রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত। এই সপ্তাহে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি নিয়ে এখনো কিছু জানায়নি আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে আগামী ১২ বা ১৩ মে চট্টগ্রাম বা বরিশাল উপকূলে ঘূর্ণিঝড় মোকা আঘাত হানতে পারে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া বিশেজ্ঞরা। তাই সরকারিভাবে আগাম প্রস্তুতির অনুরোধ তাদের।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্ট হতে পারে। যা পরবর্তীতে ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ ওমর ফারুক। তবে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ব্যাপারে এখনই কিছু বলছেন না তারা।
আবহাওয়া বিষয়ক আমেরিকা ও ইউরোপীয় মডেল পর্যবেক্ষণ করে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, গত ২ মে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড়মাত্রা তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের মধ্যে বেশি ছিল। স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। পুরো বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে ছিল। প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে স্থানের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি যত বেশি, সেই স্থানে ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার শঙ্কা তত বেশি।
এবার চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূল ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের ঝুঁকিতে রয়েছে উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল বলেন, ইউরোপীয় মডেল অনুসারে ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আমেরিকা মডেল বলছে, ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। উপকূলে সরকারিভাবে দ্রুত বার্তা পৌঁছানো, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করাসহ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, ১৯৯০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ৩১ বছরে বঙ্গোপসাগরে সর্বমোট ৬টি সুপার সাইক্লোন (ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ২২১ কিলোমিটারের বেশি) সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল মাসে ১টি, মে মাসে ২টি, জুন মাসে ১টি ও আক্টোবর মাসে ২টি।
এদিকে ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, ৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। ৭ মে পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা। ৮ মে তা গভীর নি¤œচাপে পরিণত হবে। তারপর তা উত্তর দিকে মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে আন্দামান নিকোবরে। আন্দামান উপকূলে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা গভীর সমুদ্রে চলে গিয়েছে তাদের শিগগিরই ফিরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগাম সতর্কতা অবলম্বন করছে ওড়িশা সরকার।
মোকার অর্থ কী : ‘মোকা’ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ইয়েমেন। মোকার আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। কিন্তু, এর সঙ্গে কফির গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে। ইয়েমেন দেশের এক বন্দর নগরীর নাম ‘মোকা’। ইয়েমেনের রাজধানীর প্রধান বন্দর ছিল এই মোকা। সেখানেই মোকা নামক কফির চাষ হতো। আর সেখান থেকে এসেছে এই নাম। মোকা বন্দর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইয়েমেনের কফি রপ্তানি করা হয়। তাই কফি বিলাসীদের কাছে এই নাম অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের ক্ষেত্রে ১৩টি দেশের সুপারিশ লাগে। ২০০০ সালে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডগঙ) বা ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক (ঊঝঈঅচ) দেশগুলো মিলে ঘূর্ণিঝড়ের নাম সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেবে। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। ডগঙ বা ঊঝঈঅচ-এর ‘প্যানেল অন ট্রপিকল সাইক্লোন’-এর কাছে নামের তালিকা উপস্থাপিত করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণে দুটি বিষয় বিবেচনা রাখতে হয়। বিশ্বের কোনো গোষ্ঠীকে আঘাত করতে পারে এমন নাম দেয়া যাবে না এবং একই নামের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। পরে ২০১৮ সালে ইরান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও ডগঙ-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
Leave a Reply