ব বাজারে পড়ার আশঙ্কা আছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও ভারতের যুক্তিকে একবাক্যে মেনে নিতে রাজী নন জাহিদ হোসেনসহ অনেক বিশ্লেষক।

 

 

তিনি বলছেন ভারত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে সোচ্চার এবং এজন্যই তাদের এসব পণ্য নিয়ে তাদের কাছ থেকে গঠনমূলক ভূমিকা আশা করা হয়।

 

 

‘কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা অভ্যন্তরীণ বাজারকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। একই কাজ বাংলাদেশ করলে অনেক প্রশ্ন উঠতো, কারণ এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মনীতির লঙ্ঘন। জরুরি পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞায় যৌক্তিক জোরালো কারণ থাকতে হয়। কিন্তু ভারত সেটি দেখাতে পারেনি,’ বলছিলেন তিনি।

 

 

তার মতে একতরফাভাবে শুল্ক বসানোর ক্ষেত্রে ভারত অন্য দেশের ওপর এর কেমন প্রভাব পড়বে সেটিকে বিবেচনায় নেয়নি। সূত্র: বিবিসি বাংলা

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD